মহাসড়কে যাত্রী দুর্ভোগ কমাতে ব্যাপক ব্যবস্থা

যানবাহনে চাঁদাবাজি করলে কঠোর শাস্তি

এবার ঈদের দীর্ঘ ছুটিতে মানুষের নিরাপদ যাতায়াত নিশ্চিত করতে পুলিশ ব্যাপক প্রস্তুতি নিয়েছে। মহাসড়কে যেকোন ধরনের অপকর্ম ঠেকাতে কঠোর অবস্থানে থাকবে পুলিশ। বিগত বছরগুলোর ঈদের ছুটিতে যাত্রীদের ভোগান্তির অভিজ্ঞতা কাজে লাগিয়ে এবার ঘরমুখো যাত্রীদের যাতে তেমন দুর্ভোগে পড়তে না হয় সেজন্য ব্যাপক পরিকল্পনা গ্রহণ করেছে পুলিশ বিভাগ। গত কয়েকদিন ধরে এ ব্যাপারে পুলিশের বিভিন্ন বিভাগের কর্মকর্তারা বৈঠক করেন।রাজধানী থেকে এবং রাজধানীমুখী মহাসড়কে পথে পথে যানবাহন থেকে পুলিশ এবং স্থানীয় মস্তান-সন্ত্রাসীদের চাঁদাবাজি বন্ধ করা, রাস্তায় যানজটে যাত্রীদের অনাহূত ভোগান্তি ঠেকাতে হাইওয়ে পুলিশের পক্ষ থেকে ব্যাপক পরিকল্পনা গ্রহণ করেছে। হাইওয়ে পুলিশ এবং জেলার সংশ্লিষ্ট থানা পুলিশ পথে পথে যানবাহনের পর্যাপ্ত নিরাপত্তার জন্য বিশেষ ব্যবস্থা গ্রহণ করবে। পুলিশ সদস্যদের রাস্তায় গাড়ি আটকে অযথা হয়রানি করার বিরুদ্ধে হুঁশিয়ারি দেয়া হয়েছে। যানবাহনের চালক ও যাত্রীদের হয়রানি করার কোন অভিযোগ পাওয়া গেলে দায়ী পুলিশের বিরুদ্ধে তাৎক্ষণিক আইনি ব্যবস্থা নেয়া হবে।ঝুঁকিপূর্ণ মহাসড়কের বিভিন্ন এলাকায় নিরাপত্তা ব্যবস্থা দেখভাল করার জন্য পুলিশ কন্ট্রোল রুম স্থাপন করা হয়েছে। সেখানে পর্যায়ক্রমে পুলিশ সদস্যরা অবস্থান নিয়ে যানজটসহ সব ধরনের অব্যবস্থা সামাল দিতে তাৎক্ষণিক ব্যবস্থা নেবে। একই সঙ্গে সড়কে যানবাহন চলাচল পর্যবেক্ষণের জন্য বিভিন্ন পয়েন্টে ১৫টি ওয়াচ টাওয়া নির্মাণ করা হয়েছে। ওয়াচ টাওয়ারে অবস্থান নিয়ে পুলিশ বাইনোকুলার দিয়ে মহাসড়কের ব্যাপক এলাকায় যানবাহন চলাচল পর্যবেক্ষণ করবে। ইতোমধ্যে ওয়াচ টাওয়ারে কাজ শুরু করেছে পুলিশ সদস্যরা। কন্ট্রোল রুম এবং ওয়াচ টাওয়ারে প্রয়োজনীয় নিরাপত্তা সরঞ্জাম প্রস্তুত রাখা হয়েছে।সরকারি সিদ্ধান্ত অনুযায়ী ৪ জুলাই থেকে ঈদের দীর্ঘ ছুটি শুরু হবে। তখনই মহাসড়কে যানজট থেকে শুরু করে নানা ধরনের ঝামেলা হওয়ার আশঙ্কা রয়েছে। পুলিশ তার আগে ২৯ জুন বুধবার থেকে মহাসড়কে সর্বোচ্চ পর্যায়ের নিরাপত্তা দেয়া শুরু করবে। প্রথম পর্যায়ে এই বিশেষ নিরাপত্তা ব্যবস্থা চলবে ৭ জুলাই পর্যন্ত। দ্বিতীয় দফায় ৮ জুলাই থেকে ১৪ জুলাই পর্যন্ত শহরমুখো মানুষের রাজধানীতে ফেরার সময় আবারও পুলিশ বিশেষ নিরাপত্তা বলয় গড়ে তুলবে।এভাবে দুই দফায় দেশের জাতীয় ও আঞ্চলিক মিলিয়ে ২১ হাজার কিলোমিটার মহাসড়কে বিশেষ নিরাত্তা ব্যবস্থা কার্যকর থাকবে। এ সময়কালে সুনির্দিষ্ট অভিযোগ ছাড়া কোথাও যানবাহন থামিয়ে অযথা হয়রানি বা চাঁদাবাজি করলে কঠোর ব্যবস্থা গ্রহণের বিশেষ নির্দেশ দেয়া হয়েছে পুলিশ উচ্চপর্যায় থেকে। এ ব্যাপারে কাউকে ছাড় দেয়া হবে না বলে জানিয়ে দেয়া হয়েছে।