বর্তমান পৃথিবীতে বড় সমস্যা হয়ে দেখা দিয়েছে সন্ত্রাস-জঙ্গিবাদ। আজকের পৃথিবীতে সভ্যতা এবং অগ্রযাত্রার পথে বাধা হয়ে দাঁড়িয়েছে সন্ত্রাস-জঙ্গিবাদ। দেশে দেশে নানাভাবে নানা নামে এই সমস্যা মাথা চাড়া দিয়ে উঠছে। যার ফলে মানুষের স্বাভাবিক জীবনযাত্রা যেমন ব্যাহত হচ্ছে তেমনিভাবে ব্যাহত রাষ্ট্রীয় নিরাপত্তাও। এই সমস্যা মোকাবিলায় সমভাবাপন্ন রাষ্ট্রগুলো একযোগে কাজ করছে। আঞ্চলিক ভিত্তিতেও গড়ে উঠেছে নানা নিরাপত্তা এবং সহযোগিতা জোট। আমাদের প্রতিবেশী ভারত। আমাদের সীমানার বড় এবং প্রধান অংশই ভারতের সঙ্গে। প্রায় তিন দিকে অবস্থিত দেশটির সঙ্গে স্বাভাবিকভাবেই অর্থনৈতিক বিষয়াদির বাইরেও আমাদের নিরাপত্তা সংশ্লিষ্ট বিষয়গুলোও জড়িয়ে রয়েছে। আজকের সন্ত্রাস এবং জঙ্গিবাদ মোকাবিলায় উভয় প্রতিবেশীই নিজেদের মধ্যে সহযোগিতার ক্ষেত্র বিস্তৃত করতে পারে। সেই সহযোগিতার ক্ষেত্র বিস্তৃত করার প্রয়োজন থেকেই উভয় প্রতিবেশীর মধ্যে আলোচনা অব্যাহত থাকা প্রয়োজন। তারই অংশ হিসেবে বাংলাদেশ সফরে এসেছিলেন ভারতের পররাষ্ট্র সচিব। ১৩ মে দৈনিক মানবকণ্ঠসহ সহযোগী দৈনিকগুলোতে প্রকাশিত প্রতিবেদন থেকে জানা যায়, ১২ মে রাষ্ট্রীয় অতিথি ভবন পদ্মায় বাংলাদেশের পররাষ্ট্র সচিবের সঙ্গে ভারতের পররাষ্ট্র সচিবের নেতৃত্বে দু’দেশের প্রতিনিধি দলের মধ্যে দ্বিপক্ষীয় বৈঠক অনুষ্ঠিত হয়। এই বৈঠকে সিদ্ধান্ত হয়, বাংলাদেশ-ভারত দ্বিপক্ষীয়ভাবে সন্ত্রাস ও জঙ্গিবাদ দমন করবে। এ জন্য দু’দেশের মধ্যে সন্ত্রাসবাদ দমনে যে কাঠামো বিদ্যমান আছে, ভবিষ্যতে তা কীভাবে আরো জোরদার করা যায় সে বিষয়েও উভয় দেশ একমত হয়েছে। অত্যন্ত সময়োপযোগী এ সিদ্ধান্তকে আমরা স্বাগত জানাই। দৈনিক মানবকণ্ঠসহ সহযোগী দৈনিকগুলোতে প্রকাশিত প্রতিবেদন থেকে আরো জানা যায়, ভারতের পররাষ্ট্র সচিবের এই সফরের অন্যতম উদ্দেশ্য দ্বিপক্ষীয় সম্পর্কের বিভিন্ন বিষয় এবং গত বছর ভারতের প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদির বাংলাদেশ সফরকালে স্বাক্ষরিত চুক্তিগুলো অগ্রগতি পর্যালোচনা করা। এছাড়া দু’দেশের মধ্যে বিদ্যুৎ ও ব্যান্ডউইথ সরবরাহ, গ্যাস ও ডিজেল সরবরাহ, দু’দেশের মধ্যে জাহাজ চলাচল, ভারতের ঋণ সরবরাহের ক্ষেত্রে আলোচনার পাশাপাশি দ্বিপক্ষীয় বৈঠকে আঞ্চলিক ও আন্তর্জাতিক বিষয়ে পারস্পরিক সহযোগিতার বিষয় নিয়েও আলোচনা হয়েছে।
সন্ত্রাসবাদ ও জঙ্গিবাদ নিয়ে প্রতিবেশী দু’দেশের মধ্যেই উদ্বেগ রয়েছে। পারস্পরিক আলোচনা এবং সহযোগিতার মধ্য দিয়ে সন্ত্রাস ও জঙ্গিবাদ দমনে বাংলাদেশ ও ভারত একযোগে কাজের মধ্য দিয়ে আঞ্চলিক শান্তি ও স্থিতিশীলতা বজায় রাখার পাশাপাশি আন্তর্জাতিক অঙ্গনেও জোরালো ভূমিকা রাখতে সক্ষম হবে বলে আমরা মনে করি। একইসঙ্গে অভিন্ন নদ-নদীর পানি বণ্টনসহ উভয় দেশের মধ্যে যেসব অমীমাংসিত বিষয় রয়েছে, সেগুলোর সমাধানের মাধ্যমে দ্বিপক্ষীয় ও আঞ্চলিক সম্পর্ক আরো এগিয়ে নেয়া সম্ভব। এক্ষেত্রে আন্তরিক অবস্থান দ্বিপাক্ষিক সম্পর্ককে আরো জোরালো করবে এবং এ থেকে আঞ্চলিক ও আন্তর্জাতিক পর্যায়ে উভয় দেশের বন্ধুত্ব ও সহযোগিতার ক্ষেত্র বিস্তৃত হবে।