বিশ্বসভায় মাথা উঁচু করে দাঁড়াতে চাই

১ ৭৫৭ সালের  ২৩ জুন পলাশীর আম্রকাননে বাংলার স্বাধীনতার সূর্য অস্তমিত হয়েছিল মির্জাফরের বেইমানির ফলে।  আর ১৯৪৯ সালের ২৩ জুন বাংলাদেশ আওয়ামী লীগের জন্ম হয়। বঙ্গবন্ধুর নেতৃত্বে সেই আওয়ামী লীগই এই বাংলাদেশের মানুষকে ঐক্যবদ্ধ করে স্বাধীনতা এনে দেয়। কাজেই আওয়ামী লীগের প্রতিষ্ঠালগ্ন থেকেই বাংলার স্বাধীনতার সাথে বাংলাদেশ আওয়ামী লীগের একটা যোগসূত্র রয়েছে।

 

বাংলাদেশ আওয়ামী লীগ যখন ১৯৪৯ সনে প্রতিষ্ঠিত হয় তখন মওলানা আবদুল হামিদ খান ভাসানী ছিলেন প্রতিষ্ঠাতা সভাপতি, শামসুল হক সাহেব ছিলেন সাধারণ সম্পাদক এবং বঙ্গবন্ধু তখন রাজবন্দী, তিনি যুগ্ম সম্পাদক হিসেবে নির্বাচিত হয়েছিলেন।

 

১৯৪৮ সালে জাতির পিতা প্রথম ভাষা আন্দোলন শুরু করেন। ৪৮ সালের  ১১ মার্চ থেকে ভাষা আন্দোলন শুরু হয় এবং ৫২ সালে এসে তা পরিণতি লাভ করে। ভাষা আন্দোলনের পথ ধরে তিনি ৬ দফা দেন। এই ৬ দফা বাংলার মানুষের মুক্তি সনদ। ৬ দফা নিয়ে যখন তিনি সমগ্র বাংলাদেশে সফর শুরু করেন তখন তাকে গ্রেফতার করা হয়। তারপর আগরতলা ষড়যন্ত্র মামলা দিয়ে তাকে ফাঁসিকাষ্ঠে ঝুলানোর ষড়যন্ত্র করা হয়। কিন্তু বাংলাদেশের মানুষ সংগ্রাম করে তাকে মুক্ত করেন। তারই ভিত্তিতে ১৯৭০ সালে যে নির্বাচন হয়, সেই নির্বাচনে সমগ্র পাকিস্তানে বাংলাদেশ আওয়ামী লীগ সংখ্যাগরিষ্ঠ আসন অর্জন করে। কিন্তু মিলিটারি জান্তা আওয়ামী লীগের হাতে ক্ষমতা দেয়নি। বঙ্গবন্ধু অসহযোগ আন্দোলনের ডাক দেন এবং সেই সাথে ৭ মার্চের ভাষণ ‘এবারের সংগ্রাম আমাদের মুক্তির সংগ্রাম, এবারের সংগ্রাম আমাদের স্বাধীনতার সংগ্রাম’। এরপর মূলত এই ভূখণ্ডের নাম ‘বাংলাদেশ’, এটিও বঙ্গবন্ধুর দেওয়া। আমাদের জাতীয় সঙ্গীত কী হবে সেটাও তিনি ঠিক করে রেখেছিলেন। এমনকি আমাদের পতাকা কী ধরনের, কী ডিজাইনের হবে, সেই সবুজের ভিতরে যে লাল সূর্য থাকবে, সবুজ জমিনে লাল সূর্য উঠবে তাও কিন্তু জাতির পিতারই করে দেওয়া। সেই নির্দেশনাই তিনি দিয়েছিলেন এবং সেভাবেই তার সমস্ত প্রস্তুতি ছিল স্বাধীনতার। ২৫ মার্চ যখন পাক হানাদার বাহিনী বাঙালির ওপর ঝাঁপিয়ে পড়ে তখনই ২৬ মার্চের প্রথম প্রহরে জাতির পিতা স্বাধীনতার ঘোষণা দেন এবং মুক্তিযুদ্ধ শুরু হয়। এই মুক্তিযুদ্ধের সমস্ত প্রস্তুতি কোথায় গেরিলাদের ট্রেনিং হবে, কীভাবে অস্ত্র আসবে, কীভাবে যুদ্ধ হবে, সব পরিকল্পনাই তিনি করে গিয়েছিলেন। কোনো কিছুই তিনি বাদ দেননি। এরপর সেই যুদ্ধ শুরু হলো, আমরা বিজয় অর্জন করলাম।

