আউট সোর্সিংয়ে ২ শতাধিক নারী-পুরুষের কর্মসংস্থান

তথ্যপ্রযুক্তির ছোঁয়া ও জ্ঞান শিক্ষিত যুবক জাহাঙ্গীর সরকারের জীবন পাল্টে দিয়েছে। গ্রামে খুলে বসেছে আউট সোর্সিং ব্যবসা। তার প্রতিষ্ঠানে নিয়মিত কাজ করে ৩৫ জন। প্রশিক্ষণ দিয়েছে দুশ’ বেকার শিক্ষিত ও অর্ধশিক্ষিত নারী ও পুরুষকে। তারা প্রতি মাসে ১০ হাজার থেকে দুই লাখ টাকা আয় করছে।

জেলা সদরের সীমান্তবর্তী গ্রাম দূরারকুটি। বিকেল হলে মোটরসাইকেল নিয়ে উঠতি বয়সের যুবকরা নেশা খেতে ছুটে যেত। এখন ছুটে যায় ল্যাবটব কাঁধে ঝুলিয়ে। তবে নেশা খেতে নয়। ছুটে যায় আউট সোর্সি নামক তথ্যপ্রযুক্তি কাজ শিখতে। বিনা পয়সায় জাহাঙ্গীর সরকার তার প্রতিষ্ঠানে আউট সোর্সিংয়ের কাজটি প্রশিক্ষণ দিয়ে থাকে। প্রশিক্ষণপ্রাপ্তদের তিনি কাজ দেন। তার প্রতিষ্ঠানে আবার বাড়িতে বসেও কাজ করতে পারে।

প্রথমে প্রতিষ্ঠানটি শুরু হয়ে ছিল ফ্রিলেন্স কমিউনিটি নামে। ২০১৪ সালে অক্টোবর মাসে। নিজ বাড়িতে এই ফ্রিল্যান্স আয়ের কাজ শুরু হয়। আইটি সম্পর্কে ভালবাসা থেকে জাহাঙ্গীর সরকার কাজটি শুরু করে। বর্তমানে তার প্রতিষ্ঠানটি নাম পাল্টে নতুন নাম রেখেছে পাসপ্রেফটিব ডিজাইন এ্যান্ড টেকনোলজি। তার প্রতিষ্ঠানটি দিন রাত ২৪ ঘণ্টা খোলা। কর্মীরা আসে কাজ করে চলে যায়। জাহাঙ্গীর শুধু কাজের সুন্দর পরিবেশ তৈরি করে দিয়েছে। নিজেও বসে বসে পৃথক একটি রুমে ল্যাবটব নিয়ে কাজ করছেন।

তার প্রতিষ্ঠানে নারী ও পুরুষদের পৃথক সুন্দর পরিবেশে কাজের ব্যবস্থা আছে। সকলে নিঃশব্দে মনোযোগ দিয়ে ল্যাবটবে ডিজাইনসহ নানা কাজ করছে। কারও যেন অন্যদিকে তাকানোর সময় নেই। তার প্রতিষ্ঠানে পাসপ্রেফটিক ডিজাইন এ্যান্ড টেকনোলজি, কমিউনিটি (এফও), এ্যাসোসিয়েট অব ফ্রিল্যান্সসিং এ্যান্ড আউট সোর্সিং, আউট সোর্সিং মার্কেটিংসহ তথ্যপ্রযুক্তির সকল ধরনের কাজ সেখানে করা হয়।

এই প্রতিষ্ঠানটির মালিক ও উদ্যোক্তা জাহাঙ্গীর সরকার জাতীয় বিশ্ববিদ্যালয় থেকে মার্কেটিংয়ে অনার্স মাস্টাস পাস করেছেন। তথ্যপ্রযুক্তির প্রতি ছিল তার ভালবাসা। লেখাপড়া শেষে কিছুদিন ঢাকায় প্রাইভেট টিভি চ্যানেলে কয়েকটি নাটক তৈরির কাজ করেছে। কিন্তু তার ভাল লাগেনি।

