বাজেটে সুফল পাবে প্রকৌশল খাতের অধিকাংশ কোম্পানি

২০১৬-১৭ অর্থবছরের প্রস্তাবিত বাজেটে শেয়ারবাজারে তালিকাভুক্ত কোম্পানিগুলোর মধ্যে সবচেয়ে বেশি সুফল পাচ্ছে ইস্পাত খাত। বিলেট, রড, মিশ্র ইস্পাত পাতসহ বিভিন্ন লৌহজাত কাঁচামাল আমদানিতে বিভিন্ন পরিমাণের শুল্ক ও ভ্যাট আরোপ করায় বিএসআরএম ও জিপিএইচ ইস্পাতের মতো কোম্পানিগুলো সুরক্ষা পাবে। এছাড়া মোটরসাইকেল সংযোজন যন্ত্রপাতি আমদানিতে সম্পূরক শুল্ক কমানোয় এটলাস ও সিঙ্গারের উত্পাদন খরচ কমবে। অর্থমন্ত্রী আবুল মাল আবদুল মুহিতের আসন্ন অর্থবছরের বাজেট বক্তব্য পর্যালোচনা করে এ তথ্য পাওয়া গেছে।

জানা গেছে, দেশে তালিকাভুক্ত কোম্পানিগুলোর মধ্যে রডের কাঁচামাল বিলেট উত্পাদন করে বিএসআরএম ও জিপিএইচ ইস্পাত। এ দুটি গ্রুপের কোম্পানি বিদেশ থেকে স্ক্র্যাপ লোহা আমদানি করে বিলেট উত্পাদন করে। এক্ষেত্রে বিভিন্ন ধরনের রড উত্পাদনে অন্য ইস্পাত কোম্পানির চেয়ে বিএসআরএম ও জিপিএইচ ইস্পাত কিছুটা সুবিধাজনক অবস্থায় রয়েছে। যদিও বিএসআরএম গ্রুপভুক্ত দুই প্রতিষ্ঠান বিএসআরএম লিমিটেড ও বিএসআরএম স্টিল মিলসকে নিজস্ব চাহিদা মেটাতে কিছু বিলেট আমদানি করতে হয়। অন্যদিকে চ্যালেঞ্জের মুখে পড়তে পারে রতনপুর স্টিল মিলস (আরএসআরএম) লিমিটেড। কোম্পানিটি পণ্য উত্পাদনে আমদানিকৃত বিলেটের ওপরই নির্ভরশীল।

বর্তমানে বিলেট আমদানিতে প্রতি মেট্রিক টনে ৭ হাজার টাকা শুল্ক আরোপ রয়েছে। ২০১৬-১৭ অর্থবছরের প্রস্তাবিত বাজেটে এটি প্রত্যাহার করে প্রতি টনে ২০ শতাংশ নিয়ন্ত্রণমূলক শুল্ক ও ১৫ শতাংশ ভ্যাট আরোপ করা হয়েছে। এ শিল্পসংশ্লিষ্ট ব্যবসায়ীরা বলছেন, প্রস্তাবিত শুল্ক ও ভ্যাটে আমদানির ক্ষেত্রে প্রতি টন বিলেটে প্রায় ১২ হাজার টাকা শুল্ক ও ভ্যাট হিসেবে দিতে হবে, যা বর্তমানের চেয়ে ৫ হাজার টাকা বেশি। এছাড়া বিভিন্ন বার ও রড, নন অ্যালয় স্টিল ইত্যাদি আমদানির ক্ষেত্রে বর্তমানে কোনো সম্পূরক শুল্ক না থাকলেও প্রস্তাবিত বাজেটে ২০ শতাংশ সম্পূরক শুল্ক আরোপ করা হয়েছে। এসব কারণে কাঁচামাল আমদানিনির্ভর প্রতিষ্ঠানগুলোর তুলনায় কিছুটা সুবিধা পেতে পারে বিএসআরএম গ্রুপ ও জিপিএইচ ইস্পাত।

