সৌদি আরবে এখন ২০ লাখের বেশি বাংলাদেশি বিভিন্ন শ্রমে নিয়োজিত। সৌদি আরবের শ্রমমন্ত্রী সে দেশে সফররত বাংলাদেশের প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনাকে জানিয়েছেন_ আরও পাঁচ লাখ কর্মী তারা বাংলাদেশ থেকে নিতে চান। এতে দক্ষ-অদক্ষ সব ধরনের কর্মীই থাকবে। একই সঙ্গে উভয়পক্ষ চাইছে কর্মীদের রিত্রুক্রটমেন্ট ব্যয় কমে আসুক। আমাদের শ্রমবাজারের প্রেক্ষাপট বিবেচনায় এসব দারুণ খবর। প্রধানমন্ত্রী সৌদি মন্ত্রীর সঙ্গে আলোচনাকালে বলেছেন, ‘দয়া করে কর্মী রিত্রুক্রট প্রক্রিয়ায় মধ্যস্বত্বভোগীদের শোষণ করতে দেবেন না।’ সৌদি শ্রমমন্ত্রী ড. মোফারেজ আল-হকুবানির কাছ থেকে উৎসাহব্যঞ্জক জবাব এসেছে_ ‘সৌদি আরব শ্রমিকদের স্বার্থ রক্ষাকে দায়িত্ব মনে করে।’ আমাদের জনশক্তি রফতানি প্রক্রিয়ায় যুক্তদের সংগঠন বায়রা এবং সংশ্লিষ্ট সব সরকারি-বেসরকারি প্রতিষ্ঠান এসব বিবেচনায় রাখতে হবে। মধ্যপ্রাচ্যের শ্রমবাজার এখন প্রতিযোগিতাপূর্ণ। সৌদি আরবের অর্থনীতিতেও চলছে ব্যাপক পরিবর্তন। তেলের দাম কমে যাওয়ার কারণে রাজস্ব আয় বিপুলভাবে কমে গেছে। এ কারণে তারা তেল-নির্ভরতা থেকে বের হয়ে অন্য খাতে বিনিয়োগে মনোযোগ দিচ্ছে। বলা যায়, ব্যয়ের ব্যাপারে সৌদি সরকার এখন অনেক হিসাবি। সম্প্রতি সৌদি সুরা কাউন্সিল প্রবাসীদের আয়ের ওপর কর আরোপের সুপারিশ করেছে। বিদেশি কর্মীরা যেন তাদের আয়ের উল্লেখযোগ্য অংশ সৌদি আরবে ব্যয় করে, সে কথাও বলা হচ্ছে। এ অবস্থায় আমাদের কর্মীদের সৌদি আরব ও অন্যান্য দেশে নিয়োগ প্রক্রিয়ায় ব্যয় কমানোর বিকল্প নেই। সৌদি আরব নতুন করে চিকিৎসক, প্রকৌশলী ও শিক্ষক নিতেও আগ্রহী। একই সঙ্গে আরও একটি বিষয় তারা জোর দিচ্ছে_ সাধারণ কর্মীদের যতটা সম্ভব দক্ষ করে পাঠানো। প্রধানমন্ত্রীও বিষয়টিকে গুরুত্ব দিয়েছেন। যেসব নারী কর্মী গৃহস্থালি কাজের জন্য সেখানে যাবেন, তাদের স্বল্পমেয়াদি প্রশিক্ষণের ব্যবস্থা করা হয়েছে। অচিরেই এ প্রশিক্ষণের মেয়াদ বাড়ানো হবে। তিনি একই সঙ্গে সৌদি কর্তৃপক্ষকে জানিয়েছেন_ বাংলাদেশ সেনাবাহিনীর নির্মাণ ব্যাটালিয়ন ও ইঞ্জিনিয়ারিং ইউনিটও সৌদি আরবের উন্নয়ন কর্মকাণ্ডে অবদান রাখতে পারে। তার সফরকালে বাংলাদেশে সৌদি আরবের প্রত্যক্ষ বিনিয়োগের বিষয়টিও গুরুত্ব পেয়েছে। এ ধরনের পদক্ষেপ আমাদের অভ্যন্তরীণ চাহিদা যেমন মেটাতে পারবে, তেমনি রফতানি খাতও পাবে নতুন পণ্য। শ্রমবাজারের ওপর যে চাপ, সেটা কমিয়ে আনতেও এ ধরনের প্রত্যক্ষ বিনিয়োগ অপরিহার্য। বলা যায়, প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার সৌদি আরব সফরের মধ্য দিয়ে আমাদের অর্থনীতির জন্য নতুন সম্ভাবনা সৃষ্টি হয়েছে। এর ধারাবাহিকতায় অচিরেই যথাযথ ও পরিকল্পিত পদক্ষেপ গ্রহণ করা হবে, এটাই প্রত্যাশিত।