সাধারণ এক পরিবারে জন্ম নিয়ে যিনি একক প্রচেষ্টা, কঠোর পরিশ্রম, সাধনা ও অধ্যবসায়ের মাধ্যমে মানুষের ভালোবাসা অর্জন করেই একজন নামকরা চিকিত্সক, লেখক ও সমাজসেবক হিসেবে প্রতিষ্ঠা লাভ করেছিলেন, তিনি হলেন চট্টগ্রামের খ্যাতিমান হূদরোগ বিশেষজ্ঞ ডাক্তার মো.রেজাউল করিম। বহু গুণের অধিকারী সেই মানুষটির প্রথম মৃত্যুবার্ষিকী আজ। নিজপ্রচেষ্টা ও বিত্তবানদের সহযোগিতায় ভবিষ্যতে চট্টগ্রামে একটি আন্তর্জাতিক মানের হূদরোগ হাসপাতাল প্রতিষ্ঠার পরিকল্পনা নিয়ে যিনি এগুচ্ছিলেন ক্যান্সারের সঙ্গে প্রায় আড়াই মাস লড়াই করে মাত্র ৬১ বছর বয়সে পরাস্ত হতে হয়েছে তাকে।
শুধু মানবসেবায় তিনি সন্তুষ্ট ছিলেন না; সুন্দর ও দুর্নীতিমুক্ত সমাজ এবং কল্যাণকর রাষ্ট্রের স্বপ্ন লালন করতেন। পত্র-পত্রিকায় নিয়মিত কলাম লিখে দেশের বিরাজমান সমস্যা তুলে ধরার চেষ্টা করেছেন। সততা, পরোপকারিতা , দেশপ্রেম, অসাম্প্রদায়িকতা, মুক্তিযুদ্ধের চেতনায় তিনি ছিলেন প্রবলভাবে বিশ্বাসী। অসচ্ছল রোগী ও পরিচিতজনদের বিনাপয়সায় চিকিত্সাসেবা দিতেন। অসংখ্য গরিব ছেলে-মেয়ের পড়ালেখার খরচ বহন করা, সমাজসেবামূলক ও জনহিতকর নানা কর্মকাণ্ডে নিবিড় সম্পৃক্ততার কারণে সব শ্রেণি-পেশার মানুষের মধ্যে একজন প্রিয় ব্যক্তিত্ব হিসেবে অল্প সময়েই নিজেকে সুপ্রতিষ্ঠিত করতে সক্ষম হয়েছিলেন। তাঁর লেখা স্বাস্থ্যবিষয়ক বই ও পত্রিকায় বিভিন্ন সময়ে প্রকাশিত হূদরোগ ও ডায়াবেটিস-সংক্রান্ত প্রবন্ধগুলো জনগণের স্বাস্থ্যসচেতনতা তৈরিতে অবদান রাখছে। তাঁর সর্বশেষ প্রকাশিত গ্রন্থ হলো, “বাংলাদেশের রাজনীতি মুক্তিযুদ্ধ ও অসাম্প্রদায়িক চেতনা”।
রেজাউল করিম ১৯৫৪ সালের ১ ফেব্রুয়ারি সীতাকুণ্ডের সোনাইছড়ি ইউনিয়নের ঘোড়ামরা গ্রামে জন্মগ্রহণ করেন। তিনি ১৯৭৯ সালে চট্টগ্রাম মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতাল থেকে এমবিবিএস ডিগ্রি লাভ করেন। এরপর তিনি শিক্ষা মন্ত্রণালয়ের বৃত্তি নিয়ে সোভিয়েত ইউনিয়নের কুবান স্টেট মেডিক্যাল ইনস্টিটিউট থেকে ইন্টারন্যাল মেডিসিন ও কার্ডিওলজিতে স্পেশালাইজেশন কোর্স সম্পন্ন করেন। এরপর দেশে ফিরে চিকিত্সাসেবার মাধ্যমে জনসেবায় আত্মনিয়োগ করেন। ১৯৮৫ সালে তিনি চট্টগ্রাম মেডিক্যাল কলেজ (চমেক) হাসপাতালের কার্ডিওলজি বিভাগের রেজিস্ট্রার, ১৯৮৭ সালে একই হাসপাতালে রেসিডেন্ট ফিজিশিয়ান এবং একই সময়ে স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয় কর্তৃক দায়িত্বপ্রাপ্ত হয়ে চমেক হাসপাতালের ‘কার্ডিওলজি কাম করোনারি কেয়ার ইউনিট’ স্থাপনের দায়িত্ব পালন করেন। মেডিক্যালে এই বিভাগ চালু করার জন্যে সরকারিভাবে তাঁকেই দায়িত্ব দেয়া হয়েছিল। ১৯৯০-৯১ সালে ন্যাশনাল ইনস্টিটিউট অব কার্ডিওভ্যাসকিউলার ডিজিজেস, ঢাকা-এর রেসিডেন্ট ফিজিশিয়ান, ১৯৯২-৯৩ সালে চমেক-এর মেডিসিন বিভাগের কনসালট্যান্ট, ১৯৯৩-৯৪ সালে চমেক হাসপাতালের কার্ডিওলজি কাম করোনারি কেয়ার ইউনিটের কনসালট্যান্ট হিসেবে চিকিত্সাসেবা দিয়ে ডা. করিম হূদরোগীদের প্রশংসা কুড়িয়েছিলেন।
ছাত্রাবস্থা থেকে তিনি জনসেবা ও জনকল্যাণমূলক কর্মকাণ্ড, সামাজিক-সাংস্কৃতিক শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান ও জনহিতকর প্রতিষ্ঠানের সঙ্গে নিজেকে ওতপ্রোতভাবে জড়িয়ে রেখেছিলেন। মানবসেবী ডা. করিম চট্টগ্রামের অবৈতনিক কনসালটেন্ট কার্ডিওলজিস্ট হিসেবে ফাদার বুদ্রোস মেডিক্যাল সেন্টারে ১৫ বছর যাবত্ সপ্তাহে দু’বার গরিব ও নিঃস্ব রোগীদের চিকিত্সাসেবা দিয়েছেন। নিঃস্বার্থ সমাজকর্মী ডা. রেজাউল করিমের কর্মময় জীবন নতুন প্রজন্মের জন্য অনুকরণীয়।