 

বাংলাদেশ একটি স্বাধীন দেশ। একটি স্বাধীন দেশে কী কী প্রয়োজন, যদি গভীরভাবে একটু ভালোভাবে লক্ষ করে দেখেন, প্রতিটি পদক্ষেপ কিন্তু তিনি নিয়ে গেছেন। মাত্র ৯ মাসের মধ্যে তিনি সংবিধান দিয়েছেন। সেই সংবিধানে বাংলাদেশের আর্থ-সামাজিক উন্নয়নের কথা যেমন বলেছেন, মানুষের মৌলিক অধিকারের কথা বলা আছে এবং আমাদের প্রতিটি ক্ষেত্রের নীতিমালাগুলো স্পষ্টভাবে দেওয়া হয়ে গেছে। সমগ্র বিশ্বের সাথে একটা সুসম্পর্ক বজায় রাখা এবং আন্তর্জাতিক প্রতিষ্ঠানের সদস্যপদ অর্জন করা, যা জাতিসংঘ, ওআইসি, কমনওয়েলথ থেকে শুরু করে প্রতিটি সংস্থার সাথে সম্পর্ক স্থাপন বঙ্গবন্ধুই করে গিয়েছেন। আমাদের যে বিশাল সমুদ্রসীমা এবং এই সীমায় আমাদের যে অধিকার, সেই অধিকারও জাতির পিতা করে দিয়ে গেছেন, সেই সমুদ্র আইনও তিনি করে দিয়ে গেছেন। স্থল সীমানা চুক্তি আইনও তিনি করে গেছেন। আমরা যদি ইতিহাসের ধারাবাহিকতা দেখি, ৪৯ সালে আওয়ামী লীগের জন্ম। এর পর যে যুক্তফ্রন্ট নির্বাচন হয়, সেই নির্বাচনেও কিন্তু আওয়ামী লীগ সংখ্যাগরিষ্ঠতা অর্জন করেছিল। কিন্তু যুক্তফ্রন্ট সরকার যখন গঠন হয়, পাকিস্তানি শাসকরা অল্প দিনের মধ্যেই সেই সরকার ভেঙে দেয়। এরপর ৫৬ সালে আওয়ামী লীগ সরকার গঠন করে। ৫৬ সালে আওয়ামী লীগ সরকার গঠন করার পর পাকিস্তানের যে শাসনতন্ত্র সেটাও কিন্তু আওয়ামী লীগ সরকারই প্রণয়ন করেছিল।  আওয়ামী লীগ ৪টি মিলিটারি ডিকটেটরের বিরুদ্ধে সংগ্রাম করে এর পরবর্তী সংগ্রামও আমরা করেছি আরেকটি সরকারের বিরুদ্ধে। আমি সেই কথায় আসব। এই ৪টি মিলিটারি সরকার একটাও প্রথম আইয়ুব খান ৫৮ সালে মার্শাল ল দেয়, তার বিরুদ্ধে যে আন্দোলন সেটাও কিন্তু আওয়ামী লীগই গড়ে তুলেছিল। ৬৯ সালে গণঅভ্যুত্থানের মধ্য দিয়ে যখন আইয়ুব খানের পতন হয়, আগরতলা ষড়যন্ত্র মামলা থেকে বঙ্গবন্ধু যখন মুক্তি পান, এরপর ৭০-এর নির্বাচন, ইয়াহিয়া খান তখন ক্ষমতায় আসে, ইয়াহিয়া খানের বিরুদ্ধেও এ দেশের মানুষ আন্দোলন করে এবং যুদ্ধ করে বাংলাদেশ স্বাধীন করে। একটা যুদ্ধবিধ্বস্ত দেশের ক্ষমতা হাতে নিয়েছিলেন, তখন একটা টাকাও রিজার্ভ মানি নাই। গোলায় একটুও খাদ্যশস্য নাই। রাস্তা-ঘাট-পুল-ব্রিজ সবই ধ্বংসপ্রাপ্ত। এক কোটির ওপর মানুষ শরণার্থী, লাখো মা-বোন যারা ইজ্জত হারায়, শহীদ পরিবারসহ সকলের কথা তিনি চিন্তা করেছেন। প্রত্যেককে তিনি সহযোগিতা করেছেন। তখন কিন্তু রাস্তা-ঘাট ছিল না। এই আওয়ামী লীগের নেতা-কর্মীরা নৌকায় করে গ্রামবাংলার প্রত্যন্ত অঞ্চলে ঘরে ঘরে রিলিফ পৌঁছে দিত, যেন মানুষ না খেয়ে কষ্ট না পায়। বন্ধুপ্রতিম দেশগুলো সহযোগিতা করেছে। এভাবে মাত্র সাড়ে তিন বছরের মধ্যে একটি যুদ্ধবিধ্বস্ত দেশটিকে তিনি গড়ে তুলেছিলেন। আজকে আমাদের প্রবৃদ্ধি ৭ ভাগ অর্জিত হয়েছে। এ ৭ ভাগ প্রবৃদ্ধি কিন্তু জাতির পিতা বঙ্গবন্ধুর আমলেই প্রথম অর্জিত হয়েছিল। কিন্তু এরপর আর হয়নি।

