বাজেটে অর্থমন্ত্রীর জন্য সবচেয়ে বড় চ্যালেঞ্জ হলো বিনিয়োগ বাড়ানো। আর এজন্য প্রয়োজন পরিবেশ ঠিক রাখা। দরকার ব্যবসা পরিচালনার ব্যয় কমিয়ে আনা। এ ক্ষেত্রে যোজন যোজন দূরে বাংলাদেশ। বিশ্বব্যাংকের জরিপ তাই বলছে।
আরিফুর সবুজ
‘প্রবৃদ্ধি, উন্নয়ন ও সমতাভিত্তিক সমাজ প্রতিষ্ঠার পথে অগ্রযাত্রা’ শিরোনামে ২০১৬-১৭ অর্থবছরের এবারের বাজেট নিয়ে চলছে জোর আলোচনা-সমালোচনা। কেউ বলছেন বাস্তবায়নযোগ্য, কেউবা বলছেন বাস্তবায়নযোগ্য নয়। প্রতি বছরই এমনটা হয়। যত ভালো বাজেটই অর্থমন্ত্রী পেশ করুন না কেন, বিরোধী পক্ষসহ স্বার্থে আঘাতপ্রাপ্ত গোষ্ঠী এর সমালোচনা করবেই। এবং করেও। বাস্তবতা হলো, সীমিত সম্পদের সাহায্যে যখন অসীম অভাব পূরণের প্রচেষ্টা চালানো হয়, তখন সবার সব আশা-আকাঙ্ক্ষা সম্পূর্ণরূপে পূরণ করা দুরূহ হয়ে পড়ে। কিন্তু এ বাস্তবতা অস্বীকার করে বাজেটের ভালো দিকগুলো এড়িয়ে গিয়ে কেবল বিরোধিতার জন্য আমরা বাজেট নিয়ে সমালোচনার ঝাঁপি খুলে বসি। ২০০৯-১০ সাল থেকে আওয়ামী লীগ সরকারের করা প্রতিটি বাজেটের ক্ষেত্রে ব্যাপক সমালোচনা করা হয়েছিল। কিন্তু আমরা দেখেছি, অত্যন্ত দক্ষতার সঙ্গে বাজেট বাস্তবায়ন করে দেশকে সামনের দিকে এগিয়ে নিয়ে যাচ্ছে বর্তমান সরকার। মধ্যম আয়ের দেশের কাতারে আজ বাংলাদেশ। একটা সময় পর্যন্ত একে অবাস্তব, অলীক কল্পনা মনে হলেও আজ তা সত্য, নিতান্তই বাস্তব। এ বাস্তবতা সম্ভব হয়েছে আওয়ামী লীগ সভানেত্রী জননেত্রী শেখ হাসিনার নেতৃত্বগুণে। পিতার আদর্শে উদ্বুদ্ধ হয়ে, পিতার দেখা স্বপ্ন বাস্তবায়নের জন্য তিনি নিরলস চেষ্টা করেছেন। তার ঐকান্তিক ইচ্ছা এবং কর্মপ্রচেষ্টার কারণেই আজ বাংলাদেশে ‘ক্ষুধার তাড়নায় মৃত্যু’ এমন সংবাদ খুঁজে পাওয়াই দুষ্কর। দেশ যেভাবে এগিয়ে যাচ্ছে তাতে উন্নত দেশের কাতারে পেঁৗছানো আর খুব বেশি দূরে নয়। দক্ষ ও বিচক্ষণ বাজেট প্রণয়ন ও তার বাস্তবায়নের কারণেই এমনটা সম্ভব হয়েছে।
