ব্যাকটেরিয়া শনাক্তকরণ যন্ত্র বাংলাদেশী-মার্কিনি বিজ্ঞানীর যুগান্তকারী আবিষ্কার

বিশ্বজুড়ে নানা ক্ষেত্রে অবদান রেখে চলেছেন বাংলাদেশীরা। এবার ব্যাটটেরিয়া শনাক্তকরণে নতুন ধরনের বিশেষ (বৈদ্যুতিক) যন্ত্র আবিষ্কার করে বিশ্বজুড়ে সাড়া জাগিয়েছেন বাংলাদেশী বংশোদ্ভূত এক মার্কিনি। যুক্তরাষ্ট্রের ইন্ডিয়ানা অঙ্গরাজ্যের পুরদু বিশ্ববিদ্যালয়ের অধ্যাপক কৃতী ওই বাংলাদেশী-মার্কিনির নাম মুহাম্মদ আশরাফুল আলম। বুয়েটে লেখাপড়া শেষে যুক্তরাষ্ট্রে পিএইচডি করে সেখানেই গবেষণা শুরু করেন তিনি। তার এ আবিষ্কার চিকিৎসা ও খাদ্য নিরাপত্তার ক্ষেত্রে যুগান্তকারী অবদান রাখবে বলে ধারণা করা হচ্ছে।
পুরদু বিশ্ববিদ্যালয়ের পক্ষ থেকে জানানো হয়, নতুন আবিষ্কৃত যন্ত্রের মাধ্যমে চিকিৎসা ও খাদ্য নিরাপত্তার ক্ষেত্রে দ্রুততম সময়ে ব্যাকটেরিয়া শনাক্ত করা সম্ভব হবে। এত দিন পর্যন্ত জীবিত ও মৃত ব্যাকটেরিয়া শনাক্ত করার ক্ষেত্রে সমস্যায় পড়তে হতো। কিন্তু নতুন যন্ত্রটি এ সমস্যার সমাধান করতে সক্ষম। সচরাচর ল্যাবরেটরিতে ব্যাকটেরিয়া শনাক্তকরণে যেসব যন্ত্র ব্যবহার করা হয়, অধ্যাপক আশরাফুলের আবিষ্কৃত যন্ত্রে তার চেয়ে সময় লাগে অনেক কম। সাধারণত কয়েক ঘণ্টা কিংবা তার চেয়ে দীর্ঘ সময়ে ব্যাকটেরিয়ার চরিত্র নিরূপণ করা হয়। নতুন আবিষ্কৃত যন্ত্র এর চেয়ে কম সময়ে বলে দেবে এটা কোনো ধরনের ব্যাকটেরিয়া এবং এর জন্য কী ধরনের অ্যান্টিবায়োটিক প্রয়োজন।
নিজের আবিষ্কৃত যন্ত্রের কার্যকারিতা ব্যাখ্যা করে আশরাফুল বলেন, জীবিত ও মৃত ব্যাকটেরিয়ার সরূপ শনাক্তের মাধ্যমে আমরা বহু দিনের কাক্সিক্ষত লক্ষ্যে পৌঁছার পথে পদক্ষেপ নিয়েছি। তিনি বলেন, এটা জরুরি, কারণ শুধু ব্যাকটেরিয়া শনাক্তকরণ ও চিহ্নিত করাতেই আপনার কাজ শেষ নয়। আপনার জানা প্রয়োজন, কোন অ্যান্টিবায়োটিক ওই ব্যাকটেরিয়াকে ধ্বংস করতে সক্ষম। আগামী সপ্তাহে যুক্তরাষ্ট্রের ন্যাশনাল একাডেমি অব সায়েন্সে এ আবিষ্কারের বৃত্তান্ত নিয়ে গবেষণা প্রতিবেদন উপস্থাপন করা হবে। অধ্যাপক মুহাম্মদ আশরাফুল আলম ও তার ছাত্রী আইদা ইব্রাহিমি (সহকারী হিসেবে গবেষণায় ছিলেন) ওই প্রতিবেদন তৈরি করেছেন। আইদা জানান, ডিএনএ-সংক্রান্ত গবেষণার জন্য ৪ বছর আগে তারা এ গবেষণা শুরু করেন। শেষ পর্যন্ত নতুন এ যন্ত্র আবিষ্কার হওয়ায় সন্তুষ্ট তিনি। আইদা বলেন, বলা বাহুল্য দ্রুত সময়ের মধ্যে শারীরিক অবস্থা বিচারের এ যন্ত্র আসলেই সেরা।
আবিষ্কৃত বৈদ্যুতিক যন্ত্রের কার্যকারিতা সম্পর্কে অধ্যাপক আশরাফুল জানান, ধারাবাহিক প্রক্রিয়ার মাধ্যমে ব্যাকটেরিয়া শনাক্তের পর সেগুলো ধ্বংস করতে ওষুধ (অ্যান্টিবায়োটিক) প্রয়োগ প্রয়োজন। ওই যন্ত্রের মাধ্যমে সেটাও জানা যাবে। নতুন এ যন্ত্রে ই-কোলি, স্যালমোনেলা এবং এস এপিডেরমিডিস ব্যাকটেরিয়া নিয়ে পরীক্ষা-নিরীক্ষা করা হয়েছে। অধিকাংশ গবেষণা হয়েছে (যুক্তরাষ্ট্রের) পুরদুর ডিসকোভারি পার্কের বিরক ন্যানোটেকনোলজি সেন্টার এবং বিন্ডলে বায়োসায়েন্স সেন্টারে। প্রসঙ্গত, ১৯৮৮ সালে বুয়েট (বাংলাদেশ বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়) থেকে বিএসইই ডিগ্রি লাভ করে নিউইয়র্কের ক্লার্কসন বিশ্ববিদ্যালয় থেকে ১৯৯১ সালে এমএস করেন কৃতী এ বাংলাদেশী। পরে পুরদু বিশ্ববিদ্যালয় থেকে ১৯৯৫ সালে পিএইচডি করেন তিনি। সূত্র : আমেরিকান বাজার