বাউফলের চরে চিনাবাদামের বাম্পার ফলন

পটুয়াখালীর বাউফলের চরে বাদামের বাম্পার ফলন হয়েছে। ছেলেমেয়ে নিয়ে কৃষক-কৃষানিরা এখন ক্ষেতের বাদাম তুলতে ব্যস্ত। রোদে শুকানোর পর স্থানীয় হাটবাজারে বিক্রিও হচ্ছে এসব চিনাবাদাম।
উপজেলা উপ-সহকারী কৃষি কর্মকর্তা মো. আবু ইউসুফ জানান, বাউফল উপজেলায় এ বছর রবি ফসলের মধ্যে ১ হাজার ৯শ’ হেক্টর মুগডাল, চারশ’ হেক্টর মসুর, ১ হাজার ১শ’ হেক্টর তিল, ৮৫ হেক্টর সরিষা, ৫০ হেক্টর সূর্যমুখী, ছয়শ’ হেক্টর খেসারি, একশ’ হেক্টর ভুট্টা, ২৫ হেক্টর গম, আটশ’ হেক্টর ফ্যালন, চারশ’ হেক্টর ছোলা, ১ হাজার ৫শ’ হেক্টর মরিচ, ৯শ’ ৬৫ হেক্টর মিষ্টি আলু ও দুইশ’ হেক্টরে চিনাবাদামের লক্ষ্যমাত্রা নির্ধারিত হয়। গম, ভুট্টা, ইক্ষু, সূর্যমুখী, তিসি, পেঁয়াজ, তরমুজের মতো কয়েকটি ফসল ছাড়া বেশিরভাগ ক্ষেত্রে এই লক্ষ্যমাত্রা ছাড়িয়ে গেছে।
চর কচ্ছবিয়ার চাষি তাঁতেরকাঠি গ্রামের ফিরোজ চৌধুরী জানান, আবহাওয়া পরিবর্তনের কারণে চরের কৃষিতে দিন দিন পরিবর্তন আসছে। এক সময় গম, ভুট্টা, সূর্যমুখী, ফ্যালন, চিনাবাদামের মতো রবি ফসলের চাষ না হলেও এখন এসব ফসলের চাষ বাড়ছে। কেবল ধান চাষে কৃষকের সংসার চলে না উল্লেখ করে তিনি জানান, কয়েক বছর ধরে ধানে লোকসান গুনে স্বল্পমেয়াদি সবজি জাতীয় ফসলসহ রবি মৌসুমের ফসলের দিকে ঝুঁকছেন তারা। এক একর জমিতে রবি মৌসুমের ফসল চিনাবাদাম চাষ করেছেন তিনি। ক্ষেতের বাদাম তুলতে শুরু করেছেন।
ফিরোজ চৌধুরীর মতো বাদাম তুলতে শুরু
করেছেন মমিনপুর চরের আলমগীর গাজী, নিমদীর সেরাজ মাতবর, আবদুল আলী, বাকলা-তাঁতেরকাঠির রাদু মৃধা, মাহবুব মৃধা, দক্ষিণ-সুলতানাবাদের সেরাজ মাতবর, রফিক, বাবুল মাতবর, হারুন বিশ্বাসসহ অনেকেই। দক্ষিণ-সুলতানাবাদের সেরাজ মাতবর জানান, চাষের পূর্ব অভিজ্ঞতা না থাকলেও মৌসুমের শুরুতে অন্যের দেখাদেখি বাজার থেকে হাইব্রিড জাতের বীজ সংগ্রহ করে ৩০ শতাংশ জমিতে চিনাবাদাম লাগিয়েছেন তিনি। বাম্পার ফলন হয়েছে তার। বাদাম তুলে রোদে শুকানোর পরে স্থানীয় কালাইয়ার হাটে ৬৫ টাকা কেজি হিসেবে পাঁচ মণ বাদাম বিক্রি করেছেন তিনি।’
বাবুল মাতবর জানান, সিডর-আইলায় কাঁচা রাস্তা, বেড়িবাঁধ ক্ষতিগ্রস্তের পরে সংস্কার না হওয়া ও রিং-বাঁধ তৈরি না হওয়ায় স্বাভাবিকের চেয়ে সামান্য বেশি মাত্রায় জোয়ারের পানি এলেই চরের ফসলের মাঠ ভেসে যায়। গত পূর্ণিমার জোয়ারের পানিতে তলিয়ে চর ফেডারেশন, চর শৌলা, চর ওয়াডেল, চর মিয়াজান, রায়সাহেবের চর, চর নিমদী, উত্তর মমিনপুর, চর বাসুদেবপাশাসহ নিচু এলাকার মরিচ, বাদাম, মিষ্টি আলু, মুগডাল, তিলসহ রবি ফসলের ক্ষতি হয়। চন্দ্রদ্বীপের চর মিয়াজানের কৃষক শাহ আলম, ৭নং ওয়ার্ডের বাতিরখাল এলাকার সোহরাব চৌকিদার, জুলহাস চৌকিদার, ইসমাইল সিকদার, ইউনুচ ব্যাপারি, কাসেম গাজী, চর ব্যারেটের সেলিম খান, ৯নং ওয়ার্ডের শাহআলম ব্যাপারিসহ অর্ধশতাধিক কৃষকের কয়েকশ’ একর জমির মুগডাল, মরিচ, তিল ও বাদাম ভেসে যায় জোয়ারের পানিতে। তবে কয়েকটি উর্বর পলিমাটির চরে চিনাবাদামের বাম্পার ফলন হয়েছে। চিনাবাদামে লাভের আশাও করছেন বিভিন্ন চরের কৃষক।
উপজেলা কৃষি কর্মকর্তা সারোয়ার জামান বলেন, ‘পাকা শুরু হওয়ায় জোয়ারের পানিতে তলিয়ে যাওয়ার আগেই মুগডাল, ফ্যালন, মরিচের মতো রবি ফসল পর্যায়ক্রমে দু’বার তুলে নিতে পেরেছেন কৃষক। বাদামেরও বাম্পার ফলন পাবেন তারা।’