২০১০ সালে বাংলাদেশের ৫৪ দশমিক ৬ শতাংশ মানুষ বিদ্যুতের আলো ব্যবহারের সুযোগ পেতেন। কয়েক বছর ধরে জাতীয় বাজেটে বিদ্যুৎ খাত সর্বোচ্চ অগ্রাধিকার পাওয়ায় এর হার এখন ৬৭ দশমিক ৮ শতাংশ। ২০২১ সালের মধ্যে প্রতি ঘরে বিদ্যুৎ পৌঁছে দেয়ার প্রতিশ্রুতি পূরণের পথ এখনও বহুদূর। ৩২ ভাগের বেশি মানুষ এখনও বিদ্যুৎ সুবিধার বাইরে। আর বিদ্যুৎবঞ্চিত এসব মানুষের অবস্থান পল্লী অঞ্চলে। এ অবস্থায় পল্লী এলাকায় নতুন করে ২৫ লাখ পরিবারকে বিদ্যুতের সুবিধায় আনা হচ্ছে। এ বিষয়ে একটি উন্নয়ন প্রকল্প জাতীয় অর্থনৈতিক পরিষদ নির্বাহী কমিটির (একনেক) চূড়ান্ত অনুমোদনের অপেক্ষায় রয়েছে। আজ এনইসি সম্মেলন কক্ষে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার সভাপতিত্বে অনুষ্ঠিতব্য বৈঠকে প্রকল্পটি উপস্থাপনের কথা রয়েছে।
বিদ্যুৎ বিভাগ সূত্র জানায়, নতুন সংযোগ দিতে এবার অভিনব পথে হাঁটছে সরকার। সাধারণত নতুন গ্রাহককে সংযোগ দিতে দীর্ঘ সঞ্চালন ও বিতরণ লাইন স্থাপন করা হয়। স্থাপন করা হয় উপকেন্দ্র। তবে এ দফায় ২৫ লাখ গ্রাহকের জন্য নতুন কোনো লাইন নির্মাণ করা হবে না। বিদ্যমান বিতরণ লাইনের আওতায় রয়েছেÑ এমন পরিবারকে বিদ্যুৎ দেয়া হবে প্রকল্পের আওতায়। লক্ষ্য অর্জনে বিদ্যুতের ২৫ লাখ মিটার কেনা হবে। কেনা হবে কিছু ট্রান্সফরমার। পরিকল্পনা কমিশন সূত্র জানায়, পল্লী বিদ্যুতায়ন সম্প্রসারণের মাধ্যমে ২৫ লাখ গ্রাহক সংযোগ প্রকল্প বাস্তবায়নে ব্যয় হবে ১ হাজার ২৩২ কোটি টাকা। প্রকল্প ব্যয়ের ৪৬১ কোটি ২০ লাখ টাকা বহন করা হবে সরকারের নিজস্ব তহবিল থেকে। আর বিদেশি উৎস থেকে ঋণ নেয়া হবে ৭৭১ কোটি ৪০ লাখ টাকা। বাংলাদেশ পল্লী বিদ্যুতায়ন বোর্ডের ৭৭টি পল্লী বিদ্যুৎ সমিতি দেশজুড়ে প্রকল্পটি বাস্তবায়ন করবে। এর কাজ শেষ করা হবে আগামী বছরের জুন মাসে।
এ বিষয়ে বিদ্যুৎ বিভাগের সচিব মনোয়ারুল ইসলাম বলেন, সপ্তম পঞ্চবার্ষিক পরিকল্পনায় ৭০ লাখ নতুন গ্রাহককে বিদ্যুৎ সংযোগ দেয়ার কথা রয়েছে। এ লক্ষ্য অর্জনে প্রকল্পটি হাতে নেয়া হচ্ছে। ২৫ লাখ গ্রাহককে বিদ্যুৎ সংযোগ দিলে সামাজিক ও আর্থিক খাতে ইতিবাচক প্রভাব পড়বে। তিনি জানান, এরই মধ্যে ১৫ লাখ গ্রাহককে বিদ্যুতের আওতায় আনতে পৃথক প্রকল্প নেয়া হয়েছে। তিনি জানান, প্রকল্পটির আওতায় ৬৫ হাজার ট্রান্সফরমার কেনা হবে। কেনা হবে ২৫ লাখ মিটার। বাংলাদেশ পল্লী বিদ্যুতায়ন বোর্ড সূত্র জানায়, বর্তমানে বিভিন্ন সমিতির আওতায় বোর্র্ড ২ লাখ ৯৫ হাজার ৫৪১ কিলোমিটার লাইনের মাধ্যমে প্রায় দেড় কোটি গ্রাহককে বিদ্যুৎ সেবা দিচ্ছে। সম্প্রতি একটি সমীক্ষায় দেখা গেছে, নতুন লাইন নির্মাণ না করে শুধু ট্রান্সফরমার স্থাপন করেই ২৫ লাখ গ্রাহককে বিদ্যুতের আওতায় আনা সম্ভব।
প্রসঙ্গত, ২০২১ সালের মধ্যে বাংলাদেশকে মধ্যম আয়ে নিয়ে যেতে চায় সরকার। অর্থনৈতিক প্রবৃদ্ধির সঙ্গে বিদ্যুতের চাহিদাও বাড়বে। ২০২১ সালে ২৪ হাজার মেগাওয়াট বিদ্যুতের প্রয়োজন হবে। ২০৪১ সালে চাহিদা উন্নীত হবে ৬০ হাজার মেগাওয়াটে। বর্তমানে বিদ্যুতের উৎপাদন ক্ষমতা ১০ হাজার মেগাওয়াটের কাছাকাছি। চাহিদার সঙ্গে সঙ্গতি রেখে উৎপাদন বাড়ানোর পাশাপাশি সঞ্চালন ও বিতরণ ব্যবস্থার উন্নয়নে বেশ কয়েকটি প্রকল্প চলমান রয়েছে।