আগামী ২০১৬-১৭ অর্থবছরের বাজেটে খাদ্য ব্যবস্থাপনায় আমূল পরিবর্তন আসছে। এই পরিবর্তনে দেশে খাদ্য নিরাপত্তার জন্য পল্লী রেশন ব্যবস্থার চিন্তাভাবনা করা হচ্ছে। একই সঙ্গে কৃষকদের কাছ থেকে সরাসরি চাল-গম কেনার উদ্যোগ নেয়া হচ্ছে। আর খাদ্য কেনার ক্ষেত্রে উৎপাদনের ব্যয়ের সঙ্গে সংগতি রেখে দাম ধরা হবে। যেন চাষিরা কোনোভাবেই ক্ষতিগ্রস্ত না হয়। পাশাপাশি খাদ্য বিতরণ ও বিক্রির প্রক্রিয়ার ক্ষেত্রে সংস্কার আনার পরিকল্পনার বিষয়টি গুরুত্ব সহকারে বিবেচনায় রাখা হচ্ছে। কৃষি উপকরণে ভর্তুকি অব্যাহত রাখা হবে। খাদ্যপরিধারণ কমিটির প্রভাবশালী সদস্য হিসেবে অর্থমন্ত্রী আবুল মাল আবদুল মুহিত ইতিমধ্যে কৃষিমন্ত্রী বেগম মতিয়া চৌধুরী ও খাদ্যমন্ত্রী মো. কামরুল ইসলামকে চিঠি দিয়েছেন। তিনি মূলত খাদ্য ব্যবস্থাপনা সম্পর্কে বর্তমান অবস্থার প্রেক্ষিতে এই চিঠি দেন বলে সংশ্লিষ্ট সূত্রে জানা গেছে। আগামী বাজেটে যেন এর প্রতিফলন থাকে সে ব্যাপারেও ইংগিত দেন তিনি।
এদিকে খাদ্য মন্ত্রণালয় সূত্রে জানা গেছে, সরকার সাধারণ মানুষের খাদ্য নিরাপত্তার কথা চিন্তা করে পল্লী রেশনের বিষয়টি নিয়ে কাজ করছে। এ বিষয়ে খুব শিগগিরই একটি প্রতিবেদন উপস্থাপন করা হবে। যেখানে সরকারের নীতিনির্ধারকদের মতামত নেয়ার সুযোগ থাকবে। এই পল্লী রেশনের জন্য সরকার ভর্তুকি দিতে প্রস্তুত। অর্থমন্ত্রী এ ব্যাপারে তার চিঠিতে বেশ কিছুটা আভাস দিয়েছেন। তিনি উল্লেখ করেছেন, সামাজিক সুরক্ষার খাতিরে সামান্য কিংবা বিনা মূল্যে খাদ্য বিতরণ করা যেতে পারে। কিছু ভর্তুকি দিয়ে একটি বৃহত্তর গোষ্ঠীকে খাদ্য সরবরাহ করা প্রয়োজন। এই ভর্তুকি কোনো কোনো ক্ষেত্রে সরকার সরাসরি দেবে। আবার অনেক ক্ষেত্রে অন্যান্য প্রতিষ্ঠানকে এই ব্যবস্থা করতে হবে।
এদিকে আগামীতে আর কোনো খাদ্য গুদাম স্থাপন করা নাও হতে পারে বলে আভাস পাওয়া গেছে। তবে পুরনো গুদামগুলোর উন্নয়ন করা হবে। সরকারি গুদামে শুধুমাত্র সরকারের খাদ্য মজুদ থাকবে। আর সরকারি মজুদ সংগ্রহের জন্য সঠিক সময়ে ও সঠিক মওসুমে খাদ্য কেনার বাধ্যবাধকতা আসছে। কিভাবে সরাসরি কৃষকদের কাছ থেকে ধান, চাল, গম কেনা যায় সে ব্যাপারে সরকারের পক্ষ থেকে খুব দ্রুত সিদ্ধান্ত নেয়া হবে বলে জানা গেছে। এ ব্যাপারে অর্থমন্ত্রী তার চিঠিতে বলেছেন, এই মজুদ সংগ্রহের জন্য আমাদের খাদ্য কেনা একটি উত্তম পন্থা। কারণ এই কার্যক্রমের মাধ্যমে আমরা বাজার স্থিতিশীল রাখতে পারব। শুধু তাই নয়, যারা খাদ্যের বাজারে অস্থিতিশীল তৈরি করে তাদেরও এই কার্যক্রমের মাধ্যমে মোকাবিলা করতে পারব।
জানা গেছে, আগামী খাদ্য বাজেটে খাদ্য কেনা থেকে শুরু করে মজুদ ও বিতরণের বিষয়টি নতুনভাবে ঢেলে সাজানোর চিন্তাভাবনা চলছে। বাজেটে ভর্তুকি অব্যাহত রাখা হবে। এর পাশাপাশি বিদেশ থেকে গম কিংবা চাল কেনার ক্ষেত্রেও নতুনভাবে ব্যবস্থা নেয়া হবে। সরকার নিজেরাই গম সংগ্রহ করবে। যেন গমের বাজার পুরোপুরিভাবে ব্যক্তি মালিকানা খাতে চলে না যায়। সরকারিভাবে চাল আমদানির ক্ষেত্রে বিশেষ সময় বিবেচনা করা হবে। অর্থাৎ কোনো দুর্যোগকালে কিংবা শস্য ফলনে কোনো ধরনের বিপর্যয় আসলে কেনা হবে। অভ্যন্তরীণ বাজারে সরকার সবসময় সক্রিয় থাকবে। যে কারণে অর্থমন্ত্রী তার চিঠিতে উল্লেখ করেছেন, আমাদের নিয়মিতভাবে সংগ্রহ কার্যক্রম চালাতে হবে। তবে সেখানে মূল্য নির্ধারণের জন্য বাজারকে অনুসরণ করা হবে। আর বাজার মূল্য নির্ধারণের জন্য উৎপাদন খরচ অবশ্যই বিবেচনা করা হবে। যে কারণে বাজার মূল্যের দিকে সব সময় নজর রাখা হবে।
জানা গেছে, আগামী বাজেটে খাদ্য উৎপাদনের উপকরণের জন্য ভর্তুকি অব্যাহত থাকবে। বিশেষ করে বীজ, সার ও পানি সরবরাহে ভর্তুকির ব্যবস্থা রাখা হবে। ফসলের রোগবালাই থেকে কিভাবে ফসলকে বাঁচানো যায় তার একটি দিকর্নিদেশনা থাকবে। এর জন্য সরকারকে প্রস্তুত থাকার ব্যাপারে অর্থমন্ত্রী পরামর্শ দিয়েছেন। এর পাশাপাশি ফসলের গবেষণা ও সম্প্রসারণের ব্যাপারে সতর্কতা অবলম্বনের তাগিদ দেয়া হয়েছে।
জানা গেছে, বর্তমানে সরকারের খাদ্য মজুদের জন্য মোট ১৯ লাখ টনের গুদাম রয়েছে। বর্তমানে বছরে ৪০ লাখ টন গম ব্যবহার হচ্ছে।