 

 বছরের পর বছর আওয়ামী লীগের নেতাকর্মীরা জেল খেটেছে। এ অবস্থা চলেছে এবং এর মধ্যদিয়েই আওয়ামী লীগ টিকে থেকেছে। বার বার আঘাত এসেছে, কিন্তু আওয়ামী লীগ সংগঠনটি সুসংগঠিত রয়েছে। এ বিষয়ে আমি অবশ্যই দ্ব্যর্থহীনভাবে বলবো, বঙ্গবন্ধু যেভাবে আওয়ামী লীগ সংগঠনটি গড়ে তুলেছেন সেই তৃণমূলের নেতাকর্মীরাই আওয়ামী লীগ সংগঠনটিকে সব সময়  শক্তিশালী করেছে সুসংগঠিত করে রেখেছে। ১৯৫৪ সালের যুক্তফ্রন্টের সময়ে বঙ্গবন্ধু যে কয়টি মন্ত্রণালয়ের দায়িত্বে ছিলেন, তখন শিল্পায়ন থেকে শুরু করে যতটুকু কাজ হয়েছে তার আমলেই হয়েছে। ১৯৫৬ সালে আওয়ামী লীগ যখন ক্ষমতায় তখন ২১শে ফেব্রুয়ারিকে শহীদ দিবস ঘোষণা করাসহ শহীদ মিনার নির্মাণ ও বাজেটে অর্থ বরাদ্দ করা হয়েছিলো। এছাড়া শিল্পায়ন, কৃষির উত্পাদন, শিক্ষা ব্যবস্থা সবকিছু ঐ আমলেই হয়েছে। অন্যরা কিন্তু জনগণের কথা ভেবে রাষ্ট্র পরিচালনা করেনি। আবার স্বাধীনতার পর মাত্র সাড়ে তিন বছর আওয়ামী লীগ ক্ষমতায় ছিলো। এ সময়ের মধ্যে তিনি এ যুদ্ধবিধ্বস্ত দেশকে গড়ে তুলেছিলেন। ৭০ এর নির্বাচনে যখন ইয়াহিয়া ক্ষমতা দেয়নি। ৭১ সালে বঙ্গবন্ধু অসহযোগ আন্দোলনের ডাক দিলেন এবং মুক্তিযুদ্ধ শুরু হলো। তখন আওয়ামী লীগের যারা নির্বাচিত জনপ্রতিনিধিরা ছিলেন, তারাই স্বাধীন গণপ্রজাতন্ত্রী বাংলাদেশ সরকারের প্রথম সরকার গঠন করেন। ১৯৭১ সালের ১০ই এপ্রিল সরকার গঠন করা হয় এবং ১৭ই এপ্রিল মেহেরপুরের আম্রু কাননে এ সরকার শপথ গ্রহণ করেন। জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান ছিলেন স্বাধীন বাংলাদেশের প্রথম রাষ্ট্রপতি। উপ-রাষ্ট্রপতি হিসেবে ছিলেন সৈয়দ নজরুল ইসলাম এবং প্রধানমন্ত্রী করা হয় তাজউদ্দিন আহমদকে। বঙ্গবন্ধু যেহেতু পাকিস্তানি

 

হানাদার বাহিনীর হাতে বন্দী ছিলেন, সেহেতু সৈয়দ নজরুল ইসলাম সাহেব অস্থায়ী রাষ্ট্রপতি হিসেবে মুক্তিযুদ্ধ পরিচালনা করেন। আমরা মুক্তিযুদ্ধে বিজয় অর্জন করি। বঙ্গবন্ধু ১০ই জানুয়ারি দেশে ফিরে আসেন। তিনি যুদ্ধবিধ্বস্ত দেশের শাসন ভার হাতে নেন। শাসনভার হাতে নিয়েই তিনি পার্লামেন্টে প্রথম সংবিধান উপহার দেন।