এবারের বাজেট বক্তৃতাটি অর্থমন্ত্রী শুরু করেছিলেন একটি সুসংবাদ দিয়ে। সেই সুসংবাদটি ছিল এ দেশের জিডিপি প্রবৃদ্ধি ৬ শতাংশের বৃত্ত ভেঙে ৭ শতাংশের মাইলফলক স্পর্শ করেছে। জিডিপি প্রবৃদ্ধি হয়েছে ৭.০৫ শতাংশ। এ ধারা অব্যাহত থাকলে অর্থমন্ত্রী আশাবাদী যে, নতুন অর্থবছরে জিডিপি প্রবৃদ্ধি হবে ৭ দশমিক ২ শতাংশ। এরপর অর্থমন্ত্রী মহান জাতীয় সংসদে বাজেট ২০১৬-১৭ পেশ করেন। এবারের বাজেটটি ৩ লাখ ৪০ হাজার ৬০৫ কোটি টাকার। আর আয় ধরা হয়েছে ২ লাখ ৪৮ হাজার ২৬৮ কোটি টাকা। বিশাল আকারের এ বাজেটকে সমালোচকরা উচ্চাভিলাষী আখ্যা দিয়েছেন। অর্থমন্ত্রী নিজেই বলছেন, এ বাজেট উচ্চাভিলাষী। উচ্চাভিলাষী বাজেটের কারণে ২২ বছরে যে জনসংখ্যা দারিদ্র্যসীমা অতিক্রম করেছে তার ৪৫% অতিক্রম করেছে গত ৬ বছরে। উচ্চাভিলাষী বাজেটের কারণেই দেশ মধ্যম আয়ের দেশে প্রবেশ করেছে এবং কাঙ্ক্ষিত সময়েই উচ্চ আয়ের দেশে প্রবেশ করতে সক্ষম হবে। এ উচ্চাভিলাষ চরিতার্থে অর্থমন্ত্রী রাজস্ব বোর্ডের ওপরই বেশি ভরসা করছেন। জাতীয় রাজস্ব বোর্ডের (এনবিআর) একারই দায়িত্ব ২ লাখ ৩ হাজার ১৫০ কোটি টাকা সংগ্রহের। এ বাজেটে রাজস্ব বোর্ডের ওপর রাজস্ব আদায়ের যে লক্ষ্যমাত্রা ধার্য করা হয়েছে তা বর্তমান অর্থবছরের সংশোধিত লক্ষ্যমাত্রার তুলনায় ৩৫ দশমিক ৪ শতাংশ বেশি। খালি চোখে একে উচ্চাভিলাষী মনে হতেই পারে। তবে এ রাজস্ব আদায় করা সম্ভব। কারণ, কর কর্মকর্তার সংখ্যা বেড়েছে, দক্ষতাও বেড়েছে। চিহ্নিত করা হচ্ছে নতুন নতুন করদাতা। ডিজিটালাইজডসহ কর ব্যবস্থাপনায় বিভিন্ন সুযোগ-সুবিধা সৃষ্টি করা হচ্ছে। সঠিক করদাতার সংখ্যা নির্ণয় থেকে শুরু করে কর আদায়ে স্বচ্ছতা সৃষ্টি করতে পারলে এ বিশাল রাজস্ব আদায় সম্ভব। তবে এনবিআরকে খাটতে হবে। সেই সঙ্গে সরকারের মনিটরিং কার্যক্রম বেগবান করতে হবে।
এ বাজেটের ৩ লাখ ৪০ হাজার ৬০৫ কোটি টাকার মধ্যে খাতভিত্তিক ব্যয়গুলোর মধ্যে শিক্ষা ও প্রযুক্তি ৫০ হাজার ১৭ কোটি, জনপ্রশাসন ৪৭ হাজার ৭৬১ কোটি, সুদ ৩৯ হাজার ৯৫১ কোটি, পরিবহন ও যোগাযোগ ৩৫ হাজার ৯২০ কোটি, স্থানীয় সরকার ও পল্লী উন্নয়ন ২৩ হাজার ২৫৮ কোটি, প্রতিরক্ষা ১৯ হাজার ৬০৯ কোটি, জনশৃঙ্খলা ও নিরাপত্তা ১৯ হাজার ১০০ কোটি, সামাজিক কল্যাণ ও নিরাপত্তা ১৮ হাজার ৩৩৯ কোটি, ভর্তুকি ও প্রণোদনা ১৭ হাজার ৭২৯ কোটি, পেনশন ও গ্র্যাচুইটি ১৬ হাজার ৯১৬ কোটি, স্বাস্থ্য ১৫ হাজার ৮৮৩ কোটি, জ্বালানি ও বিদ্যুৎ ১৫ হাজার ১৪ কোটি, কৃষি ১৩ হাজার ৩ কোটি এবং অন্যান্য