হাঁস পালনে ভাগ্যবদল

গোপালগঞ্জ সদর উপজেলার কাজুলিয়া ইউনিয়নের বিল এলাকায় অনেক গরিব কৃষক হাঁস পালন করে স্বাবলম্বী হয়েছে। ইতোমধ্যে ৫ শতাধিক পরিবার বাণিজ্যিক ভিত্তিতে হাঁস পালন শুরু করেছেন। এছাড়াও হাঁস-মুরগি, গরু ও ছাগল ছাড়া কোনো বাড়ি খুঁজে পাওয়া যাবে না। সরকার এলাকার দরিদ্রদের একটি বাড়ি একটি খামার প্রকল্পের আওতায় নিয়ে ঋণের ব্যবস্থা করেছে।
সদর উপজেলার কাজুলিয়া ইউনিয়নের বিল এলাকায় প্রতি বছরই শত শত একর জমি অনাবাদি থাকে। বছরের পর বছর ধরে এসব এলাকার জমি অনাবাদি থাকায় এলাকায় দিন দিন গরিব মানুষের সংখ্যা বাড়ছে। বেঁচে থাকার তাগিদে তারা হাঁস পালন করছেন। জেলার আরো কৃষককে হাঁস পালনে উদ্বুদ্ধ করতে হাঁস সমাবেশের আয়োজন করা হয়। বৃহস্পতিবার বিকালে কাজুলিয়া ইউনিয়নের পিঠাবাড়ি সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয় মাঠে এ সমাবেশ অনুষ্ঠিত হয়। ইউনিয়নের তিনটি গ্রামের ২৩ হাঁস পালনকারীর দুই সহস্রাধিক হাঁস সমাবেশে আনা হয়। গোপালগঞ্জ বিআরডিবির একটি বাড়ি একটি খামার প্রকল্পের আওতায় সমাবেশের আয়োজন করা হয়। কাজুলিয়া ইউনিয়ন পরিষদের সহযোগিতায় সমাবেশে জেলা প্রশাসক খলিলুর রহমান প্রধান অতিথি ছিলেন। এসময় জেলা প্রশাসনের ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তাসহ এলাকার অসংখ্য উৎসাহী লোক উপস্থিত ছিলেন। সরকারের ব্যতিক্রমধর্মী সমাবেশ দেখে পরদিন থেকে অনেকেই হাঁস পালনে উদ্বুদ্ধ হয়েছেন।
পিঠাবাড়ি গ্রামের রাজিব মলি্লক জানান, তাদের এলাকার জমি প্রায় ৮/৯ মাস পানির নিচে তলিয়ে থাকে। বছরে একবার মাত্র ফসল হয়। বাকি সময় তাদের বেকার থাকতে হয়। তারা বিলের শাপলা-শালুক কুড়িয়ে বিক্রি করে জীবন ধারণ করেন। এর সঙ্গে বর্তমানে হাঁস পালন যোগ হয়েছে। সমিতি গঠনের মাধ্যমে একটি বাড়ি একটি প্রকল্পের মাধ্যমে ৮ টাকা হার সুদে তাকে ১০ হাজার টাকা ঋণ দেয়া হয়েছে। নিজের কিছু টাকা খরচ করে ৪শ’ হাঁস পালন করছেন। হাঁসগুলো এখন ডিম দেয়া শুরু করেছে। তিনি ডিম বিক্রির টাকা দিয়ে হাঁস লালন পালন ও সংসারের খরচ চালিয়ে ভালোই আছেন। একই ধরনের কথা জানালেন_ পিঠাবাড়ি গ্রামের বিজর বিশ্বাস, মিরা মলি্লক, হরেন্দ্রনাথ মলি্লক, নির্মলা চৌধুরী, নাজমা বেগম, স্মৃতি বিশ্বাস ও সীমা বিশ্বাস। তারা জানান, জমিতে ফসল না হলেও তারা হাঁস পালন করে ভালোই আছেন। জেলা প্রাণিসম্পদ কর্মকর্তা ডা. আতাউর রহমান চৌধুরী জানান, হাঁস পালনের মধ্য দিয়ে দেশের ডিম ও আমিষের চাহিদা মেটানো সম্ভব। তিনি জানান, হাঁস খামারিদের উৎসাহী করতেই হাঁস সমাবেশের আয়োজন করা হয়েছে।
গোপালগঞ্জ বিআরডিবির উপ-পরিচালক জয়প্রকাশ বিশ্বাস জানান, একটি বাড়ি একটি খামার প্রকল্পের আওতায় সদর উপজেলার কাজুলিয়া ইউনিয়নের ৯টি ওয়ার্ডের ৯টি গ্রাম উন্নয়ন সমিতি গড়ে তোলা হয়েছে। প্রতিটি সমিতিতে ৬০ জন করে সদস্য ২শ’ টাকা করে সঞ্চয় করে থাকেন। ইউনিয়নের ৯টি সমিতিতে ব্যক্তি সঞ্চয়, উৎসাহ বোনাস এবং ঘূর্ণায়মান ঋণ তহবিল মিলে জমানো ৫৪ লাখ টাকা উঠান বৈঠকের মাধ্যমে সদস্যরা চাহিদা মতো ঋণ নিয়ে থাকেন। কাজুলিয়া ইউনিয়নের লোকজন হাঁস পালন করে স্বাবলম্বী হয়ে উঠেছে।