বিশ্বশান্তি ও উন্নয়নে একসঙ্গে কাজ করার অঙ্গীকার

সৌদি বাদশাহর সঙ্গে শেখ হাসিনার বৈঠক

বাংলাদেশ এবং সৌদি আরব বিশ্বশান্তি, উন্নয়ন এবং মুসলিম উম্মাহর বৃহত্তর কল্যাণে একযোগে কাজ করার অঙ্গীকার করেছে। প্রধানমন্ত্রী এবং সৌদি বাদশাহ বৈঠকে উন্নয়ন, ব্যবসা-বাণিজ্য এবং জনগণের সঙ্গে জনগণের যোগাযোগ বৃদ্ধির ক্ষেত্রে দু’দেশের মধ্যে বিদ্যমান সম্ভাবনাগুলোকে খতিয়ে দেখার বিষয়েও একমত হন।

রোববার বিকালে জেদ্দার আন্দালুসে বাদশাহর আল সালাম প্রাসাদে সফররত বাংলাদেশের প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা এবং সৌদি বাদশাহ সালমান বিন আবদুল আজিজ আল সৌদের মধ্যে অনুষ্ঠিত দ্বিপাক্ষিক বৈঠকে এই ঐকমত্য হয়। বৈঠকের পরে পররাষ্ট্র সচিব মো. শহীদুল হক এবং প্রধানমন্ত্রীর প্রেস সচিব ইহসানুল করিম সাংবাদিকদের অবহিত করেন। তারা জানান, প্রায় ঘণ্টাকালব্যাপী অন্তরঙ্গ পরিবেশে অনুষ্ঠিত আলোচনায় দ্বিপাক্ষিক স্বার্থ-সংশ্লিষ্ট সব বিষয়, আঞ্চলিক এবং আন্তর্জাতিক বিষয় নিয়ে আলোচনা হয়।

প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বর্তমানে বাদশাহ সালমান বিন আবদুল আজিজ আল সৌদের আমন্ত্রণে ৫ দিনের সরকারি সফরে সৌদি আরবে অবস্থান করছেন।

আইডিবির সুদের হার কমানোর অনুরোধ : প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা দেশের তেল আমদানিতে দেয়া ইসলামী উন্নয়ন ব্যাংক (আইডিবি)-এর স্বায়ত্তশাসিত প্রতিষ্ঠান ইন্টারন্যাশনাল ইসলামিক ট্রেড ফাইন্যান্স কর্পোরেশন (আইটিএফসি)-এর সুদের হার আরও হ্রাস করে তা ‘প্রতিযোগিতামূলক’ করার জন্য আইডিবির প্রতি অনুরোধ জানিয়েছেন। আইডিবির ভারপ্রাপ্ত প্রেসিডেন্ট ড. আহমেদ তিকতিক শনিবার সন্ধ্যায় রয়েল কনফারেন্স প্যালেসে তার সঙ্গে সাক্ষাৎ করতে এলে প্রধানমন্ত্রী এ অনুরোধ জানান।

বৈঠকের পরে পররাষ্ট্র সচিব শহিদুল হক এবং প্রধানমন্ত্রীর প্রেস সচিব ইহসানুল করিম সাংবাদিকদের এ কথা জানান। শরীয়াহ সম্মত অর্থায়নে শীষস্থানীয় প্রতিষ্ঠান আইটিএফসি-এর সদস্য দেশগুলোর সরকারকে ব্যবসার জন্য পরামর্শ ও তহবিল দিয়ে সহযোগিতা করে থাকে। এর প্রাথমিক লক্ষ্য হচ্ছে ওআইসি’র সদস্য দেশগুলোর মধ্যে আন্তঃবাণিজ্য উৎসাহিত করা। আইডিবির সদস্য দেশ হিসেবে বাংলাদেশ তেল আমদানির জন্য আইটিএফসি থেকে ঋণ নিয়ে থাকে।

আইডিবির ভারপ্রাপ্ত প্রেসিডেন্ট প্রধানমন্ত্রীকে জানান যে, আইডিবি মুসলিম দেশগুলোতে বড় ধরনের অবকাঠামো নির্মাণ প্রকল্পে অর্থায়নের লক্ষ্যে একটি ইসলামী ইনফ্রাস্টাকচার ব্যাংক গঠনের উদ্যোগ গ্রহণ করেছে। জবাবে শেখ হাসিনা এ ধরনের একটি উদ্যোগে অংশ নিতে তার দেশের আগ্রহের কথা ব্যক্ত করেন।

প্রধানমন্ত্রীকে বিভিন্ন বিষয়ে অবহিত করে ড. আহমেদ তিকতিক বলেন, আইডিবি বাংলাদেশে এর সহযোগিতা জোরদার করার লক্ষ্যে একটি নতুন গেটওয়ে অফিস খুলতে যাচ্ছে। তিনি বলেন, আইডিবি জ্বালানি, গ্রামীণ গৃহায়ন ও সড়ক প্রকল্পকে অগ্রাধিকার দিয়ে বাংলাদেশে এর কার্যক্রম অব্যাহত রেখেছে। আইডিবি ভারপ্রাপ্ত সভাপতি বলেন, সিডোর ও আইলা দুর্গত দেশের দক্ষিণাঞ্চলের ১৩ জেলায় কিং আবদুল্লাহ ইন্টারন্যাশনাল হিউম্যানেটারিয়ান চ্যারিটেবল ফাউন্ডেশন প্রদত্ত ১৩ কোটি ডলার ব্যয়ে ‘ফায়েল খায়ের’ কর্মসূচির আওতায় নির্মাণাধীন ১৭৩টি স্কুল-কাম-সাইক্লোন শেল্টারের মধ্যে ৯০টির কাজ ইতিমধ্যেই শেষ হয়েছে।

ডা. আহমেদ তিকতিক প্রধানমন্ত্রীকে জানান যে, আইডিবি আগামী বছরের মধ্যে বাংলাদেশের প্রত্যন্ত গ্রামাঞ্চলে চিকিৎসা সেবা সহজতর করে তোলার লক্ষ্যে ১০টির মতো মোবাইল ক্লিনিক স্থাপন করবে।

আইডিবি ভারপ্রাপ্ত সভাপতিকে বাংলাদেশ উন্নয়নের মডেল তুলে ধরে শেখ হাসিনা বলেন, বাংলাদেশ ৭ দশমিক ০৫ শতাংশ জিডিপি প্রবৃদ্ধি অর্জনের পাশাপাশি এর বাজেট আকার বেশ কয়েকগুণ বাড়িয়েছে। পররাষ্ট্রমন্ত্রী এ এইচ মাহমুদ আলী ও প্রধানমন্ত্রীর মুখ্য সচিব মো. আবুল কালাম আজাদ অনুষ্ঠানে উপস্থিত ছিলেন।