চাঁইয়ে আত্মনির্ভরশীল নারী

মাছ ধরার চাঁই বুনে জীবন-জীবিকা নির্বাহ করছে নারায়ণগঞ্জের আড়াইহাজার উপজেলার ফতেপুর ইউনিয়নের ব্রাহ্মণপাড়া গ্রামের অর্ধশত পরিবার। চাঁই বিক্রি করে তারা দূর করতে সক্ষম হয়েছে পরিবারে লেগে থাকা দীর্ঘদিনের অভাব-অনটন। অভাব এখন তাদের কাছে আষাঢ়ে গল্প। এ পেশায় ওই গ্রামের অবহেলিত নারীও খুঁজে পেয়েছেন পথ চলার নতুন প্রেরণা। দীর্ঘদিন ধরে যেসব নারী অজ্ঞাত-অশিক্ষার কারণে ভালো কাজের সুযোগ পাননি, তারা ক্রমেই এ পেশায় আত্মনির্ভরশীল হয়ে উঠছেন। সংসারে গড়েছেন সচ্ছলতার ভিত। জানা গেছে, প্রায় ৫০ বছর আগে শ্রী আদিনার্থ ও গুরুচরণ নামে দুই ব্যক্তি এ গাঁয়ে প্রথম চাঁই বুননের কাজ শুরু করেন। স্থানীয় পর্যায়ে এর চাহিদা থাকায় অনেকেই ধীরে ধীরে এ পেশায় জড়িত হয়েছেন।

সরেজমিন ব্রাহ্মণপাড়া গ্রামে গিয়ে দেখা গেছে, বর্ষা মৌসুমকে সামনে রেখে সকাল থেকে গভীর রাত পর্যন্ত নারী-পুরুষ চাঁই বোনার কাজে ব্যস্ত সময় পার করছেন। পুরুষের পাশাপাশি এ কাজ করে গৃহবধূরা আয় করছেন বাড়তি টাকা। তাদের কেউ বাঁশ কেটে দিচ্ছেন, কেউ ফালি করে দিচ্ছেন, কেউ সরু কাঠি তৈরি করে দিচ্ছেন, কেউবা চাঁই বুনছেন। এভাবে প্রতিদিন চলছে চাঁই তৈরির কর্মযজ্ঞ। সরস্বতী রানী বলেন, আগে স্বামীর আয়ের ওপর তাদের নির্ভর করতে হলেও বর্তমানে তারা নিজেরাই চাঁই বুনে বাড়তি আয় করছেন। একটা সময় ছিল গৃহস্থালি কাজের বাইরে তাদের তেমন কোনো কাজ ছিল না। অনেকটা অলস কাটাতে হতো। কাজের ব্যস্ততায় এখন যেন তাদের নাওয়া-খাওয়ার সময় নেই।

স্বামীর আয়-রোজগারের পাশাপাশি চাঁই বুনে গৃহবধূরা সংসারের আর্থিক সমস্যার সমাধান করছেন। সঞ্চয়ের পাশাপাশি সুশিক্ষায় শিক্ষিত করে তুলছেন সন্তানদের। শ্রী অতুল চন্দ্র বর্মণ বলেন, ‘বাবা-দাদারা চাঁই বানাইয়া সংসার চালাইছেন। অহোন আমিও চাঁই বানাই। কম টেহ্যায় ব্যবসা নাই। তাই এই কাজ করেই পরিবার চলছে। চাঁই বেইচ্চা ভালোই চলছি।’ তিনি জানান, দীর্ঘ প্রায় ৪০ বছর ধরে চাঁই বুনছেন তিনি। তার সঙ্গে পরিবারের অন্য সদস্যরাও দিনভর চাঁই বুননের কাজ করে থাকেন। সামনে বর্ষাকাল। তাই তাদের নাওয়া-খাওয়ার সময় নেই। তিনি আরও বলেন, তাদের গাঁয়ে শ্রী আদি নার্থ ও গুরুচরণ নামে দুই ব্যক্তি ৫০ বছর আগে চাঁই বুনতেন। তাদের দেখাদেখি এ গ্রামে অনেকেই চাঁই বুননের কাজে জড়িত হন। একজন কারিগর প্রতিদিন ২০ থেকে ২৫টি চাঁই বুনতে পারেন। চাঁই তৈরিতে লাগে প্লাস্টিকের ফিতা ও মুলি বাঁশ। একটি চাঁইয়ের খরচ পড়ে ১০০ থেকে ১২০ টাকা। প্রকারভেদে বাজারে বিক্রি হয় ২০০ থেকে ২৫০ টাকা। পাইকারি চাঁই বিক্রেতা শ্রী মঙ্গলা চন্দ্র বর্মণ বলেন, এলাকায় ঘুরে ঘুরে চাঁই কিনে তিনি বিভিন্ন স্থানের হাটবাজারে বিক্রি করেন। তিনি দীর্ঘ ১৫ বছর ধরে এ ব্যবসার সঙ্গে জড়িত রয়েছেন। তিনি আরও জানান, বিল ও নদ-নদী বেষ্টিত এলাকায় চাঁইয়ের চাহিদা বেশি। মান ও প্রকারভেদে একটি চাঁইয়ের মূল্য ৪০০ থেকে ৫০০ টাকাও হয়ে থাকে।