এশিয়ান ফুটবলে বাংলাদেশকে শীর্ষে দেখতে চান সালাউদ্দিন

টানা তৃতীয়বারের মতো বাংলাদেশ ফুটবল ফেডারেশনের (বাফুফে) সভাপতি নির্বাচিত হয়েছেন কাজী মো. সালাউদ্দিন (২০০৮, ২০১২ ও ২০১৬ সাল)। আবারও চার বছরের জন্য দায়িত্ব পাওয়ায় বাংলাদেশের ফুটবলকে আরও এগিয়ে নিয়ে যেতে চান কিংবদন্তি এই ফুটবলার। নতুনভাবে বাফুফের সভাপতির দায়িত্ব পাওয়ার পর বাংলাদেশের ফুটবল নিয়ে নিজের পরিকল্পনা ও লক্ষ্য সম্পর্কে বিস্তারিত যা বললেন কাজী সালাউদ্দিন, তার চুম্বক অংশ তুলে ধরেছেন আমাদের সময়ের ক্রীড়া প্রতিবেদক এম.এম. মাসুকÑ

য় প্রশ্ন : বাংলাদেশ অনূর্ধ্ব-১৪ নারী ফুটবল অপরাজিত চ্যাম্পিয়ন হয়েছে এবং আপনি আবারও নির্বাচিত হলেন। এ দুটি জয়কে কীভাবে দেখছেন?

সালাউদ্দিন : আসলে ফুটবল সহজ খেলা নয়। ফুটবল ২০৯ দেশ খেলে। ৪/৫টি দেশ খেলে না। এটা সোজা কাজ নয়। আমরা কাজ আরম্ভ করেছি অনেক আগে থেকে। চেষ্টা করছি উন্নতি করতে। তা তো সময় নেবে। আপনারা খবর পেয়েছেন যে, অনূর্ধ্ব-১৪ নারী দল চ্যাম্পিয়ন হয়েছে। অনূর্ধ্ব-১৬ ছেলেরাও চ্যাম্পিয়ন হয়েছে। আমরা যে কাজগুলো করেছি, এ কাজগুলোর রেজাল্ট আপনারা দেখতে পাবেন। এ জন্য দু-চারজন যদি না জেনে টেলিভিশনের টক শো করে ফুটবল ফেডারেশনকে ব্যর্থ বলে, এটা দেশের জন্য দুঃখজনক। আপনারা ধৈর্য ধরেন, আমরা কাজ করে যাচ্ছি। আপনারা যাদের দেখছেন সবাই আন্তর্জাতিক ফুটবলে অভিজ্ঞ। আমাদের আগ্রহ হলো ফুটবল। আমাদের রক্তে ফুটবল মিশে আছে। আমার সঙ্গে যেসব সংগঠক এসেছে, দেখবেন একেক জনের ২০/২২ বছরের অভিজ্ঞতা আছে। আমরা এখানে এসেছি মূলত কাজ করতে। ফুটবলটাকে ভালবাসি। ভালবাসাটাই যথেষ্ট নয়। এটা সোজা কাজ নয়। এটা খুবই কঠিন কাজ। যেখানে একটি প্লেয়ারের বেতন যদি সপ্তাহে ৪ কোটি টাকা হতে পারে ওই খেলাটাকে ওপরে নেওয়া কষ্ট আছে। আমি বিশ্বাস করি, আপনারদের সমর্থন আছে। আমরা যদি কাজ করি, মেয়েদের টিম যেভাবে চ্যাম্পিয়ন হয়েছে ছেলেদেরও আমরা আরও এগিয়ে নিয়ে যেতে পারব।

য় প্রশ্ন : মেয়েদের ফুটবল নিয়ে কোনো রোডম্যাপ আছে কিনা?

সালাউদ্দিন : মেয়েদের ফুটবলটা এখনো বিশ্বে ওই প্রতিযোগিতাপূর্ণ লেভেলে যায়নি। যে লেভেলটা ছেলেদের ফুটবলে আছে। আমরা যদি মেয়েদের জন্য কাজ করি, তাহলে সাফল্য পাব। সাফল্য পাওয়া একটু সহজ হবে। জাতীয় দল নিয়ে আমি চিন্তা করছিলাম। কিন্তু শেষ দুই মাস নির্বাচন নিয়ে যে নাটক হয়েছে, এ নাটকে মূলত আমি নিশ্চিত ছিলাম না যে ভোটাররা আমাকে আনবে নাকি আনবে না। আমি যদি অতিরিক্ত কাজ করে রাখি, তারপর যদি বিদেশের কোচ বা কারো সঙ্গে আলাপ করে রাখি, তারপর যদি আমি না আসি তাহলে এটা বেকার হয়ে যাবে। গতকাল রাত থেকে চিন্তা করেছি। আগামী ১০ দিনের মধ্যে এ নিয়ে চূড়ান্ত কাজ করব।

য় প্রশ্ন : আগামী ৪ বছর জেলার ব্যাপারে আপনার দৃষ্টিভঙ্গি কেমন হবে?

