সুদমুক্ত গৃহনির্মাণ ঋণ পাবেন মুক্তিযোদ্ধারা

অন্যান্য সুবিধার পাশাপাশি এবার মুক্তিযোদ্ধাদের জন্য গৃহায়ন কার্যক্রম হাতে নিচ্ছে সরকার। তাদের সুদমুক্ত বিশেষ ঋণ দেয়া হবে। এজন্য এ খাতে ১৫ হাজার ৩ কোটি টাকা ব্যয় করা হবে। মুক্তিযোদ্ধাদের সম্মানী থেকে মাসিক ভিত্তিতে ঋণের টাকা কেটে নেয়া হবে। তবে বিশাল এই কর্মযজ্ঞ সম্পর্কে মুক্তিযুদ্ধবিষয়ক মন্ত্রণালয়ের কর্মকর্তারা কিছুই জানেন না বলে জানা গেছে। মুক্তিযুদ্ধবিষয়ক মন্ত্রণালয়ের এক শীর্ষ কর্মকর্তা জানান, এ ব্যাপারে তাদের কেউ জানায়নি।
জানা গেছে, বাংলাদেশ ব্যাংকের মহাব্যবস্থাপক আবু ফরাহ মোঃ নাসের ১৩ এপ্রিল ব্যাংক ও আর্থিক প্রতিষ্ঠান বিভাগের সচিবের কাছে লেখা চিঠিতে মুক্তিযোদ্ধাদের জন্য বিশেষ ব্যবস্থায় বিনাসুদে গৃহনির্মাণ ঋণ সুবিধা প্রবর্তনের জন্য কার্যকর ব্যবস্থা নিতে অনুরোধ করেন। ওই চিঠিতে বলা হয়, মুক্তিযোদ্ধারা দেশ ও জাতির শ্রেষ্ঠ সন্তান। জীবনকে তুচ্ছজ্ঞান করে তারা আমাদের স্বাধীন দেশ ও একটি লাল-সবুজ পতাকা উপহার দিয়েছেন। দেশে বর্তমানে ১ লাখ ৭৬ হাজার ২০৭ জন ভাতাভোগী মুক্তিযোদ্ধা আছেন। এছাড়া ভাতাপ্রাপ্ত ৭ হাজার ৮৩৮ যুদ্ধাহত মুক্তিযোদ্ধা, শহীদ মুক্তিযোদ্ধা এবং ৪১ নারী মুক্তিযোদ্ধা আছেন। সব মিলিয়ে ১ লাখ ৮৪ হাজার ৮৬ জন মুক্তিযোদ্ধা রয়েছেন। তাদের প্রত্যেককে ৮ লাখ ১৫ হাজার টাকা করে বিনাসুদে গৃহনির্মাণ ঋণ দেয়ার প্রস্তাব করা হয়েছে। প্রকল্পটি বাস্তবায়নে ১৫ হাজার ৩ কোটি টাকা ব্যয় হবে।
তবে বিকল্প প্রস্তাব হিসেবে বলা হয়েছে, সরকার বাজেট থেকেও এ পরিমাণ অর্থের সংস্থান করতে পারে। সেক্ষেত্রে যেসব ব্যাংক মুক্তিযোদ্ধাদের সম্মানী ভাতা বিতরণ করে, সেসব ব্যাংক থেকে মুক্তিযোদ্ধাদের ঋণ দেয়া যেতে পারে। উল্লেখ্য, বর্তমানে সোনালী, অগ্রণী, জনতা, কৃষি উন্নয়ন এবং বাংলাদেশ ব্যাংক মুক্তিযোদ্ধাদের সম্মানী ভাতা বিতরণ করছে। এসব ব্যাংক মুক্তিযোদ্ধাদের ঋণ দিলে তা আদায়ও সহজ হবে। সম্মানীর অর্থ থেকে মুক্তিযোদ্ধারা ব্যাংকের পাওনা পরিশোধ করতে পারবেন। কোনো মুক্তিযোদ্ধা মৃত্যুবরণ করলে তার উত্তরাধিকারীরা ঋণ পরিশোধ করবেন। এ প্রক্রিয়ায় ১০ বছর মেয়াদে মুক্তিযোদ্ধাদের ঋণ দেয়ার প্রস্তাব করা হয়েছে। বাংলাদেশ ব্যাংকের তৃতীয় বিকল্প প্রস্তাবে বলা হয়েছে, মুক্তিযোদ্ধারা ঋণের মূল টাকা মাসিক কিস্তিতে পরিশোধ করবেন। সরকার ত্রৈমাসিক কিস্তিতে ঋণের সুদ পরিশোধ করবে। ১০ বছরের জন্য মুক্তিযোদ্ধাদের এ ঋণ দেয়া হবে।
এ বিষয়ে বাংলাদেশ ব্যাংকের ডেপুটি জেনারেল ম্যানেজার (ডিজিএম) রূপরতন পাইন আলোকিত বাংলাদেশকে বলেন, অর্থ মন্ত্রণালয় এ ধরনের একটি প্রস্তাব তৈরির জন্য বাংলাদেশ ব্যাংককে অনুরোধ করেছে। সেই পরিপ্রেক্ষিতে আমরা প্রস্তাবটি তৈরি করে অর্থ মন্ত্রণালয়ের ব্যাংক ও আর্থিক প্রতিষ্ঠান বিভাগে পাঠিয়েছি। প্রস্তাবটি তৈরির আগে মুক্তিযুদ্ধবিষয়ক মন্ত্রণালয়ের সঙ্গে আলাপ-আলোচনা হয়েছে কিনা এমন প্রশ্নের জবাবে ডিজিএম পাইন জানান, ফোনে মুক্তিযুদ্ধবিষয়ক মন্ত্রণালয়ের কর্মকর্তাদের সঙ্গে কথা হয়েছে। তবে আনুষ্ঠানিক কোনো বৈঠক হয়নি।
এ বিষয়ে মুক্তিযুদ্ধবিষয়ক মন্ত্রণালয়ের এক শীর্ষ কর্মকর্তা আলোকিত বাংলাদেশকে জানান, দেশে কতজন প্রকৃত মুক্তিযোদ্ধা আছেন তা এখনও নিরূপণ করা হয়নি। যারা ভাতা পান তাদের সবার গৃহঋণ প্রয়োজন আছে কিনা তা আমাদের জানা নেই। কতজন মুক্তিযোদ্ধার বাড়ি সংস্কারের প্রয়োজন তাও আমরা জানি না। তিনি বলেন, এ ধরনের কোনো প্রকল্প করতে হলে মুক্তিযুদ্ধবিষয়ক মন্ত্রণালয়ের আগে জানার কথা। প্রস্তাবটি তো মুক্তিযুদ্ধবিষয়ক মন্ত্রণালয় থেকে অর্থ মন্ত্রণালয়ে যাওয়ার কথা। মুক্তিযুদ্ধবিষয়ক মন্ত্রণালয়কে অন্ধকারে রেখে অর্থ মন্ত্রণালয় ও বাংলাদেশ ব্যাংক এ ধরনের একটি বিষয়ে এককভাবে প্রস্তাব তৈরি করতে পারে কিনা তা নিয়েও তিনি প্রশ্ন তোলেন। তিনি আরও বলেন, মুক্তিযোদ্ধাদের কল্যাণে সরকার কাজ করছে। মুক্তিযোদ্ধাদের বিনাসুদে গৃহনির্মাণ ঋণ সরকার দিতে চাইলে কারও আপত্তি থাকার কথা নয়।