বৈদেশিক মুদ্রার রিজার্ভ থেকে অর্থ চুরির পর সাইবার নিরাপত্তার জন্য একটি আলাদা বিভাগ গঠনের কথা ভাবছে বাংলাদেশ ব্যাংক। এজন্য বাংলাদেশ ব্যাংকের আইটি অপারেশনস অ্যান্ড কমিউনিকেশন ডিপার্টমেন্ট (আইটিওসিডি) ও ইনফরমেশন সিস্টেম ডেভেলপমেন্ট ডিপার্টমেন্টের (আইএসডিডি) কর্মকর্তাদের কাছে কৌশলগত পরিকল্পনা চেয়েছে সংস্থাটির পরিচালনা পর্ষদ। বর্তমানে এ বিভাগ দুটি কেন্দ্রীয় ব্যাংকের আইটি নিরাপত্তার দায়িত্ব পালন করে।
নতুন বিভাগ কেন্দ্রীয় ব্যাংকের আর্থিক লেনদেন ও সাইবার নিরাপত্তা নিশ্চিত করার দায়িত্ব পালনের পাশাপাশি দেশের ব্যাংক খাতের সাইবার নিরাপত্তার জন্য নীতি প্রণয়ন এবং সময়ে সময়ে প্রয়োজনীয় পরামর্শ দেবে। নতুন বিভাগে বাংলাদেশ ব্যাংকের আইটি বিশেষজ্ঞদের পাশাপাশি ব্যাংকের বাইরে থেকেও বিশেষজ্ঞদের নিয়োগ দেওয়া হতে পারে বলে জানা গেছে।
গত ফেব্রুয়ারিতে নিউইয়র্ক ফেডারেল রিজার্ভ ব্যাংকে থাকা বাংলাদেশ ব্যাংকের হিসাব থেকে ১০ কোটি ১০ লাখ ডলার সরিয়ে নেয় হ্যাকাররা। বাংলাদেশ ব্যাংকের সিস্টেমে ঢুকেই সুইফট বার্তার মাধ্যমে হ্যাকাররা অর্থ সরানোর নির্দেশ পাঠায় ফেডারেল রিজার্ভে।
রিজার্ভ চুরির পর কেন্দ্রীয় ব্যাংকের আর্থিক লেনদেন ব্যবস্থা নিরাপদ করতে নেটওয়ার্ক ব্যবস্থায় ব্যাপক পরিবর্তন আনার কাজ শুরু হয়েছে। কেন্দ্রীয় ব্যাংকের যেসব নেটওয়ার্কে আর্থিক লেনদেন হয়, সেসব নেটওয়ার্কে ইন্টারনেট সংযোগ না রাখার সিদ্ধান্ত হয়েছে। এ জন্য আর্থিক লেনদেনের নেটওয়ার্ক ও সাধারণ ব্যবহারকারীদের নেটওয়ার্ক আলাদা করা হচ্ছে। এরই মধ্যে এর কাজ শুরু করেছে কেন্দ্রীয় ব্যাংক। কেন্দ্রীয় ব্যাংকের প্রতিটি কম্পিউটারের জন্য আলাদা ‘পোর্ট’ হচ্ছে। অর্থাৎ নির্দিষ্ট কম্পিউটারের জন্য নির্দিষ্ট সংযোগ ব্যবস্থা এবং ওই সংযোগ কর্মকর্তার নামে নির্দিষ্ট আইপি ঠিকানা দেওয়া হবে।
এ ছাড়া কেন্দ্রীয় ব্যাংকের ব্যাচ, আরটিজিএস, সিআইবি অনলাইন, কোর ব্যাংকিং অ্যাপ্লিকেশন সেবায় ইন্টারনেট সংযোগ আছে কি-না তা পরীক্ষা করা হচ্ছে। একই সঙ্গে দেশের বাণিজ্যিক ব্যাংকগুলোর সঙ্গে লেনদেনের নেটওয়ার্ক ও ইন্টারনেট বিচ্ছিন্ন রাখার নির্দেশ দিয়েছে বাংলাদেশ ব্যাংক। সম্প্রতি এক চিঠিতে ব্যাংকগুলোর প্রধান নির্বাহীদের এ নির্দেশনা দেওয়া হয়েছে। আর্থিক লেনদেন ব্যবস্থা লোকাল এরিয়া নেটওয়ার্ক (এলএএন) ও ওয়াইড এরিয়া নেটওয়ার্ক (ডবি্লউএএন) ব্যবস্থায় হবে। বর্তমানেও এ ব্যবস্থায় আর্থিক লেনদেন হয়; কিন্তু বাংলাদেশ ব্যাংক মনে করছে, ব্যাংকিং খাতের কোথাও কোথাও এ ব্যবস্থার সঙ্গে ইন্টারনেট যুক্ত রয়েছে। আরটিজিএসের সঙ্গে ইন্টারনেট যুক্ত থাকতে পারে বলে মনে করেন কেন্দ্রীয় ব্যাংকের কর্মকর্তারা।
এদিকে রিজার্ভ চুরির পর বাংলাদেশ ব্যাংক যে মামলা করেছিল তার আলামত হিসেবে ব্যাংকের ৫৩টি কম্পিউটার ও ১৭টি সার্ভার জব্দ করতে যাচ্ছে সিআইডি। সিআইডি এ মামলার তদন্ত করছে। এর আগে এই ৫৩টি কম্পিউটার ও সার্ভারের ‘অবিকল নকল’ তৈরি করে তদন্তের প্রয়োজনে তা নেয় সিআইডি। এখন মূল কম্পিউটার ও সার্ভার নেওয়া হবে। এসব সার্ভার ও কম্পিউটারে ব্যাপক ম্যালওয়্যার পেয়েছে সিআইডি। মূল নেটওয়ার্ক দেখাশোনা হতো
যে কম্পিউটারে তার নিরাপত্তাহীনতাও
অত্যন্ত নাজুক।
সংশ্লিষ্টরা জানান, সার্ভারগুলো সিআইডি নিয়ে নিলে কেন্দ্রীয় ব্যাংক এসব সার্ভারের মাধ্যমে যেসব সেবা দিত সেগুলো ব্যাহত হবে। যদিও এরই মধ্যে কিছু বিকল্প সার্ভার তৈরি করা হয়েছে; কিন্তু সেগুলোতে অভ্যস্ত হতে সময় লাগবে। জানা গেছে, যেসব সার্ভার সিআইডি নেবে তার মধ্যে রুট ডিসি, ফাইল সার্ভার-২, ফাইল সার্ভার-৩, এডিসি-১ ও রিত্রুক্রটমেন্ট সার্ভার অন্যতম।