খাতে ৮ হাজার ১০৫ কোটি টাকা। খাতওয়ারি ছাড়া উন্নয়নমূলক ও অনুন্নয়নমূলক বিচারে দেখা যায়, উন্নয়ন বাজেট ১ লাখ ১০ হাজার ৭০০ কোটি আর অনুন্নয়ন বাজেট যেমন বেতন-ভাতা, সুদ পরিশোধ ইত্যাদিতে ব্যয় ২ লাখ ১৫ হাজার ৭৪৪ কোটি টাকা। আয়-ব্যয়ের হিসাব থেকে দেখা যায়, সামগ্রিক ঘাটতির পরিমাণ দাঁড়িয়েছে ৯২ হাজার ৩৩৭ কোটি টাকা, যা জিডিপির ৫ শতাংশ। এ ঘাটতি অর্থমন্ত্রী মেটাবেন ঋণের মাধ্যমে। বৈদেশিক উৎস থেকে ঋণ নেয়া হবে ৩০ হাজার ৭৮৯ কোটি এবং অভ্যন্তরীণ উৎস থেকে ৬১ হাজার ৫৪৮ কোটি টাকা। সরকারকে বিকল্প অর্থায়নের জন্য আরো বেশি চেষ্টা করতে হবে। বিশেষ করে কূটনৈতিক তৎপরতা বাড়িয়ে বিদেশি অনুদান বেশি সংগ্রহ করা যদি সম্ভব হয় তবে অভ্যন্তরীণ উৎসের চাপ অনেকটাই কমে যাবে। এজন্য সরকারকে যথাযথ পদক্ষেপ নিতে হবে।
শিক্ষার উন্নয়নে বর্তমান সরকার যে সর্বদা সচেষ্ট, তা আবারো এ বাজেটের মধ্য দিয়ে প্রতিফলিত হলো। জাতীয় বাজেটের সর্বোচ্চ ব্যয়ের খাত শিক্ষা ও প্রযুক্তি। শিক্ষার সুষম সুযোগ বাড়ানোর জন্য নানা প্রতিশ্রুতি দিয়েছেন অর্থমন্ত্রী আবুল মাল আবদুল মুহিত। বাজেটে শিক্ষা ও প্রযুক্তি খাতে মোট বাজেটের ১৫ দশমিক ৬ শতাংশ বরাদ্দ দেয়া হয়েছে, যা এবার সর্বোচ্চ। গতবার এ খাতে বরাদ্দ ছিল ১১ দশমিক ০৭ শতাংশ। শিক্ষা এবং প্রাথমিক ও গণশিক্ষা মিলিয়ে দুই মন্ত্রণালয়ের জন্য প্রস্তাবিত বাজেটে মোট বরাদ্দ ধরা হয়েছে ৪৯ হাজার ১০ কোটি টাকা। এতে শিক্ষা খাতে প্রস্তাবিত বরাদ্দের পরিমাণ দাঁড়ায় জিডিপির আড়াই শতাংশ। চলতি অর্থবছরের মূল বাজেটে এ খাতে ১ দশমিক ৯৮ শতাংশ বরাদ্দ ছিল, পরে সংশোধিত বাজেটে তা বেড়ে দাঁড়ায় প্রায় ২ দশমিক ১৫ শতাংশ। সীমিত সম্পদের এই দেশে ধারাবাহিকভাবে যে এ খাতে বরাদ্দ বাড়ছে তাই হচ্ছে আসল কথা।
দেশে ব্যবসায় বিনিয়োগ ও উন্নয়নের গুরুত্বপূর্ণ শর্ত হলো ভৌত অবকাঠামো উন্নয়ন। বেসরকারি খাতের বিনিয়োগ বাড়াতে হলে অবশ্যই বিদ্যুৎ, গ্যাস, পানিসহ অবকাঠামো খাতের উন্নয়ন করতে হবে। এ দিকটির প্রতি লক্ষ্য রেখে এবারের বাজেটে ভৌত অবকাঠামো খাতে বেশি গুরুত্বারোপ করা হয়েছে। মোট বরাদ্দের ৩০.