সাতক্ষীরার ৫০০ টন আম বিদেশে রফতানি হচ্ছে

সাতক্ষীরায় উত্পাদিত আম এবছরও যাবে ইউরোপে। বিজ্ঞানভিত্তিক পদ্ধতিতে আম উত্পাদনে দেড় শতাধিক আমচাষিকে ইতোমধ্যে কয়েক দফা প্রশিক্ষণ দেয়া হয়েছে। প্রশিক্ষণলব্ধ জ্ঞান প্রয়োগ করে আম সংগ্রহ এবং তা প্যাকেজিং করে পাঠানো হবে বিদেশে।

সাতক্ষীরা কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তর সূত্রে জানা যায়, এবার জেলায় তিন হাজার নয়শ’ দশ হেক্টর জমিতে আমের চাষ হয়েছে। এর মধ্যে প্রায় ৫০০ টন আম বিদেশে রফতানি করা হবে। এ জন্য যাবতীয় প্রস্তুতিও সম্পন্ন করা হয়েছে।

জানা গেছে, আর মাত্র ক’দিন বাদেই গাছ থেকে আম সংগ্রহ করা হবে। উন্নত দেশে কিভাবে গাছ থেকে নিরাপদে আম সংগ্রহ করা হয়, তা শেখানো হয়েছে চাষিদের। এ ছাড়া আম প্যাকেজিং এবং তা নিরাপদ ও স্বাস্থ্যসম্মত রাখতে যা যা করণীয় সে বিষয়েও প্রশিক্ষণ পেয়েছেন চাষিরা।

আমের পচনরোধে হট ওয়াটার ট্রিটমেন্ট প্ল্যান্ট, হ্যান্ড গ্লোবসসহ নানা সরঞ্জামও তুলে দেয়া হয়েছে। বেসরকারি সংস্থা উত্তরণের প্রতিনিধি কামরুজ্জামান জানান, আম রফতানির আগ পর্যন্ত মনিটরিং অব্যাহত রাখা হবে। নিরাপদ আম উত্পাদনের জন্য সাতক্ষীরার দেড় শতাধিক চাষিকে প্রশিক্ষণ দেয়া হয়েছে।

কলারোয়া ইলিশপুর গ্রামের আম চাষি শিমুল বিশ্বাস জানান, এবার তিনি ত্রিশ বিঘা জমিতে আম চাষ করেছেন। প্রাকৃতিক দুর্যোগে আমের মুকুল অনেক ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে। তাই এবার আমের ফলন কম হয়েছে। তবে আম বিদেশে রপ্তানি করতে পারলে অনেকটা লাভবান হবেন বলে তিনি আশা প্রকাশ করেন। তিনি আরো বলেন, মুকুল থেকে গুটি পর্যন্ত তিন স্তরে স্প্রে করার পর থেকে আমে আর কোনো রাসায়নিক অথবা কীটনাশক প্রয়োগ করেননি তিনি।

কৃষি সম্প্রসারণ বিভাগ, বেসরকারি সংস্থা সলিডারিডাড ও উত্তরণের সহায়তায় চাষিরা আম উত্পাদন করেছেন। জৈব সার, আর্সেনিকমুক্ত পানি এবং মাছি পোকা দমনে কীটনাশক ব্যবহার না করে ফেরোমেন ফাঁদ ব্যবহার করেছেন তারা।

হর্টিকালচার বিশেষজ্ঞ ড. নাজমুননাহার জানান, আম চাষিদের ক্ষতি যাতে কম হয় সে বিষয়ে চাষিদের সতর্ক করা হয়েছে। তাদের হাতে-কলমে বিভিন্ন প্রশিক্ষণ দেয়া হয়েছে।

রফতানিকারক প্রতিষ্ঠান ন্যানোর স্বত্বাধিকারী মো. ইকবাল হোসেন জানান, রফতানিযোগ্য আম উত্পাদনে সহায়তা দিয়েছি। ন্যানো সাতক্ষীরার চাষিদের কাছ থেকে আম ক্রয়ে চুক্তিবদ্ধ হয়ে বাগানে মনিটরিং চালিয়ে যাচ্ছে। হিমসাগর, ল্যাংড়া ও আম্রপালি জাতের আম পর্যায়ক্রমে সাতক্ষীরা থেকে নিয়ে যাওয়া হবে ইউরোপে রফতানির উদ্দেশ্যে।

হযরত শাহজালাল আন্তর্জাতিক বিমানবন্দরের কোয়ারেন্টাইন বিভাগের উপ-পরিচালক হাফিজুর রহমান জানান, বিদেশে রফতানিযোগ্য আমের গুণগত মান নিশ্চিত করেই ছাড়পত্র দেয়া হবে।

সাতক্ষীরা কৃষি সম্প্রসারণ বিভাগের উপ-পরিচালক কাজী আবদুল মান্নান জানান, আমের মুকুল ক্ষতিগ্রস্ত হলেও এবার আম আগের তুলনায় বড় হবে। গুণগত মানও বৃদ্ধি পাবে। অচিরেই সাতক্ষীরা বাংলাদেশের ‘ম্যাংগো ক্যাপিটাল’ হয়ে উঠবে বলে তিনি আশা প্রকাশ করেন।