যশোরের ফুলের রাজ্য গদখালী ও শার্শা এলাকায় ফুলের সুবাস ছড়িয়ে দেন ফুলচাষীরা। এখানে মাঠের পর মাঠজুড়ে শুধু ফুল আর ফুল। গোলাপ, জারবেরা, গ্লাডিওলাস, রজনীগন্ধা, হলুদ গাঁদা, চন্দ্রমল্লিকা ফুলের বাগান যেন এক স্বপ্নময় পরিবেশ তৈরি করেছে।
benapole 77সারা বছরই ফুলবাগানের (ফুলের ক্ষেত কথাটা মানায় না) পরিচর্যায় ব্যস্ত থাকেন চাষিরা। বসন্তবরণ, বিশ্ব ভালোবাসা দিবস ও মাতৃভাষা দিবস- এ তিনটি উৎসব ও দিনেই সবচেয়ে বেশি ফুল বিক্রি হয়। তাই সারা বছর চাষীরা ওই তিন দিনের জন্য প্রস্তুতি নেন ও অপেক্ষা করেন।
ওই তিনটি দিবসে সারাদেশে এ ফুলের সুবাস ছড়িয়ে দেন গদখালী ও শার্শার ফুলচাষিরা। ওই তিনটি দিবসে কমপক্ষে ১৫ কোটি টাকার ফুল বিক্রি হয়। এছাড়া থার্টিফার্স্ট নাইট ও ইংরেজি নববর্ষকে ঘিরে ফুলের ভালো বেচাকেনা হয়। সারাদেশের ফুলের চাহিদা মেটাতে চান যশোরের ফুলচাষিরা।
রাজনৈতিক অস্থিরতা, হরতাল-অবরোধের কারণে ফুলের বাজার মারাত্মক ক্ষতির শিকার হয়। সরবরাহ ব্যাহত হওয়ায় ক্ষেত আর বাজারে পচে যায় লাখ লাখ টাকার ফুল। যেটুকু বিক্রি হয়, তাও পানির দরে। সেই দুঃস্বপ্নের সময় পেরিয়ে ভালো বেচাকেনার স্বপ্ন দেখেন চাষি ও ব্যবসায়ীরা।
আবহাওয়া অনুকূল থাকলে ফুলের ফলনও ভালো হয়। তখন মুখে হাসি ফোটে এখানকার ফুলচাষিদের। টাওরা গ্রামের ফুলচাষি আজগর আলী এক বিঘা গোলাপ ও দুই বিঘা গ্লাডিওলাস ফুলের আবাদ করেছেন। বর্তমানে গোলাপ তিন টাকা ও গ্লাডিওলাস ৩-৪ টাকা পিস বিক্রি হচ্ছে।
বিভিন্ন উৎসবের আগে ফুলের দাম আরও বাড়ে। এক বিঘা গোলাপ রোপণে ৮০ হাজার টাকা খরচ হয়। চার হাজার চারার দাম ৪০ হাজার টাকা। আর রোপণসহ অন্যান্য খরচ আরও ৪০ হাজার টাকা। এছাড়াও পরিচর্যার খরচ রয়েছে বাড়তি। একবার রোপণে ৬-৭ বছর পর্যন্ত গোলাপ ফুল পাওয়া যায়।
নীলকণ্ঠনগর গ্রামের ফুলচাষি সেলিম প্রায় চার বিঘা জমিতে জারবেরা, চন্দ্রমল্লিকা, গ্লাডিওলাস ও রজনীগন্ধার চাষ করেন। বসন্তবরণ ও বিশ্ব ভালোবাসা দিবসে ফুল সরবরাহ করেন তিনি। তবে বসন্তবরণ ও ভালোবাসা দিবসের সময় পাবলিক পরীক্ষা থাকলে সাধারণত পারিবারিক অনুষ্ঠান স্থগিত থাকে।
এতে ফুলের চাহিদা কিছুটা কমে যায়। তবে রাজনৈতিক পরিস্থিতি ভালো থাকলে ভালো দাম পাওয়া যায়। বাংলাদেশ ফ্লাওয়ার সোসাইটির সভাপতি আবদুর রহিম জানান, গদখালী ও শার্শা এলাকায় প্রায় সাড়ে চার হাজার কৃষক দেড় হাজার হেক্টর জমিতে ফুলের আবাদ করছেন।
বসন্তবরণ, বিশ্ব ভালোবাসা দিবস ও আন্তর্জাতিক মাতৃভাষা দিবসে গদখালী এলাকার কৃষকরা ১৫-২০ কোটি টাকার ফুল সরবরাহ করেন। যশোরের গদখালী ও শার্শার ফুল সারাদেশে সরবরাহ করা হয়। ফুল সহজে দেশের বিভিন্ন স্থানে পৌঁছাতে রেলের বগি বরাদ্দের বিষয়টি জেলা প্রশাসনের মাথায় রয়েছে।
পাশাপাশি ফুলচাষিদের বিভিন্ন প্রশিক্ষণের ব্যবস্থা করা হয়েছে। ফুলচাষিদের ব্যাংক ঋণ সহজ করতে নানা পদক্ষেপ নিয়েছে সরকার। শার্শা উপজেলা কৃষি কর্মকর্তা হিরক কুমার সরকার শার্শা ও গদখালী অঞ্চলের প্রায় সাড়ে চার হাজার কৃষক দেড় থেকে দু’হাজার হেক্টর জমিতে ফুলের আবাদ করার কথা জানান।
নিয়মিত স্থানীয় ফুলচাষিদের বিভিন্ন রকম পরামর্শ ও সহযোগিতা করেন তিনি। স্থানীয় আসসিংড়ি গ্রামের ক্ষুদ্র পাইকারি ব্যবসায়ী শাহাদৎ হোসেনের মতে, বাজারে জারবেরা, গোলাপ, রজনীগন্ধ ফুলের চাহিদা বেশি।