 

এই পার্লামেন্টে তিনিই প্রথম সংবিধান উপহার দেন এবং একটি বিধ্বস্ত দেশ গড়ে তুলেন। সাড়ে তিন বছরে তিনি যতটুকু উন্নতি করতে পেরেছিলেন কিন্তু ’৭৫ পরবর্তী বঙ্গবন্ধুকে হত্যা করার পর যারা ক্ষমতায় এসেছিল তারা বছরের পর বছর দেশ শাসন করেছেন, যদি আমরা সেদিকে তাকাই তাহলে দেখব যে, দেশটাকে পিছিয়ে নিয়ে যাওয়াটাই ছিল তাদের একমাত্র লক্ষ্য। দেশের মানুষের কোনো কল্যাণ কেউ করেনি। জনগণ সরকারের কাছ থেকে সেবা পাবে এটা তারা ভুলেই গিয়েছিলেন। এই চিন্তাটাই তাদের ছিল না এবং মানুষের মাঝেও এই চিন্তাটা হারিয়ে গিয়েছিল বরং আওয়ামী লীগের বিরুদ্ধে নানা ষড়যন্ত্র, আওয়ামী লীগের নেতাকর্মীদের উপর অত্যাচার, মামলা মোকদ্দমা দিয়ে তাদেরকে হয়রানি করা হয়েছিল। আওয়ামী লীগের বিরুদ্ধে কুত্সা রটনা করা, এই কাজগুলো তারা করে গেছে।

 

১৯৯৬ থেকে ২০০১ এই সময়টা যদি হিসেব করা হয় তাহলে দেখা যাবে যে, বাংলাদেশের জনগণের জন্য এটা ছিল স্বর্ণযুগ। বাংলাদেশের মানুষ প্রথম উপলব্ধি করে যে, সরকার জনগণের সেবক এবং সেই সেবক হিসেবেই আমরা কাজ করি। বাংলাদেশের মানুষ একটি সুখের মুখ দেখতে শুরু করে। কিন্তু আবার সেই দুর্ভাগ্য যে, ২০০১ সালের নির্বাচনে একটি ষড়যন্ত্র হয়েছিল, এটা শুধু দেশের অভ্যন্তরে না আন্তর্জাতিক ষড়যন্ত্র এর সাথে জড়িত ছিল কারণ আমার অপরাধ ছিল আমি দেশের সম্পদ গ্যাস অন্য দেশের কাছে বিক্রি করতে চাইনি। যেহেতু আমার দেশের সম্পদ অন্যের হাতে তুলে দিতে চাইনি, আর অপর দিকে বেগম খালেদা জিয়া এই গ্যাস দিতে মুচলেকাও দিয়েছিলেন। যার ফলে আমরা সরকারে আসতে পারিনি। ভোট বেশি পেয়েছিলাম, সীট পেলাম না, সরকার গঠন করতে পারলাম না।  এরপর ৭টি বছর যে অত্যাচার, নির্যাতন এদেশের মানুষের উপর চলেছে, আমার ২১ হাজার নেতা/কর্মী জীবন দিয়েছে। ঠিক ’৭১ সালে যেভাবে পাকিস্তানি হানাদার বাহিনী গণহত্যা চালিয়ে ৩০ লক্ষ মানুষকে হত্যা করেছে, লাখ লাখ মা বোনের ইজ্জত নিয়েছে, একই কায়দায় ২০০১ থেকে ২০০৬ এদেশে যেন সেই গণহত্যারই আর একটি রূপ আমরা দেখেছি। দুর্নীতি, হত্যাকাণ্ড, নানা ধরনের ঘটনা, যার ফলাফল আবার এমার্জেন্সি। এর বিরুদ্ধেও কিন্তু আওয়ামী লীগের নেতা/কর্মীরা বসে থাকেনি। এদেশের শিক্ষক সমাজ, ছাত্র সমাজ থেকে শুরু করে আওয়ামী লীগের নেতা/কর্মী এবং স্বাধীনতার স্বপক্ষের শক্তি কিন্তু আন্দোলন করেছে। যার ফলে আবার আমরা গণতন্ত্র ফিরে পেয়েছি।

 

