ঝিনাইদহে ৫০ প্রজাতির কবুতরের খামার

ঝিনাইদহ শহরের পাগলাকানাই ইউনিয়নের কোরাপাড়া গ্রামের বেকার যুবক মেহেদি হাসান বাণিজ্যিকভাবে কবুতর পালন করে সাফল্য পেয়েছেন। গড়ে তুলেছেন বিভিন্ন প্রজাতির কবুতরের খামার। এ খামারের আয় থেকে কিনেছেন জমি, গড়ে তুলেছেন পাকা বাড়ি। ৪ বছর আগে শখের বশে ঢাকার কাঁটাবন এলাকা থেকে একজোড়া কিং কবুতর কিনে বাড়িতে আনেন।

কিছুদিন লালন-পালনের পর একজোড়া বাচ্চা হয় সেই কবুতরের। বড় করে সেই কবুতরজোড়া বিক্রি করেন ৬ হাজার টাকা। তখন থেকেই মাথায় আসে বাণিজ্যিকভাবে কবুতর পালন করার কথা। আরও কিছু কবুতর কিনে বাড়ির আঙিনায় বাণিজ্যিকভাবে গড়ে তোলেন কবুতরের খামার। মেহেদি হাসান এখন বেকার যুবকদের অনুকরণীয় মডেল।

প্রতিদিন দেশের দূরদূরান্ত থেকে মানুষ আসছে তাঁর কবুতরের খামার দেখতে। স্ত্রী শারমিন হাসানের সহযোগিতায় বাড়ির আঙিনায় গড়ে তোলেন মেহেদি প্রিজন ফার্ম। বর্তমানে তাঁর খামারে ৫০ প্রজাতির বিদেশি কবুতর রয়েছে। এর মধ্যে ৪২ হাজার টাকা জোড়া মূল্যের ইয়েলো বোখরা, ১০ হাজার টাকা মূল্যের মডেনা ব্লু কিং, ম্যাগপাই ও আওল এবং ৬ হাজার টাকা মূল্যের বিউটি হুমার।

আছে ৬ থেকে ২০ হাজার টাকা মূল্যের পাকিস্তানি ব্লু সিরাজি, কালো কিং, লাল কিং, হলুদ কিং, হোয়াইট কিং, সাটিং, শ্যালো, নানপারভিন, সিংহ ও হাইপিলার। ৬ হাজার টাকা মূল্যের অস্ট্রেলিয়ার কিং। ২ হাজার টাকা মূল্যের ভারতীয় বোম্বাই ও লোটন এবং দেশি প্রজাতির সোয়াচন্দন। বিদেশি জাতের এসব কবুতর দেশের বিভিন্ন জেলা থেকে যেমন- ঢাকা, রাজশাহী, খুলনা, নাটোর, পাবনা, কুষ্টিয়া, মেহেরপুর, রাজবাড়ী, মাগুরা ও ফরিদপুর থেকে সংগ্রহ করেছেন।

বর্তমানে তাঁর খামারে উৎপাদিত বিদেশি জাতের কবুতরের বাচ্চা দেশের বিভিন্ন জেলার পাইকারদের কাছে এক হাজার থেকে ৪০ হাজার টাকা জোড়ায় বিক্রি করেন। কবুতর বিক্রির জন্য তিনি ফেসবুকে পেজ খুলেছেন। যার মাধ্যমে ঘরে বসেই তিনি দেশের বিভিন্ন অঞ্চলের মানুষের সঙ্গে যোগাযোগ করতে পারছেন। তিনি জানান, ২০ হাজার টাকা খরচ করে একজোড়া বিদেশি কবুতর পুষলে বছরে সব খরচ বাদ দিয়ে ৩০ হাজার টাকা লাভ থাকে। একজোড়া কবুতর কমপক্ষে ৪ জোড়া বাচ্চা দেয়।

প্রতি জোড়া বাচ্চার দাম ১০ হাজার টাকা। কবুতরের খাবার বাবদ বছরে খরচ হয় ১৫০০ থেকে ২ হাজার টাকা। অন্যান্য খরচ ৪ হাজার টাকার মতো। সব খরচ বাদ দিয়ে ২০ হাজার টাকার এক জোড়া কবুতরে ৩০ হাজার টাকার ওপর লাভ থাকে। এভাবেই ৪ বছর খামারে উৎপাদিত বাচ্চা ও কবুতর বিক্রি করে তিনি আর্থিকভাবে সচ্ছল হয়েছেন।

প্রতিবেশী স্কুলছাত্র সাব্বির হোসেনও মেহেদি হাসানের কাছ অনুপ্রাণিত হয়ে তার কাছ থেকে কবুতর কিনে লালন-পালন করে বিক্রি করে নিজের পড়ার খরচ চালাচ্ছে। ঝিনাইদহ জেলা প্রাণীসম্পদ কর্মকর্তা ডা. কানাই লাল স্বর্ণকার জানান, মেহেদি হাসান বিদেশি বিভিন্ন জাতের কবুতর পালন করে আজ স্বাবলম্বী। যে কোনো সমস্যা নিয়ে এলে তাঁকে সঠিক পরামর্শ দেওয়া হয়। মেহেদি হাসানের মতো দেশের বেকার যুবকরা কবুতর লালন-পালন করে নিজেরাও স্বাবলম্বী হয়ে উঠতে পারেন।