৬% এ খাতে ব্যয় করার প্রস্তাব দেয়া হয়েছে। পদ্মা সেতু, মেট্রোরেল, দ্বিতীয় কাঁচপুর, দ্বিতীয় মেঘনা সেতুসহ বিভিন্ন গুরুত্বপূর্ণ প্রকল্পের কারণে পরিবহন ও যোগাযোগ খাতে আগামী অর্থবছরে ৩৫ হাজার ৯২০ কোটি টাকা বরাদ্দের প্রস্তাব দেয়া হয়েছে; যা মোট বাজেটের ১১ শতাংশ। ভৌত অবকাঠামো এবং পরিবহন খাতের প্রতি গুরুত্বারোপ প্রকাশ করছে যে, এ সরকার দেশকে শক্ত অর্থনৈতিক ভিতের ওপর দাঁড় করাতে বদ্ধপরিকর।
বর্তমানে দেশের কর্মক্ষম জনগোষ্ঠীর মাত্র ৫ শতাংশ সরকারি চাকরিতে নিয়োজিত রয়েছে। বাকি ৯৫ শতাংশের মধ্যে প্রাতিষ্ঠানিকভাবে যুক্ত, অর্থাৎ চাকরি-বাকরি করছে এমন ৮ শতাংশ শুধু গ্র্যাচুইটি সুবিধা পায়। অন্যদের জন্য পেনশন-গ্র্যাচুইটি কিছুই নেই। দেশের বেসরকারি খাতকেও পেনশনের আওতায় নিয়ে আসতে একটি সর্বজনীন পেনশনব্যবস্থা চালুর প্রস্তাব দেয়া হয়েছে। সরকারি চাকরিজীবীদের পাশাপাশি পর্যায়ক্রমে আধাসরকারি ও ব্যক্তি খাতে আনুষ্ঠানিকভাবে অংশীদারত্বের ভিত্তিতে পেনশন পদ্ধতি চালুর প্রস্তাবটি এবার বাজেটের অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণর্ একটি দিক। এতে একদিকে যেমন প্রবীণদের আর্থিক ও সামাজিক সুরক্ষা নিশ্চিত হবে, অন্যদিকে দীর্ঘমেয়াদি বিনিয়োগ চাহিদা পূরণে সহায়ক তহবিলও সৃষ্টি হবে, যাতে দেশের আর্থিক খাতের গভীরতাও নিশ্চিত হবে।
নারীর ক্ষমতায়নে এ সরকার অঙ্গীকারবদ্ধ। এ লক্ষ্যে জাতীয় বাজেটে নারীর অংশ নিশ্চিত করতে মহিলা ও শিশুবিষয়ক মন্ত্রণালয়ে বাজেট বরাদ্দ করা হয়েছে ২ হাজার ১৫০ কোটি টাকা। নারীর প্রতি সহিংসতা প্রতিরোধ, যৌন নির্যাতন, যৌন হয়রানি, নারী ও শিশু পাচার রোধে সংশ্লিষ্ট আইনের যথাযথ প্রয়োগের জন্য বাজেটে অর্থ বরাদ্দ দেয়া হয়। জাতীয় উন্নয়নে নারীকে সম্পৃক্ত করার জন্য নারীকে স্বাবলম্বী করতে ক্ষুদ্র ঋণ কার্যক্রম সম্প্রসারণের প্রতি এ বাজেটে জোর দেয়া হয়। তা ছাড়া সমাজের সুবিধাবঞ্চিত বিভিন্ন গোষ্ঠীকে নানা ধরনের ভাতা দেয়া অব্যাহত রাখা হয়েছে এ বাজেটে।
এবারের বাজেট বিশ্লেষণ করলে একটি কথাই বলা যায় বাজেট উচ্চাভিলাষী, তবে জনকল্যাণমুখী এবং বাস্তবায়নযোগ্য। শুধু দরকার সবার সহযোগিতা। বাজেটে যে বিপুল আশাবাদ ব্যক্ত করা হয়েছে, তার সবই পূরণ করা সম্ভব যদি সংশ্লিষ্ট সবাই দেশপ্রেমে বলীয়ান হয়ে দেশের তরে কাজ করে যেতে পারে। দলমতনির্বিশেষে সবাই বিরোধিতা না করে যদি বাজেট বাস্তবায়নে এ সরকারকে সহায়তা করে তবে দেশের উন্নয়ন-অগ্রগতির ধারা অব্যাহত থাকবে। উন্নত বিশ্বের কাতারে পেঁৗছার গতি ত্বরান্বিত হবে।
