পিরোজপুরের স্বরূপকাঠি উপজেলার বিভিন্ন গ্রামের নার্সারিগুলোতে বাণিজ্যিকভাবে ফুল ও ফুলের চারার চাষ হচ্ছে। আর এ চাষের প্রসারতার জন্য ব্যবসায়ীরা সরকারি পৃষ্ঠপোষকতার দাবি করেছেন।
সরেজমিনে নার্সারিগুলো ঘুরে দূর থেকে সারি সারি হলুদ, লাল, কমলা ও সাদা রংয়ের দৃষ্টিনন্দন বিভিন্ন প্রজাতির ফুল দেখে মনে হয়, যেন দিগন্ত জোড়া রং বেরংয়ের কার্পেট দিয়ে ঢেকে দেওয়া হয়েছে মাঠের পর মাঠ আর খেতের পর খেত। চারদিকে শুধু ফুল আর ফুল।
এত ব্যাপক ফুলের সমাহার দেখে আশপাশের বিভিন্ন উপজেলা থেকে দর্শনার্থীরা এসে প্রতিটি নার্সারিতে প্রচণ্ড ভিড় করেন, যা সামাল দিতে মালিকদের হিমশিম খেতে হয়। অনেকে লিখে রেখেছেন এই এলাকায় প্রবেশ, ছবি তোলা বা ফুল ছেঁড়া নিষেধ। নিষেধাজ্ঞা থাকলেও প্রতিদিন শত শত ফুল ও চারা নষ্ট করে ফেলেন দর্শনার্থীরা।
ওই এলাকার বিশিষ্ট সমাজসেবক মহিবুল্লাহ হাওলাদার বলেন, সঠিকভাবে নিয়ন্ত্রণ করা গেলে ওই পল্লীটি একটি দর্শনীয় স্থানে পরিণত হবে। উপজেলার আকলম, অলংকারকাঠি, সুলতানপুর, সংগীতকাঠি, পানাউল্লাহপুর, আরামকাঠিসহ ১০/১২টি গ্রামে ফুলের চাষ হচ্ছে।
অক্টোবর থেকে ফেব্রুয়ারি মাস পর্যন্ত ফুল চাষের মৌসুম। প্রায় ৬০ বছর আগে থেকে স্বরপকাঠিতে বনজ, ফলদ ও ওষধি চারার কলম উৎপাদন করে বাণিজ্যিকভাবে কেনাবেচা চলে আসছে। বিগত দিন থেকে চারা কলমের পাশাপাশি স্বল্প পরিসরে ফুল ও ফুলের চারার চাষ চলে আসলেও দিন দিন ফুলের চাহিদা বেড়ে যায়।
ফুলের চাহিদা বৃদ্ধির কারণে বিগত ৭/৮ বছর ধরে বাণিজ্যিকভাবে ফুলের চাষাবাদ করে আসছে এখানকার নার্সারি মালিকরা। এ উপজেলায় ২ শতাধিক নার্সারিতে ফুল ও ফুলের চারার চাষাবাদ হচ্ছে। আর এতে কর্মরত আছেন প্রায় ২ হাজার শ্রমিক। এ সব নার্সারিতে ডালিয়া, কসমস, সালবিয়া, স্টার, জিনিয়া, সূর্যমুখী, ক্যাপসিক্যাপ, ক্যাবিষ্ট, গ্যাজোনিয়া, ক্যারোনডোনা, স্যালোসিয়া, রজনীগন্ধা, গ্যালোডিয়া, নয়নতারা, চন্দ্রমল্লিকা, ইনকাগাঁদা, স্নুবল, গোলাপসহ নানান প্রজাতির ফুলের চাষ হচ্ছে। ফুল চাষ করে এসব গ্রামের অনেকেই আজ স্বাবলম্বী।
ফুল ও ফুল চারা চাষাবাদের সাথে প্রত্যক্ষ বা পরোক্ষভাবে প্রায় ৩ হাজার শ্রমজীবী মানুষ জড়িত থেকে জীবন-জীবিকা নির্বাহ করে আসছে। একশ্রেণির দুরাগত পাইকার ও খুচরা বিক্রেতা প্রতিদিন এখান থেকে নানা জাতের ফুলসহ চারা ক্রয় করে পিকআপ ভ্যান, ট্রলার ও নৌকাযোগে ভোলা, পটুয়াখালী, বরগুনা, ঝালকাঠি, ফরিদপুর, বাগেরহাটসহ দেশের বিভিন্ন হাটবাজারে নিয়ে বিক্রি করেন।
পটুয়াখালীর বাউফলের ব্যাবসায়ী এটিএম তারেক জানান, এখানকার নার্সারিগুলো দেখে তিনি বেশ মুগ্ধ হয়েছেন। তিনি তার এলাকায় একটি নার্সারি তৈরি করছেন আর এ জন্য তিনি ইতোমধ্যে স্বরূপকাঠির বিভিন্ন নার্সারি থেকে বিভিন্ন প্রজাতির প্রায় ২১ হাজার চারা কিনেছেন।
২০০২ সনে জাতীয় পুরস্কারপ্রাপ্ত আদর্শ নার্সারির মালিক মো. আব্দুস সালাম হাওলাদার এ প্রতিনিধিকে জানান, এসব নার্সারি থেকে প্রতি মাসে গড়ে আনুমানিক ৪/৫ লাখ টাকার ফুল ও ফুলের চারা বিক্রি হয়। চলতি মৌসুমে ২/৩ কোটি টাকার ফুলের চারা এবং ফুল বিক্রি হবে বলে জানিয়েছেন নার্সারি মালিকরা।
ছারছীনা নার্সারির মালিক মো. জাহিদ হোসেন পলাশ জানান, বিভিন্ন এলাকা থেকে পাইকারি ক্রেতাদের পাশাপাশি খুচরা ক্রেতারাও ফুল ও চারা নিতে আসেন। বর্তমানে নার্সারিতে প্রায় ২৫/৩০ প্রজাতির ফুলের চারার চাষ হয়। এর মধ্যে গাঁদা, চন্দ্রমলি¬কা ও গোলাপ ফুলের চাহিদা বেশি।
বিভিন্ন অনুষ্ঠানে ও জাতীয় দিবসে ফুলের চাহিদা বেড়ে যায়। ২০১৪ সালে নার্সারি বিভাগে জাতীয় পুরস্কারপ্রাপ্ত নেছারাবাদ নার্সারির মালিক মো. মানিক হোসেন জানান, ফুল চাষের জন্য যশোর ও বগুড়া থেকে বিভিন্ন প্রজাতির ফুলের বীজ ও চারা আমদানি করা হয়।
তবে সফল ব্যবসায়ী আরও বলেন, এ ব্যবসার পুঁজির জন্য বিভিন্ন এনজিও থেকে চড়া সুদে লোন নিতে হয় তাদের। ফুলের চাষাবাদকে আরো প্রসারিত করতে সরকারি পৃষ্ঠপোষকতাসহ সুদমুক্ত ব্যাংক লোন প্রদানের দাবি নার্সারি মালিকদের।
এ ব্যাপারে উপজেলা কৃষি কর্মকর্তা মো. রিফাত সিকদার জানান, ফুল চাষে তেমন কোনো সহায়তা প্রদান না করা হলেও প্রযুক্তিগত কিছু পরামর্শ দেওয়া হয়।