এসব বিশেষ ব্যবস্থা ছাড়াও এ সময়ে সব মহাসড়ক যানজটমুক্ত রাখতে পথে পথে মোটরসাইকেলে পুলিশের টহল বাড়ানো হবে। কোন বিশেষ স্থানে কোন ধরনের অপ্রীতিকর ঘটনার খবর পাওয়ার সঙ্গে সঙ্গে পুলিশ দল দ্রুত ঘটনাস্থনে যাবেন।পুলিশের এ বিশেষ নিরাত্তা কর্মকা-ে হাইওয়ে পুলিশ, জেলা পুলিশ, ইন্ডাস্ট্রিয়াল পুলিশ, আমর্ড পুলিশ (এপিবিএন) ও নৌ পুলিশকে মোতায়েন করা হচ্ছে। তাদের সার্বক্ষণিক সহায়তার জন্য শুধু মহাসড়কে দেড় হাজার কমিউনিটি পুলিশ নিয়োজিত থাকবে। যে জেলার ভেতরে মহাসড়কের অবস্থান সেই জেলার পুলিশ মহাসড়কে নিরাপত্তায় হাইওয়ে পুলিশকে সহায়তা করবে। এজন্য হাইওয়ে পুলিশের পক্ষ থেকে সকল ধরনের ব্যবস্থা নেয়া হয়েছে। ইতোমধ্যে নিরাপত্তার প্রস্তুতি নিয়ে কয়েক দফা বৈঠক হয়েছে।সূত্র জানায়, গাজীপুরে চন্দ্রা, বোগরা বাইপাস, সাভারের নবীনগর, সিরাজগঞ্জের হাটিকুমরুল, মানিকগঞ্জের পাটুরিয়া ফেরিঘাট, ঢাকা চট্টগ্রামের কাচপুর, নারায়ণগঞ্জের শিমুলিয়া, মুন্সীগঞ্জের মাওয়া ফেরিঘাট, কুমিল্লার পদুয়া বাজার, ঢাকা চট্টগ্রাম মহাসড়কের ময়নামতি ও দাউদকান্দি, ফেনীর মহিপালসহ প্রায় ১৫টি পয়েন্টে ওয়াচ টাওয়ার ও বাইনোকুলার স্থাপন করে নিরাপত্তা পর্যবেক্ষণ করা হবে। গুরুত্বপূর্ণ এলাকাগুলোতে মাইকিংয়ের ব্যবস্থা নেয়া হয়েছে। যে কোন সমস্যা হলে সেখানে রাস্তা যান চলাচলে যাতে কোন বাধা সৃষ্টি না হয় তার জন্য রেকার প্রস্তুত রাখা হবে। যে কোন সমস্যা জরুরি কন্ট্রোল রুমে জানালে পুলিশ ব্যবস্থা নেবে।সূত্র জানায়, দেশে জাতীয় মহাসড়ক ৯৬টি, আঞ্চলিক মহাসড়ক ১২৬টি ও জেলা মহাসড়ক ৬৫৪টি। মোট ৮৭৬টি মহাসড়কের দৈর্ঘ্য ২১ হাজার কিলোমিটারেরও বেশি হবে। এসব সড়কে রাতে ও দিনে ঈদের সময় বাড়তি যানবাহনের চাপ সৃষ্টি হবে।মহাসড়কের ডাকাতি ও ছিনতাইসহ যে কোন ধরনের নৈরাজ্যের খবর পেলে তাৎক্ষণিক ব্যবস্থা নেয়া হবে। আর দুর্ঘটনা প্রতিরোধে পুলিশ কাজ করবে। ইতোমধ্যে জন সচেতনতা বাড়ানোর জন্য হাইওয়ে পুলিশের পক্ষ থেকে লিফলেট বিতরণসহ সচেতনতামূলক প্রচারণা চালানো হচ্ছে।এই সম্পর্কে হাইওয়ে পুলিশের ডিআইজি মলি্লক ফখরুল ইসলাম জানান, ঈদ উপলক্ষে মহাসড়কে পর্যাপ্ত নিরাপত্তার প্রস্তুতি চূড়ান্ত করা হয়েছে। এবার ঈদে যাত্রীরা যাতে নিরাপদে যাতায়াত করতে পারে তার সব ধরনের ব্যবস্থা গ্রহণ করা হয়েছে। এর সঙ্গে যাত্রীদের সচেতন হতে হবে। কোন ধরনের ঝামেলা দেখা দিলে তারা যেন কাছাকাছি অবস্থানে থাকা পুলিশ দলকে জানান। তা হলে পুলিশ তাৎক্ষণিক ব্যবস্থা নিতে পারবে।