সারাজীবনের সঞ্চয়ে স্বপ্নের স্কুল গড়লেন ক্যান্সার আক্রান্ত নারী

গোপালগঞ্জের কোটালীপাড়ায় নিজের সারা জীবনের সঞ্চয় দিয়ে একটি মাধ্যমিক বিদ্যালয় গড়ে তুলেছেন ক্যান্সার আক্রান্ত এক নারী। নিজের নামে করা ‘কুমারী রেখা রানী নিম্ন মাধ্যমিক বালিকা বিদ্যালয়’ নামে শিক্ষা প্রতিষ্ঠানটিতে এলাকার শতাধিক মেয়ে লেখাপড়া করছে। এলাকার মেয়েদের জন্য গড়ে তোলা শিক্ষা প্রতিষ্ঠানটি একদিন উত্তর কোটালীপাড়ায় নারী শিক্ষায় ভূমিকা রাখবে বলে মনে করছে এলাকাবাসী।

কোটালীপাড়ার রুরুয়া গ্রামের বাসিন্দা রেখা রানী ওঝা। কুমারী থেকেছেন তিনি। সারা জীবন কেটেছে সংগ্রামের মধ্য দিয়ে। ১৯৪৮ সালে জন্ম নেওয়া এই নারী লেখাপড়া শেষ করেছেন নিজের চেষ্টায়। পরিবারের কোনো সাহায্য-সহযোগিতা ছাড়াই পড়াশোনা শেষ করেছেন। এরপর দীর্ঘ ২৮ বছর নার্সের চাকরি করেছেন। প্রায় আট বছর আগে তার ব্রেস্ট ক্যান্সার ধরা পড়ে। এ রোগের ব্যয়বহুল চিকিৎসা চালিয়ে যাওয়ার পাশাপাশি চাকরি শেষে পেনশনের জমানো টাকা দিয়ে নিজের গ্রামেই একটি নিম্ন মাধ্যমিক বালিকা বিদ্যালয় গড়ে তুলেছেন তিনি। কোটালীপাড়া উপজেলায় এই বিদ্যালয়টিসহ মাত্র দুটি বালিকা বিদ্যালয় রয়েছে। তাছাড়া ৩ কিলোমিটারের মধ্যে কোনো মাধ্যমিক বিদ্যালয়ও নেই। এলাকায় বিদ্যালয় সংকটের কথা চিন্তা করে এবং নারী শিক্ষার উন্নয়নে ভূমিকা রাখতেই রেখা রানী বিদ্যালয়টি স্থাপন করেন।

বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক পঙ্কজ কুমার বৈদ্য জানান, শিক্ষার্থীদের কাছ থেকে বেতন নেওয়া হয় না। বিদ্যালয়টির নানা খরচও চালান রেখা রাণীই। নিজের কোনো উত্তরাধিকার না থাকায় তার সারা জীবনের ধ্যান-জ্ঞান এই বিদ্যালয়টি। এখানকার শিক্ষার্থীদের মাঝেই তিনি বেঁচে থাকতে চান। বিদ্যালয়ের যে ক’জন শিক্ষক রয়েছেন তারাও অনেকটা স্বেচ্ছাশ্রম দিয়ে যাচ্ছেন।

তবে ২০১৩ সালে প্রতিষ্ঠিত এই বিদ্যালয়ের বড় সমস্যা হল বিদ্যালয়টি এখনও প্রশাসনের পক্ষ থেকে পাঠদানের অনুমতি পায়নি। যে কারণে পরীক্ষা দেবার সময় অন্য বিদ্যালয়ের হয়ে অংশ নিতে হচ্ছে। এ সমস্যা থেকে তারা মুক্তি পেতে চান।

এলাকার বাসিন্দা প্রমথ রঞ্জন দত্ত, মধুসূদন হালদার, পবিত্রা মজুমদার, শংকরী হাজরা জানান, সারা জীবনে রেখা রানী কারো কাছ থেকে কিছু নেননি। শুধু দিয়ে গেছেন। তিনি যে বিদ্যালয়টি গড়ে তুলেছেন তা যেন এলাকাবাসীর উপকারে আসতে পারে, তার জন্য এলাকাবাসীও তাকে সহযোগিতার হাত বাড়িয়ে দিয়েছেন।

ওই বিদ্যালয়ের অষ্টম শ্রেণীর ছাত্রী রিপা বাড়ৈ, ষষ্ঠ শ্রেণীর ছাত্রী সুইটি হালদার, সপ্তম শ্রেণীর ছাত্রী তন্দ্রা হালদার, আঁখি বালা জানায়, বিদ্যালয়ে তাদেরকে শুধু পুঁথিগত শিক্ষাই নয়, এর পাশাপাশি তাদের জীবন গড়তে নানা শিক্ষা দেওয়া হয়। সাংস্কৃতিক বিষয়ে তাদেরকে শিক্ষা দেওয়া হয়। বাড়ির কাছাকাছি বিদ্যালয়টি থাকায় তাদের সুবিধা হয়েছে অনেক।

তাছাড়া দূরের বিদ্যালয়ে যাওয়া-আসার পথে বখাটেদের উপদ্রবও পোহাতে হয় না।

বিদ্যালয়ের প্রতিষ্ঠাতা রেখা রানী বলেন, এটি আমার স্বপ্নের বাস্তবায়ন। আমি চেয়েছিলাম এলাকার নারী সমাজের জন্য কিছু একটা করবো। সারাজীবন আমি কারো কাছ থেকে কিছু চেয়ে নিইনি। নিজের সঞ্চয়ের অর্থ দিয়ে এলাকার মেয়েদের জন্য এই বিদ্যালয়টি স্থাপন করেছি। এ বিদ্যালয়টির মাধ্যমেই আমি সবার মাঝে বেঁচে থাকতে চাই।

বিদ্যালয়টি যাতে পাঠদানে অনুমতি পায় এবং এলাকায় নারী শিক্ষা উন্নয়নে ভূমিকা রাখতে পারে, এটাই তার প্রত্যাশা।