ঢাকা শহরের জীবন তার ভাল লাগেনি। সবসময় মন কেঁদেছে গ্রামে গিয়ে কিছু করবে। ২০১৪ সালে গ্রামে ফিরে নিজ বাড়িতে একা একা বসে আউট সোর্সিংয়ের কাজ শুরু করে। মানুষজনকে বুঝাতে থাকে। বিশেষ করে তরুণ শিক্ষিত অর্ধশিক্ষিত যুবক ও যুবানারীদের। তারা প্রথমে পাত্তা দিত না। কম্পিউটারে কাজ করে। তাও আবার বাড়িতে বসে অর্থ রোজগার। এটা সম্ভব কী। মানুষ দৃশ্যমান কাজ করে যেখানে মজুরি দিতে চায় না। সেখানে বিদেশীদের কাজ করে তারা আবার অনলাইন ব্যাংকিংয়ের মাধ্যমে অর্থ এ্যাকাউন্টে দিয়ে দিবে।

আউট সোর্সিং কাজ করে জাহাঙ্গীর সরকারের জীবনে সচ্ছলতা আসে। গ্রামে প্রচার পায়। তার সচ্ছলতা দেখে দুই, একজন ভিড়তে থাকে। আউট সোর্সিং করে তারাও অর্থ আয় করতে থাকে। এভাবে প্রায় দুইশ’ জনকে প্রশিক্ষণ দেয়।

দূরারকুটি বাজারে ৭ হাজার টাকা দিয়ে কয়েক রুম বিশিষ্ট বাসা ভাড়া নেয়। সেখানে আউট সোর্সিং ফার্ম খুলে বসে। এই ফার্মে ৩৫ জন কর্মী নিয়মিত কাজ করছেন। প্রশিক্ষণ দুশ’ জন কর্মী অন্য পেশার পাশাপাশি অবসর সময়ে ঘরে বসে আউট সোর্সিংয়ের কাজ করছে। এভাবে যত কাজ তত আয়। সর্বনিম্ন ১০ হাজার থেকে দুই লাখ টাকা আয় করা যায়।

জাহাঙ্গীর সরকার জানান, তিনি গ্রাফিক ডিজাইন, আউট সোর্সিং মার্কেটিং, অনলাইন মার্কেটিং, টি শার্ট ডিজাইনের কাজ বেশি করছে। তার প্রতিষ্ঠানে বিনা পয়সায় প্রশিক্ষণের কাজ চলছে। প্রতি মাসে ১০ থেকে ২০ জন প্রশিক্ষণ নিচ্ছেন। বর্তমানে জাহাঙ্গীর সরকারের ব্যক্তিগতভাবে মাসিক আয় প্রতি মাসে এক থেকে দুই লাখ টাকা পর্যন্ত।

লালমনিরহাটের জেলা প্রশাসক মোঃ হাবিবুর রহমান জানান, দূরারকুটির শিক্ষিত যুবক জাহাঙ্গীর সরকারের আউট সোর্সিংয়ের কাজের কথা শুনে তার প্রতিষ্ঠানে ভিজিট যায়। পরীক্ষা-নিরীক্ষা করে দেখেছি মাসে জাহাঙ্গীর সরকার এক থেকে সর্বোচ্চ দুই লাখ টাকা আয় করেছে। তার প্রতিষ্ঠানকে জেলা পরিষদের প্রশাসকের মাধ্যমে দুই লাখ টাকা ঋণ সহায়তা দেয়া হয়েছে। চিন্তা ভাবনা রয়েছে তাকে শহরে কোন সরকারী ভবনে নিয়ে আসা যায় কিনা। তাকে একটু সাপোর্ট দিতে পারলে আউট সোর্সিংয়ের মাধ্যমে শত শত শিক্ষিত, অর্ধশিক্ষিত ছেলে মেয়েদের কর্মসংস্থানের সুযোগ হবে। যা ডিজিটাল বাংলা গড়তে সহায়ক। বর্তমান সরকার আউট সোর্সিংয়ের মাধ্যমে বেকার সমস্যার সমাধানে আগ্রহী সেই কার্যক্রম সফল হবে।