সালাউদ্দিন : জেলা আমাকে অনেক সাপোর্ট দিয়েছে। জেলা ও কাবের সাপোর্টেই আমি এগিয়েছি। প্রত্যেকটা জিনিস একটু সময় লাগবে। ৪৭টি জেলার লিগ সম্পূর্ণ হয়েছে। শতকরা ৮০ ভাগ লিগ। যারা করতে পারেনি, হয়তো তাদের মাঠের সমস্যা ছিল কিংবা সংগঠনের সমস্যা ছিল, না হলে অন্য সমস্যা ছিল। যে কারণে তারা করতে পারেনি। একদিনেই যে সব হয়ে যাবে এটা তো হতে পারে না।

য় প্রশ্ন : ইশতেহারে দেওয়া কোন বিষয়গুলোর ওপর প্রাধান্য দেবেন?

সালাউদ্দিন : নির্বাচনী ইশতেহারে যা দেওয়া হয়েছে আমি চেষ্টা করব সবগুলো বাস্তবায়ন করতে। তবে ব্যক্তিগতভাবে আমি বলতে চাই, আবারও আমি তিনটি বিষয়ের দিকে নজর দেব। জেলা, কাব ও জাতীয় দল। এগুলো আমি ব্যক্তিগতভাবে প্রাধান্য দেব। তবে ফেডারেশন চালাতে গেলে, দেশের সব কিছু করতে গেলে, যে ইশতেহার দেওয়া হয়েছে, তাতে সব কিছু কাভার করা হয়েছে। এর মধ্যে স্কুল, একাডেমি, সবগুলোই কাভার করব। কিন্তু ফুটবলের সত্যিকারের সাফল্য আসবে, তা হলো কাবের উন্নয়ন, জেলার উন্নয়ন এবং জাতীয় দল। এগুলোই হলো মূল।

য় প্রশ্ন : আগামী চার বছর চ্যালেঞ্জ কিনা?

সালাউদ্দিন : আমি যখন ৮ বছর আগে দায়িত্ব নিয়েছিলাম, তখন মাঠে খেলা হতো না। এটা সত্যি কথা। এখন খেলা হয়, না বলতে পারবেন না। আপনি বলতে পারবেন সম্প্রতি জাতীয় দলের পারফরম্যান্সটা ভালো না। কিন্তু খেলা তো সব জায়গায় হচ্ছে। আর এটা নিয়মিত করলে অবশ্য ফুটবল এগিয়ে যাবে। আমরা একটা স্টেজে চলে আসছি, এখন ফাইনাল স্টেজে। পরবর্তী ৪ বছর বাংলাদেশ ফেডারেশনের জন্য খুবই গুরুত্বপূর্ণ। বাংলাদেশ ফুটবলের জন্যও। আমি মনে করি এটা হবেই।

য় প্রশ্ন : আগামী চার বছর পর বাংলাদেশের ফুটবলকে আপনি কোথায় দেখতে চান?

সালাউদ্দিন : আমি যেটা দেখতে চাই তা হলো এশিয়ায় যেমন শেখ জামাল কাব এএফসির দ্বিতীয় পর্যায়ে খেলেছে। আমি দেখতে চাই যে টপ এশিয়ান কাপটা খেলি। দুই নম্বর হলোÑ ফুটবলকে এমন একটা জায়গায় রেখে যেতে চাই পরবর্তীতে যারা আসবে তাদের যেন বেশি কষ্ট না করতে হয়, আমাদের প্রোগ্রামটাকে ফলো করলেই উন্নতি করতে পারে।

য় প্রশ্ন : জেলা-উপজেলা পর্যায়ে একাডেমি করা চ্যালেঞ্জিং হবে কিনা?

সালাউদ্দিন : এটা সাধারণ ব্যাপার ও খুবই আকাক্সিক্ষত প্রজেক্ট। আপনি যদি শুরু করেন, আমি যদি সবগুলো জেলাকে নাও পারি, সবগুলো উপজেলাও না পারি, আমি যদি ২০/৩০টি পারি, এটা হবে শুরু। এটা হবে এগিয়ে যাওয়া। যদি সবগুলো পারি, তাহলে আলহামদুলিল্লাহ। আগে এটা শুরু করি। পরে যে আসবে সে করবে।

য় প্রশ্ন : ছোট-ছোট কমিটিতে পরিবর্তন আনা হবে কিনা?

সালাউদ্দিন : আগের বার আমি কমিটি করেছি, চেয়ারম্যান সিলেক্ট করে দিয়ে। চেয়ারম্যানকে বলেছি কমিটি বানিয়ে নিতে। এখন আমি নিজে কমিটি করব, আমি পূর্ণ দায়-দায়িত্ব নেব। এবার যদি কোনো কমিটি ব্যর্থ হয়, তাহলে পরিবর্তন করা হবে। জবাব দিতে হবে। এখন আমি আমার চূড়ান্ত কাজ করতে যাচ্ছি। কোনো লোক কোনো রকম কথা বলতে না পারে।

য় প্রশ্ন : নতুন করে শুরু করলেন। ভিশন ২০২২ সম্পর্কে কিছু বলবেন?

সালাউদ্দিন : আমাকে একটা ভিশন রাখতে হবে। আমি নির্বাচন করে পাস করে এসেছি। আমি সবাইকে ধন্যবাদ জানাই। যারা ভোট দেননি তাদেরও। সবার কাছে কৃতজ্ঞ।