ঢাকা-চট্টগ্রাম মহাসড়কের ফেনীর মহিপালে দ্রুত এগিয়ে চলছে দেশের প্রথম ছয় লেনবিশিষ্ট ফ্লাইওভারের (উড়াল সড়ক) নির্মাণকাজ। সংশ্লিষ্টদের আশা, নির্মাণকাজ শেষ হলে শুধু মহিপাল নয়, পাল্টে যাবে পুরো জেলার দৃশ্যপট। আরো গুরুত্বপূর্ণ হয়ে ওঠবে এ জনপদ। সড়ক পরিবহন ও সেতুমন্ত্রী ওবায়দুল কাদের প্রায়ই ফ্লাইওভারটির নির্মাণকাজ পরিদর্শন করতে আসেন। সমপ্রতি পরিদর্শনকালে তিনি বলেন, ‘মহাসড়কে সব ফ্লাইওভার চার লেন করা হয়েছে। মহিপালের চৌরাস্তা দিয়ে ফেনী-নোয়াখালী আঞ্চলিক মহাসড়ক ও ঢাকা-চট্টগ্রাম মহাসড়কের যান চলাচল করায় এখানে প্রতিনিয়ত যানজট সৃষ্টি হয়। তাই ফ্লাইওভারটি ছয় লেন হচ্ছে। ইতোমধ্যে ফ্লাইওভারের দৃশ্যমান কাজ শুরু হয়েছে।’ কাজ শুরুর তিন বছরের মধ্যে কাজ শেষ হবে বলে আশাবাদ ব্যক্ত করেন তিনি। ফেনী পৌরসভার মেয়র হাজী আলাউদ্দিন বলেন, ‘স্থানীয় সংসদ সদস্য নিজাম উদ্দিন হাজারী দীর্ঘদিন ধরে ফ্লাইওভারটির স্বপ্ন দেখছিলেন। তাঁর এ স্বপ্নকে বাস্তবে রূপ দিলেন সড়ক পরিবহন ও সেতুমন্ত্রী ওবায়দুল কাদের।’ সংসদ সদস্য নিজাম উদ্দিন হাজারী বলেন, ‘মন্ত্রী ওবায়দুল কাদেরের অবদান ফেনীবাসী কখনো ভুলতে পারবেন না। মহিপাল ফ্লাইওভার ফেনীবাসীর জন্য কত বড় প্রাপ্তি তা তাঁরা ভবিষ্যতে বুঝবেন। যখন এ কাজ শেষ হবে, তখন পুরো দেশবাসী অবাক হয়ে মুখিয়ে থাকবে ফেনীর দিকে।’ ফেনী পৌরসভার মেয়র জানান, ফ্লাইওভারটি ফেনীর লাখো মানুষের আশা আকাঙ্ক্ষার প্রতিফলন। এর নির্মাণকাজ সম্পন্ন হলে দীর্ঘদিনের যানজট থেকে রেহাই পাবেন ঢাকা-চট্টগ্রাম মহাসড়কের যাত্রীরা। আর ফেনী হবে যানজটমুক্ত পরিপাটি শহর। রাত ১০টার পর অসহনীয় অবস্থায় পড়তে হয় দূরপাল্লার যাত্রী সাধারণকে। শিগগিরই সেই অবস্থা থেকে রেহাই পাবেন তাঁরা। বৃহত্তর চট্টগ্রাম আন্তঃজেলা বাস মালিক সমিতির সহ-সভাপতি ও স্টার লাইন গ্রুপের নির্বাহী পরিচালক জাফর উদ্দিন বলেন, ‘ফ্লাইওভারটি নির্মাণ হলে রাজধানীর সাথে বাণিজ্যিক নগরী চট্টগ্রাম ও পর্যটন নগরী কক্সবাজারের যোগাযোগ আরো সহজ ও দ্রুততর হবে। সাধারণ যাত্রীরা রেহাই পাবেন অসহনীয় দুর্ভোগ থেকে।’ ফ্লাইওভার নির্মাণকারী বাংলাদেশ সেনাবাহিনীর স্পেশাল ওয়ার্ক অর্গানাইজেশনের ১৯ ইঞ্জিনিয়ারিং কনস্ট্রাকশন ব্যাটালিয়নের সাথে কথা বলে জানা যায়, দেশের ইতিহাসে মহিপালের ফ্লাইওভার প্রথম ছয় লেন ফ্লাইওভার। ঢাকা-চট্টগ্রাম মহাসড়কে চার লেন প্রকল্পের কাজ শুরু হওয়ার পর প্রথমে এটি চার লেন হওয়ার কথা ছিল। সেই হিসাবে দরপত্রও আহ্বান করা হয়। কিন্তু সরকার ভবিষ্যতের কথা মাথায় রেখে ফ্লাইওভারটি চার লেনের পরিবর্তে ছয় লেন করার সিদ্ধান্ত নেয়। এর নির্মাণ ব্যয় ধরা হয়েছে প্রায় ১৫৮ কোটি টাকা। মূল ফ্লাইওভারের দৈর্ঘ্য ৬৬০ মিটার। এর সঙ্গে থাকবে আরও প্রায় ১ হাজার ২২০ মিটারের লিংক রোড। ১ হাজার ২২০ মিটারের পয়েন্ট থেকে সড়ক ভাগ হয়ে একটি ফ্লাইওভারে যাবে, অপরটি পাশ দিয়ে এসে ফেনী শহর ও ফেনী-নোয়াখালী সড়কে যাবে। এটি হবে লিংক রোড। মোট সড়ক হচ্ছে প্রায় ১ হাজার ৮৮০ মিটার। এ ফ্লাইওভারের বৈশিষ্ট্য হচ্ছে, এটি উপরে ছয় লেন ও নিচে চার লেন। সে হিসাবে মহাসড়কের মহিপালের এ অংশটি হবে ১০ লেনের। ফ্লাইওভারের নির্মাণ কাজ পেয়েছে বাংলাদেশ সেনাবাহিনীর স্পেশাল ওয়ার্ক অর্গানাইজেশনের অধীনে ১৯ ইঞ্জিনিয়ারিং কনস্ট্রাকশন ব্যাটালিয়ন। ফ্লাইওভার প্রকল্পে নিয়োজিত মেজর মাহবুব হোসেন জানান, কাজ পুরোদমে শুরু হয়েছে। লিংক রোড কোন দিক দিয়ে যাবে সেটিও চিহ্নিত করা হয়েছে। পাইলিংয়ের কাজ প্রায় শেষ পর্যায়ে, উঠে যাচ্ছে পিলার। আস্তে আস্তে সরিয়ে দেওয়া হচ্ছে অবৈধ স্থাপনা। নির্ধারিত সময়ের আগেই ২০১৮ সালের জুলাই মাস নাগাদ তাঁরা কাজটি শেষ করতে পারবেন বলে আশা প্রকাশ করেন।