এবারের বাজেট সাধারণ করদাতাদের জন্য স্বস্তি নিয়ে এসেছে। স্বস্তির কারণ করমুক্ত আয়ের সীমা গত বছরের মতো আড়াই লাখ টাকায় বহাল রাখা হয়েছে। নারী ও ৬৫ বছর কিংবা এর চেয়ে বেশি বয়সের ব্যক্তিদের জন্য করমুক্ত আয়ের সীমা ৩ লাখ টাকা। এ সীমা প্রতিবন্ধী করদাতাদের ক্ষেত্রে পৌনে ৪ লাখ আর গেজেটভুক্ত যুদ্ধাহত মুক্তিযোদ্ধাদের জন্য সোয়া ৪ লাখ টাকা; যা করদাতাদের জন্য অনেকটাই স্বস্তিদায়ক।
নতুন ভ্যাট আইন এ বছর থেকে বাস্তবায়নের কথা থাকলেও ব্যবসায়ীদের বিরোধিতার মুখে এক বছরের জন্য সেখান থেকে পিছু হটলেও ভ্যাটের আওতা বাড়ানোর নানা পদক্ষেপ নেয়া হয়েছে। ক্ষুদ্র ও মাঝারি উদ্যোক্তাদের প্যাকেজ মূসক চালু রাখার উদ্যোগ সাধুবাদ পাওয়ার যোগ্য। একই ব্যক্তিমালিকানাধীন ভিন্ন ভিন্ন প্রতিষ্ঠানের জন্য আগে ভিন্ন ভ্যাট খাতে ভিন্ন নিবন্ধনের প্রয়োজন হতো। এবারে তা বন্ধ করা হয়েছে, যা ব্যবসায়ীদের হয়রানি দূর করবে। অসাধু ব্যবসায়ীদের ভ্যাট দিতে বাধ্য করতে বাজেটে নতুন বিধানের প্রস্তাব করা হয়েছে। কোনো করদাতা যদি ভ্যাট কর্তৃপক্ষের কর নির্ধারণ আদেশে সংক্ষুব্ধ হয়ে আদালতে যেতে চায় তাহলে মামলা বা আপিল দায়েরের আগেই নির্ধারিত রাজস্বের বা অর্থদ-ের ৫০ শতাংশ পরিশোধ করতে হবে। অন্যদিকে মামলাজট হ্রাস করতে বিকল্প বিরোধ নিষ্পত্তি ব্যবস্থার (এডিআর) বিধি সংশোধনের প্রস্তাব দেয়া হয়েছে। এবারের বাজেটে কোনো কোনো শিল্প খাতের কাঁচামাল আমদানি শুল্ক কমানো হয়েছে। আবার সম্পূর্ণ তৈরি কিছু পণ্যের ওপর সম্পূরক শুল্ক বাড়ানো হয়েছে, যা দেশীয় শিল্পের জন্য ইতিবাচক হবে।
পদ্মা সেতু সরকারের অন্যতম রাজনৈতিক অঙ্গীকার। শুধু পদ্মা সেতুর জন্য বরাদ্দ করা হয়েছে ৬ হাজার ২৬ কোটি ৪৮ লাখ টাকা। বাজেটে সরকার বরাবরই কৃষি খাতকে অধিক গুরুত্ব দিয়ে আসছে। প্রস্তাবিত বাজেটে কৃষি খাতে বরাদ্দ দেয়া হয়েছে ১৩ হাজার ৬৭৬ কোটি টাকা।
