কঠোর অবস্থানে শেখ হাসিনা

আমলাতান্ত্রিক দুর্নীতি দমন আর দলের চেইন অব কমান্ড ঠিক রাখতে এবার কঠোর হচ্ছেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। এজন্য দলটির সিনিয়র বেশ কয়েকজন নেতা কাজ করছেন বলেও জানা গেছে। শুধু তাই নয়, যে কোনো পরিস্থিতিতে দল যেন সুসংগঠিত থাকে, এজন্য দলটির সিনিয়র নেতাদের উদ্যোগ নিতে নির্দেশ দিয়েছেন প্রধানমন্ত্রী।

তৃণমূলে সাংগঠনিক ক্ষমতা অর্জনের পাশাপাশি সরকারের বিভিন্ন প্রশাসনিক বিভাগের দুর্নীতির লাগাম টানতে বেশ কিছু পদক্ষেপ নেওয়া হয়েছে বলেও জানা গেছে। ইতোমধ্যে দুর্নীতি দমন কমিশনকেও সক্রিয় করা হয়েছে প্রধানমন্ত্রীর ইচ্ছায়। পুনর্গঠন করা হয়েছে দুর্নীতি দমন কমিশনের জনবল কাঠামোও।

প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার গ্রিন সিগন্যালের পরই বদলে গেছে দুর্নীতি দমন কমিশন (দুদক)-এর চিত্র। সারাদেশে গত কয়েক দিনে প্রায় ৩০ প্রভাবশালী সন্দেহভাজন দুর্নীতিবাজকে গ্রেফতার করেছে দুদক।

প্রধানমন্ত্রী দুর্নীতিবাজদের ছাড় দেবেন না- এমন মনোভাব জানার পর গ্রেফতারকৃতরা প্রভাবশালী হওয়ার পরও তাঁদের ছাড়িয়ে নিতে কোনো নেতাকর্মীকে তদবির করতে দেখা যায়নি।

জানা গেছে, দেশের বেশ কয়েকটি জেলায় সংখ্যালঘু নির্যাতন, সংখ্যালঘুদের বাড়িঘরে আগুন দেওয়া, জমি দখল, সংখ্যালঘু পরিবারকে হুমকি-ধমকির ঘটনায় ক্ষমতাসীন দলের বেশ কয়েকজন নেতাকর্মী ও সাংসদের নাম গণমাধ্যমে উঠে আসায় প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা প্রচন্ড ক্ষোভ প্রকাশ করেছেন।

শুধু তাই নয়, ক্ষমতাসীন আওয়ামী লীগের আশীর্বাদপুষ্ট নারায়ণগঞ্জের জাপা সংসদ সদস্য সেলিম ওসমান কর্তৃক প্রধান শিক্ষক শ্যামল ক্লান্তি ভক্তকে কান ধরে উঠবস করানোর ঘটনায় প্রধানমন্ত্রী ওসমান পরিবারের ওপর চটেছেন বলেও জানা গেছে।

ওসমান পরিবার এখন আর আওয়ামী লীগের সম্পদ নয়, বোঝা-প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার এমন মন্তব্যও দেশের প্রথম সারির বেশ কয়েকটি গণমাধ্যমে প্রকাশিত হয়েছে। জানা গেছে, দশম সংসদের সদস্যদের আমলনামা প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা নিজেই যাচাই-বাছাই করছেন।

দলটির সহ-সম্পাদকসহ বেশ কয়েকজন নেতার কর্মকান্ডও আওয়ামী লীগকে করেছে বিব্রত। সরকারি প্রকল্পের উন্নয়ন কর্মকান্ডের টাকার যেন সঠিক ব্যবহার হয়, এজন্য জেলা প্রশাসকদের নজরদারি করতে বিশেষ নির্দেশ দেওয়া হয়েছে বলেও জানা গেছে।

এজন্য দলের হাইকমান্ডের কাছে দলের এবং সরকারের কোনো অনিয়ম ও দুর্নীতি সহ্য করবেন না বলে নিজের অবস্থানের কথা সাফ জানিয়ে দিয়েছেন প্রধানমন্ত্রী। জানা গেছে, প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার ইচ্ছায় ক্ষমতাসীন আওয়ামী লীগ তথা সরকারের সব কর্মকান্ড, এমনকি প্রচার পর্যন্ত ডিজিটাল করা হয়েছে।

