দক্ষ জনশক্তি গড়ার লক্ষ্য নিয়ে ১৯৯৯ সালে যাত্রা শুরু করে হাজী মোহাম্মদ দানেশ বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয় (হাবিপ্রবি)। প্রতিষ্ঠার পর থেকেই আধুনিক জ্ঞান-বিজ্ঞান ও উচ্চশিক্ষায় বিশ্ববিদ্যালয়টি স্বতন্ত্র ভূমিকা পালন করছে। অল্প সময়ের মধ্যেই বিশ্ববিদ্যালয়টি শিক্ষার্থীদের জন্য একটি আদর্শ বিদ্যাপীঠে পরিণত হয়েছে।
পশ্চাত্পদ উত্তরাঞ্চলকে এগিয়ে নেয়াসহ দেশের বিজ্ঞান ও কারিগরি শিক্ষার উন্নয়নের জন্য ১৯৭৯ সালে প্রথমে একটি কৃষি প্রশিক্ষণ ইনস্টিটিউট (এটিআই) স্থাপন করা হয়। ১৯৮৮ সালে এটিআই-কে কৃষি কলেজে উন্নীত করা হয়। কলেজটি ঐতিহাসিক তেভাগা আন্দোলনের অন্যতম ব্যক্তিত্ব হাজী মোহাম্মদ দানেশ-এর নামে নামকরণ করা হয়। ১৯৯৯ সালের ১১ সেপ্টেম্বর তত্কালীন ও বর্তমান প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা উত্তরবঙ্গে প্রথম বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ের ভিত্তিপ্রস্তর স্থাপন করে এ বিশ্ববিদ্যালয়ের কার্যক্রম শুরু করেন।
দিনাজপুর শহর থেকে ১০ কিলোমিটার উত্তরে ৮৫ একর জমির ওপর প্রতিষ্ঠিত বিশ্ববিদ্যালয়টি। এর গবেষণা কার্যক্রম দুটি প্রধান ধারায় পরিচালিত হয়ে থাকে। একটি ডিগ্রি গবেষণা ও অপরটি প্রকল্প গবেষণা। এমএস ও পিএইচডি শিক্ষার্থীদের গবেষণা শিক্ষকদের তত্ত্বাবধানে পরিচালিত হয়ে থাকে, পক্ষান্তরে বিশ্ববিদ্যালয় অথবা কোনো বহিঃস্থ সংস্থার অর্থানুকুলে প্রকল্প গবেষণার কাজ পরিচালিত হয়। গবেষণা প্রকল্পসমূহ সুষ্ঠুভাবে সমন্বয় ও ব্যবস্থাপনার স্বার্থে ২০০৪ সালে আইআরটি প্রতিষ্ঠা করা হয়।
২০০০ সালে এগ্রিকালচার অনুষদে ছাত্র-ছাত্রী ভর্তির মাধ্যমে এ বিশ্ববিদ্যালয়ে শিক্ষা কার্যক্রম শুরু হয়েছিল। তখন ১৪টি বিভাগে ৫৩ জন শিক্ষক, ১১ জন কর্মকর্তা, ১১০ জন কর্মচারী ও ৭০০ শিক্ষার্থী ছিল। ২০০৩ সালে আরো তিনটি নতুন অনুষদ কম্পিউটার সায়েন্স অ্যান্ড ইঞ্জিনিয়ারিং, বিজনেস স্টাডিজ এবং ফিশারিজ অনুষদ খোলা হয় এবং ২০০৪ এ আরো একটি নতুন অনুষদ এগ্রো-ইন্ডাস্ট্রিয়াল অ্যান্ড ফুড প্রসেস ইঞ্জিনিয়ারিং (বর্তমানে ইঞ্জিনিয়ারিং অনুষদ) যুক্ত হয়। উচ্চ শিক্ষা ও গবেষণা সুষ্ঠুভাবে সম্পাদনের জন্য ২০০৪ সালের জানুয়ারিতে পোস্ট গ্র্যাজুয়েট স্টাডিজ অনুষদের শিক্ষা কার্যক্রম শুরু হয়। ২০০৮ সালে এ বিশ্ববিদ্যালয়ের অধিভুক্ত কলেজ দিনাজপুর সরকারি ভেটেরিনারি কলেজকে আত্মীকরণের মাধ্যমে সপ্তম অনুষদ হিসেবে ভেটেরিনারি অ্যান্ড এনিম্যাল সায়েন্স অনুষদ যুক্ত হয় এবং ২০১৫ সালে বিজ্ঞান অনুষদ নামে নতুন আরেকটি অনুষদ খোলা হয়। বর্তমানে ৯টি অনুষদের আওতায় ৪৩টি বিভাগে শিক্ষা ও গবেষণা কার্যক্রম পরিচালিত হয়ে থাকে।
বর্তমানে বিশ্ববিদ্যালয়ে মোট শিক্ষার্থীর সংখ্যা ৯ হাজার ৪০০ জন। শিক্ষক ২৭৬ জন, কর্মকর্তা ১৬৪ ও কর্মচারীর সংখ্যা ৩২৬ জন। ছাত্র-ছাত্রীদের জন্য ৬টি আবাসিক হল রয়েছে।
ভাইস-চ্যান্সেলর প্রফেসর মো. রুহুল আমিন বলেন, সকলের প্রচেষ্টায় বিশ্ববিদ্যালয়টি প্রতিষ্ঠার মূল লক্ষ্যকে সমুন্নত রেখে শিক্ষার্থীদের সৃজনশীল শক্তির উন্মেষ ও বিকাশ ঘটিয়ে শিক্ষা ও গবেষণা কার্যক্রমের মাধ্যমে দেশের উচ্চ শিক্ষা বিস্তারে কাজ করে যাচ্ছেন। ২০১৬ শিক্ষাবর্ষে স্নাতক পর্যায়ে ২ হাজার ১৩৬ জন শিক্ষার্থী ভর্তি হয়েছে। বর্তমানে ১৪৫ জন বিদেশি শিক্ষার্থী এ বিশ্ববিদ্যালয়ে শিক্ষা গ্রহণ করছে। এ সাফল্যের ধারা অব্যাহত রেখে বিশ্ববিদ্যালয়টি দেশের উচ্চ শিক্ষা বিস্তারে আরো ভূমিকা রাখতে তিনি সকলের সহযোগিতা কামনা করেছেন।