রেল যোগাযোগের উন্নয়নকে অগ্রাধিকার দিয়ে আগামী অর্থবছরের বাজেটে রেলপথ খাতে উন্নয়ন ও অনুন্নয়ন মিলিয়ে ১১ হাজার ৫০ কোটি টাকা বরাদ্দের প্রস্তাব করেছেন অর্থমন্ত্রী। সড়ক ও মহাসড়কে ১০ হাজার ৯১০ কোটি, নৌপরিবহনে ২ হাজার ৫৫ কোটি এবং বেসামরিক বিমান ও পর্যটন খাতে ৫৪৯ কোটি টাকার প্রস্তাব করা হয়েছে।
কিন্তু সংশয় থেকে যাচ্ছে সমস্যা চিহ্নিত করার পরবর্তীকালে সেগুলোর সমাধানে যে পথনির্দেশনা দেয়া হচ্ছে, তা বাস্তবায়নের কৌশলের যথাযথতা নিয়ে। সেই সঙ্গে প্রাতিষ্ঠানিক দক্ষতার প্রয়োজনকে স্বীকার করে বিগত বছরে প্রতিশ্রুত পদক্ষেপ বাস্তবায়নের প্রতিবেদনটি এবারো দিলে দেখা যেত যে এ ক্ষেত্রে অগ্রগতি অনেক কম। তবে উৎপাদনশীলতা বৃদ্ধির ইস্যুটিকে বিশেষভাবে চিহ্নিত করে আলাদা একটি প্রতিবেদন উপস্থাপন করাটা ইতিবাচক।
বাজেটে অর্থমন্ত্রীর জন্য সবচেয়ে বড় চ্যালেঞ্জ হলো বিনিয়োগ বাড়ানো। আর এজন্য প্রয়োজন পরিবেশ ঠিক রাখা। দরকার ব্যবসা পরিচালনার ব্যয় কমিয়ে আনা। এ ক্ষেত্রে যোজন যোজন দূরে বাংলাদেশ। বিশ্বব্যাংকের জরিপ তাই বলছে।
বাজেট ঘোষণার পর বিভিন্ন জিনিসের দাম বেড়ে যায়, একে ভিত্তিহীন উল্লেখ করে মুহিত আরো বলেন, তেলের দাম বিশ্বজুড়ে কমেছে। প্রতিটি পণ্যের দাম বিশ্বজুড়ে কমছে। সেগুলোর দাম বাজেটের পর বেড়ে যাওয়ার কোনো সুযোগ নেই।
বেসরকারি খাতে পেনশন চালুর পরিকল্পনার বিষয়ে জানতে চাইলে তিনি বলেন, ‘মানুষের সামাজিক নিরাপত্তার কথা চিন্তা করে আমরা এ পরিকল্পনা গ্রহণ করেছি। তবে সময় লাগবে। এটা প্রাথমিক পর্যায়ে আছে। কিন্তু ক্ষমতায় থাকাকালেই আমরা এ প্রক্রিয়া শুরু করব। এখানে ব্যক্তি নিজের থেকে কিছু টাকা দেবেন আর প্রতিষ্ঠানও কিছু দেবে। এর সমন্বয়ে পেনশন সুবিধা দেয়া হবে।’
অর্থমন্ত্রীর বক্তৃতা ও উপস্থাপনা থেকে মনে হয়েছে, বাংলাদেশের অর্থনীতিতে মূল যেসব সমস্যা ও চ্যালেঞ্জ রয়েছে, সেগুলো সম্পর্কে তিনি সম্পূর্ণ অবহিত। চ্যালেঞ্জগুলো মোকাবেলার জন্য যে পথগুলো বাজেট বক্তৃতায় উল্লেখ করা হয়েছে, সেগুলোর সঙ্গেও মোটা দাগে সহমত পোষণ করছি। অর্থাৎ, সাম্প্রতিক অর্থনৈতিক চ্যালেঞ্জ মোকাবেলা করে বাংলাদেশকে সামনের দিকে এগিয়ে নেয়ার বিষয়ে তার চিন্তাধারা গ্রহণযোগ্য বলে মনে করছি।
আরিফুর সবুজ: কলাম লেখক