বাংলাদেশ আওয়ামী লীগের ৬৭ বছরের যে ইতিহাস, সেখানে একদিকে সংগ্রাম ও আত্মত্যাগের ইতিহাস রয়েছে, অন্যদিকে একটি দেশ স্বাধীন করা এবং সেই দেশকে অর্থনৈতিকভাবে উন্নয়নের পথে এগিয়ে নিয়ে যাওয়ারও ইতিহাস রয়েছে। আমি দেশবাসীর প্রতি কৃতজ্ঞতা জানাই এই জন্য যে, তারা সব সময় আওয়ামী লীগের পাশে থেকেছে, আওয়ামী লীগকে সমর্থন দিয়েছে এবং আওয়ামী লীগের প্রতীক নৌকা মার্কায় ভোট দিয়ে নির্বাচিত করে আমাদেরকে সরকার গঠন করার সুযোগ করে দিয়েছে। এ কারণেই আমরা আজকে দেশের উন্নয়ন করতে সক্ষম হয়েছি। আমাদের সাথে যারা মিত্ররা রয়েছেন, তাদেরকেও আমি ধন্যবাদ জানাই।

 

আমাদের স্বাধীনতা অর্জনে জাতির পিতা যে দৃষ্টান্ত স্থাপন করে গেছেন সেটাও পৃথিবীর ইতিহাসে অনন্য দৃষ্টান্ত। পৃথিবীর কোনো দেশে যখন কোনো মুক্তিযুদ্ধ হয়েছে এবং সেখানে যে সকল মিত্রশক্তিরা সহযোগিতা করেছে, তারা কিন্তু সেই সকল দেশে ঘাঁটি বানিয়ে থেকে গেছে। বাংলাদেশ হচ্ছে একমাত্র ব্যতিক্রম দেশ। বঙ্গবন্ধুর মতো স্বাধীনচেতা নেতা আমাদের ছিল বলেই আমাদের স্বাধীনতা যুদ্ধ শেষ হওয়ার পরেই সেই মিত্র বাহিনীকে ফেরত পাঠাতে তিনি সক্ষম হয়েছিলেন। ভারতের যে সেনাবাহিনী আমাদের স্বাধীনতা সংগ্রামে সহযোগিতা করেছিলো, দেশ স্বাধীন হওয়ার পর বঙ্গবন্ধু ভারতের প্রধানমন্ত্রী ইন্দিরা গান্ধীকে বলেছিলেন ‘আপনার সেনাবাহিনী কবে ফিরিয়ে নিবেন?’ ইন্দিরা গান্ধীও একজন স্বাধীনচেতা নেতা ছিলেন। সাথে সাথেই তিনি রাজি হয়ে গেলেন এবং তাঁর মিত্র বাহিনীকে তিনি তাঁর দেশে ফেরত নিয়ে গেলেন। পৃথিবীর ইতিহাসে এটা কিন্তু কখনো হয়নি। পশ্চিম জার্মানিকে যুদ্ধের সময় আমেরিকান সৈন্যরা সাহায্য করেছিলো। কিন্তু যুদ্ধ শেষ হওয়ার পরেও সেখানে বহুদিন আমেরিকান সৈন্যের ঘাঁটি ছিলো। পূর্ব জার্মানিকে সাহায্য করেছিলো রাশিয়ান সৈন্য এবং সেখানেও রাশিয়ার ঘাঁটি ছিলো। জাপানে এখনো আমেরিকার ঘাঁটি রয়ে গেছে। এরকম বহু দৃষ্টান্ত পৃথিবীতে আছে যে, যারা মিত্র শক্তি হিসেবে কোনো দেশে একবার ঢুকেছে তারা কখনো ফেরত যায়নি। কিন্তু বঙ্গবন্ধুর মতো দৃঢ়চেতা ও স্বাধীনচেতা নেতা ছিলেন বলেই স্বাধীনতা অর্জনের পর পরই বাংলাদেশ থেকে সেই মিত্র শক্তি তাঁর দেশে ফিরে গেছে।

 

আমরা স্বাধীন-সার্বভৌম একটি দেশ। আমাদের প্রচেষ্টা সবসময় এভাবেই থাকবে যে, আমরা মহান মুক্তিযুদ্ধের মধ্য দিয়ে বিজয় অর্জন করেছি। আমরা বিজয়ী জাতি। এ বিজয়ী জাতি হিসেবে আমরা বিশ্বসভায় সবসময় মাথা উঁচু করে চলতে চাই। বাংলাদেশ আওয়ামী লীগের এই প্রতিষ্ঠাবার্ষিকীতে এটিই কামনা করি।

 

(ঈষত্ সংক্ষেপিত)

 

লেখক : গণপ্রজাতন্ত্রী বাংলাদেশ সরকারের মাননীয় প্রধানমন্ত্রী