পেনশনে যাওয়া কর্মকর্তা-কর্মচারীদের ভোগান্তি কমাতে আদেশ জারি করেছে অর্থ বিভাগ। ফলে অবসরোত্তর ছুটিতে (পিআরএল) যাওয়া কর্মকর্তা-কর্মচারীদের পেনশন আবেদনের জন্য অনাপত্তিপত্র জোগাড় করতে হবে না। আবেদন পাওয়ার এক মাসের মধ্যে পেনশন মঞ্জুরকারী কর্তৃপক্ষই না-দাবি প্রত্যয়নপত্র সংগ্রহ করবেন। তারা ব্যর্থ হলে আবেদনকারীর কাছে কোনো দাবি নেই ধরে আবেদনের নিষ্পত্তি করবেন। আবেদনপত্র জমা দেওয়ার পর এক মাসের মধ্যে পেনশনের চেক হাতে পাবেন গ্রহীতা।
অর্থ মন্ত্রণালয়ের প্রবিধি অনুবিভাগের যুগ্মসচিব মো. শাহজাহান স্বাক্ষরিত পরিপত্রে বলা হয়েছে, ‘পেনশন মঞ্জুরকারী কর্তৃপক্ষ পেনশন আবেদন প্রাপ্তির এক মাসের মধ্যে না-দাবি প্রত্যয়নপত্র সংগ্রহ করিতে ব্যর্থ হইলে আবেদনকারীর কাছে কোন দাবি নাই ধরিয়া তাহার পেনশন কেইস নিষ্পত্তির ব্যবস্থা করিতে হইবে।’
‘পেনশন সহজীকরণ আদেশ, ২০০৯-এ পরিবর্তন, পরিবর্ধন, সংশোধন ও সংযোজন’ শিরোনামে জারি করা পরিপত্রে অস্থায়ীভাবে নিয়োগপ্রাপ্ত ও ন্যূনতম ৫ বছর চাকরিকারীদের পেনশন চালু করার ঘোষণা দিয়ে বলা হয়েছে, রাজস্ব খাতে স্থায়ী শূন্যদের বিপরীতে অস্থায়ীভাবে নিয়োজিত এবং ন্যূনতম পাঁচ বছর চাকরি করেছেন এমন কর্মচারীদের পেনশন পাওয়ার জন্য বাংলাদেশ সার্ভিস রুলস সংশোধন করা হবে।
এতদিন পেনশনারকে নিজে বিভিন্ন দপ্তরে ঘুরে ঘুরে অনাপত্তিপত্র জোগাড় করতে হতো। এসব অনাপত্তিপত্র জোগাড় করতে কোনো কোনো ক্ষেত্রে বছরখানেক সময়ও লেগে যেত। পেনশন পাওয়া মানেই ঘুষের মাধ্যমে ফাইল ছাড় করিয়ে আনা। এই আদেশের ফলে এখন থেকে আর পেনশনভোগীকে ওইসব কাগজপত্র সংগ্রহ করতে হবে না। সংশ্লিষ্ট অফিসই এগুলো সংগ্রহ করবে। ফলে পেনশনারদের ভোগান্তি অনেকটাই কমে আসবে।
গত ৩০ এপ্রিল জারি করা পরিপত্র অনুযায়ী, চাকরিজীবী তার চাকরিতে থাকাবস্থায় বা অবসরে যাওয়ার পরে যে কোনো সময়ই তার পরিবারের যে কোনো এক বা একাধিক সদস্যকে তার পারিবারিক পেনশনের সম্পূর্ণ বা অংশবিশেষের উত্তরাধিকারী মনোনীত করতে পারবেন।
বর্তমানে পিআরএলে যাওয়ার পর ছুটি নগদায়ন মঞ্জুরি (লাম্পগ্র্যান্ট) ও ভবিষ্যৎ তহবিলের (প্রভিডেন্ট ফান্ড) অর্থ পান সরকারি চাকরিজীবীরা। নতুন আদেশে লাম্পগ্র্যান্ট ও ভবিষ্যৎ তহবিলের চেক পিআরএলে যাওয়ার এক মাস আগেই কর্মকর্তা-কর্মচারীর হাতে দেওয়ার কথা পরিপত্রে বলা হয়েছে। এ জন্য চাকরিজীবীকে একটি বিল দাখিল করতে হবে। তা পাওয়ার পর প্রাপ্য ছুটির (সর্বোচ্চ ১৮ মাসের মূল বেতনের সমপরিমাণ) নগদায়ন অর্থাৎ লাম্পগ্র্যান্টের অর্থ এবং সর্বমোট ভবিষ্যৎ তহবিলের স্থিতি হিসাবরক্ষণ অফিস সংশ্লিষ্ট চাকরিজীবীর পিআরএলে যাওয়ার দুই মাস আগে অগ্রিম তারিখের চেকের মাধ্যমে তার নিয়ন্ত্রণকারী কর্তৃপক্ষ বা অফিসপ্রধানের কাছে পাঠাবেন। নিয়ন্ত্রণকারী কর্তৃপক্ষ বা অফিসপ্রধান পিআরএলে যাওয়ার এক মাস আগে ওই চেক চাকরিজীবীকে হস্তান্তর করবেন।
পরিপত্রে বলা হয়েছে, হিসাবরক্ষণ অফিস সময়মতো চেক দিতে ব্যর্থ হলে প্রত্যেকটি ক্ষেত্রে চাকরিজীবীর পিআরএলে যাওয়ার অনধিক সাত দিন আগে বিলম্বের কারণ ব্যাখ্যা করে অর্থ মন্ত্রণালয়ের প্রবিধি অনুবিভাগ ও হিসাব মহানিয়ন্ত্রকের কার্যালয়কে লিখিতভাবে জানাতে হবে।
কোনো চাকরিজীবী উত্তরাধিকার মনোনয়ন না করে কেউ মারা গেলে পারিবারিক পেনশন ও আনুতোষিক গ্রহণে সর্বশেষ নিয়ন্ত্রণকারী কর্তৃপক্ষ উত্তরাধিকার নির্ধারণ করবে। মৃত পেনশনারের স্ত্রী/স্বামী পুনরায় বিবাহবন্ধনে আবদ্ধ হন নাইÑ এ মর্মে স্থানীয় পৌরসভা, ইউনিয়ন পরিষদ, মেট্রোপলিটন এলাকার ক্ষেত্রে কাউন্সিলর বা সর্বশেষ নিয়ন্ত্রণকারী কর্তৃপক্ষের সার্টিফিকেট গ্রহণযোগ্য হবে। এ জন্য আদালত থেকে সাকসেশন সার্টিফিকেট (উত্তরাধিকার সনদ) দেওয়ার বাধ্যবাধকতা থাকবে না। নিহত পেনশনারের বিধবা স্ত্রীর পুনঃবিবাহ না করার অঙ্গীকারনামা দাখিলের শর্ত ৫০ বছরের ঊর্ধ্ব বয়সী বিধবার ক্ষেত্রে প্রযোজ্য হবে না।
বর্তমানে সরকারি চাকরিজীবীদের নিজেদের ভবিষ্যৎ তহবিলে জমা অর্থের ওপর সুদ বা ইনক্রিমেন্ট দেয় সরকার। তবে অনেক চাকরিজীবী এর কোনোটিই গ্রহণ করতে রাজি হন না। তাদের জন্য সুদ বা ইনক্রিমেন্টের বদলে সরকার তাদের চাঁদা বা অনুদান দেওয়ার বিষয়টি বিবেচনা করা হবে বলে পরিপত্রে বলা হয়েছে।