এ বিষয়ে জিপিএইচ গ্রুপ চেয়ারম্যান ও জিপিএইচ ইস্পাতের ব্যবস্থাপনা পরিচালক জাহাঙ্গীর আলম বণিক বার্তাকে বলেন, সম্প্রতি যুক্তরাষ্ট্র ও ভারতের মতো দেশে দেশীয় ইস্পাত শিল্প সুরক্ষায় কঠোর পদক্ষেপ নিয়েছে। তবে এবারই প্রথম দেশে এ ধরনের উদ্যোগ নেয়া হলো, যা নিঃসন্দেহে দেশীয় শিল্পকে সুরক্ষা দেবে।

তিনি বলেন, স্ক্র্যাপ লোহা আমদানি করে বিভিন্ন প্রক্রিয়ার মধ্য দিয়ে আমরা বিলেট উত্পাদন করি। আর স্ক্র্যাপ লোহা ও বিলেটের মূল্যে প্রায় ১২০ ডলারের ব্যবধান রয়েছে। বিলেট আমদানিতে নিয়ন্ত্রণমূলক শুল্ক ও ভ্যাট আরোপ করায় বিপুল পরিমাণের বৈদেশিক মুদ্রার সাশ্রয় হবে।

তবে এ বিষয়ে দ্বিমত পোষণ করেছেন বিএসআরএম গ্রুপের নির্বাহী পরিচালক তপন চৌধুরী। তিনি বলেন, এটি খুবই অযৌক্তিক। শুল্ক বাড়ানোর বিষয়টিতে আমাদের প্রতিষ্ঠানের জন্য তেমন কোনো ক্ষতিকর না হলেও এতে একচেটিয়া বাজার সৃষ্টি হবে।

তিনি আরো বলেন, রডের কাঁচামাল হচ্ছে বিলেট। এর ওপর শুল্ক ও ভ্যাট আরোপ করায় ছোট প্রতিষ্ঠানগুলো বন্ধ হয়ে যাবে, যা দেশের জন্য ক্ষতিকারক। মূলত একটি বিশেষ মহলকে সুবিধা দেয়ার জন্যই বিলেটের আমদানি পর্যায়ে শুল্ক আরোপ করা হয়েছে।

এদিকে মিশ্র ইস্পাত পাত ও এ ধরনের প্রায় সমাপ্ত পণ্যে ২০ শতাংশ নিয়ন্ত্রণমূলক শুল্ক আরোপ করায় সিআই শিট উত্পাদনকারী প্রতিষ্ঠানগুলোর উত্পাদন খরচ বাড়বে। শেয়ারবাজারে তালিকাভুক্ত সিআই শিট উত্পাদনকারী প্রতিষ্ঠানগুলোর মধ্যে রয়েছে অ্যাপোলো ইস্পাত কমপ্লেক্স ও এস আলম কোল্ড রোল স্টিল মিলস।

তালিকাভুক্ত কোম্পানিগুলোর মধ্যে মোটরসাইকেলের যন্ত্রাংশ আমদানি ও তা সংযোজন করে দেশে বাজারজাত করে এটলাস বাংলাদেশ ও সিঙ্গার। মোটরসাইকেল সংযোজন যন্ত্রপাতি (সিকেডি) আমদানিতে সম্পূরক শুল্ক কমানোয় এটলাস ও সিঙ্গারের উত্পাদন খরচ কমবে। আমদানি করা যন্ত্রাংশের ওপর বর্তমানে আরোপ করা সম্পূরক শুল্ক ৪৫ শতাংশ থেকে কমিয়ে ২০ শতাংশে নামিয়ে আনার প্রস্তাব দিয়েছেন অর্থমন্ত্রী। আবার রফতানিমুখী শিল্পে প্রি-ফেব্রিকেটেড বিল্ডিং তৈরির উপকরণে শুল্ক রেয়াত দেয়া হয়েছে। এতে এ শিল্পের তালিকাভুক্ত কোম্পানি বিবিএস লাভবান হবে।