এর ফলে প্রতিদিনের সব তথ্য প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার কাছে পাঠাচ্ছে সরকারের গোয়েন্দা সংস্থাগুলো। সংসদের প্রতি সাংসদ থেকে শুরু করে মন্ত্রীরা কে কি করছেন, সে বিষয়েও প্রধানমন্ত্রীর কাছে নিয়মিত তথ্য দেওয়া হচ্ছে বলে জানা গেছে। আওয়ামী লীগের বিশ্বস্ত সূত্রে এমন খবরের সত্যতা পাওয়া গেছে।

জানা গেছে, সরকারের সঙ্গে যেসব নেতাকর্মী সরাসরি যুক্ত, তাঁদের পাশাপাশি দলের সাংগঠনিক পদ-পদবি ভোগ করেন- এমন নেতাদের গণমাধ্যমে অতিকথন না করতে বিশেষভাবে নিষেধ করা হয়েছে। পাশাপাশি ব্যক্তিজীবনে কোনো ধরনের অপ্রীতিকর ঘটনার জন্ম না দিতে সতর্ক করা হয়েছে নেতাকর্মীদের।

আওয়ামী লীগের আসন্ন সম্মেলনকে কেন্দ্র করে দলে কোনো ধরনের অসন্তোষ থাকুক, তাও চান না প্রধানমন্ত্রী। এজন্য দলে বিশৃঙ্খলা যেন কোনোভাবেই না ঘটে, সিনিয়র নেতাদের সেদিকে সতর্ক দৃষ্টি রাখতে নির্দেশ দিয়েছেন তিনি। মতপ্রকাশের স্বাধীনতার নামে দলের সাংসদের কথাবার্তায় যেন কোনোভাবেই দল বিব্রত না হয়, সেদিকে নজর রাখতে সবাইকে অনুরোধ করা হয়েছে।

জানা গেছে, প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা দল ও সরকারের মধ্যে জবাবদিহিতামূলক কর্মকান্ড চালু করতে চান। এজন্য প্রতিটি কাজ যেন স্বচ্ছতার সঙ্গে হয়, এজন্য দলের ভেতর থেকেই তিনি শুদ্ধি অভিযান শুরু করতে চান। এজন্য আসন্ন সম্মেলনে দলের কেন্দ্রীয় নেতৃত্বে আওয়ামী লীগ, যুবলীগ ও ছাত্রলীগের ত্যাগী এবং জনপ্রিয়তা নেতাদের ঠাঁই দেওয়া হতে পারে বলে জানা গেছে।

আওয়ামী লীগের একটি সূত্র জানিয়েছে, প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা সরকারের নেওয়া বিভিন্ন প্রকল্পের কাজ সঠিকভাবে হচ্ছে কি-না, তাও নিজে যাচাই-বাছাই করছেন। যেসব কর্মকর্তার বিরুদ্ধে দায়িত্বে অবহেলার অভিযোগ পাওয়া যাবে, তাদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নিতে ইতোমধ্যে নির্দেশ দিয়েছেন।

এ বিষয়ে আওয়ামী লীগ প্রেসিডিয়াম সদস্য ও সেতুমন্ত্রী ওবায়দুল কাদের বলেছেন, সম্মেলনে দলের বেশকিছু সংস্কার হবে। কমানো হবে সহ-সম্পাদকের পদসংখ্যা। কারণ সহ-সম্পাদকদের ভিড়ে কোনো কাজই করা যাচ্ছে না।

তিনি বলেন, দুর্নীতিবাজদের কোনো ছাড় দেওয়া হবে না। প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বেশ কয়েকজন সাংসদের আচরণের কারণে বিব্রত। এজন্যই শ্যামল কান্তি ভক্তকে দ্রুত প্রধানমন্ত্রীর নির্দেশে পুনর্বহাল করা হয়েছে।

আওয়ামী লীগের সাংগঠনিক সম্পাদক আহম্মদ হোসেন ভোরের পাতাকে বলেন, ‘দুর্নীতিবাজরা কোনো দলের নয়। তেমনি যেসব এমপির কারণে দলকে বিব্রত হতে হয়, তাঁদের বিরুদ্ধেও ব্যবস্থা নেওয়া হচ্ছে এবং হবে।’

তিনি বলেন, ‘প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা আমলাতান্ত্রিক দুর্নীতি রোধ করতে ব্যাপক উদ্যোগ নিয়েছেন। এজন্য দুর্নীতি অনেকাংশেই কমে আসবে। দুদককে সক্রিয় করায় দুর্নীতিবাজরা আতঙ্কে থাকবে।’