রূপপুরে শিগগিরই শুরু মূল কাজ

সরকারের আলোচিত প্রকল্প রূপপুর পারমাণবিক বিদ্যুেকন্দ্রের মূল কাজ শুরু করার লক্ষ্যে রাশিয়া থেকে ভারী যন্ত্রপাতি আনার প্রক্রিয়া শুরু হয়েছে। এ জন্য প্রাথমিকভাবে দুটি রুট বিবেচনায় রেখেছে সরকার। এর একটি হচ্ছে— চট্টগ্রাম ও মংলা সমুদ্রবন্দর থেকে নদীপথে রূপপুর সাইট পর্যন্ত এবং অপরটি চট্টগ্রাম ও মংলা সমুদ্রবন্দর থেকে কাজিরহাট পর্যন্ত নদীপথে এবং তারপর সড়কপথে রূপপুর সাইট পর্যন্ত। গত ১৯ এপ্রিল বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি মন্ত্রণালয়ে এক সভায় সম্ভাব্য এই রুট দুটির নাম প্রস্তাব করেন রূপপুর পারমাণবিক বিদ্যুেকন্দ্র স্থাপন (১ম পর্যায়) প্রকল্পের প্রকল্প পরিচালক ড. শৌকত আকবর। বিষয়টি নিশ্চিত করে ড. শৌকত আকবর বাংলাদেশ প্রতিদিনকে বলেন, ‘পারমাণবিক বিদ্যুেকন্দ্র নির্মাণে যেসব ভারী যন্ত্রপাতি বাংলাদেশে আসবে সেগুলো পরিবহনের জন্য আমরা প্রস্তুতি নিয়ে রাখছি। প্রয়োজনীয় মালামাল রাশান ফেডারেশন থেকে সমুদ্রপথে বাংলাদেশের চট্টগ্রাম ও মংলা বন্দরে পৌঁছাবে। বন্দর থেকে প্রকল্প সাইট পর্যন্ত মালামাল পরিবহনে প্রস্তাবিত রুট দুটি বিবেচনা করা হচ্ছে।’ সংশ্লিষ্টরা জানান, বাংলাদেশ রাশান সরকারের মধ্যে স্বাক্ষরিত আন্তঃরাষ্ট্রীয় চুক্তির আওতায় রূপপুর পারমাণবিক বিদ্যুেকন্দ্র প্রকল্পের কাজ চলমান রয়েছে। এর মধ্যে প্রথম পর্যায়ের কাজ আগামী ডিসেম্বরের মধ্যে শেষ হবে। ২০১৭ সাল অর্থাৎ আগামী বছরেই প্রকল্পের মূল কাজ শুরুর কথা রয়েছে। ওই মূল কাজ শুরুর জন্যই রাশিয়া থেকে ভারী যন্ত্রপাতি আনার প্রক্রিয়া শুরু হয়েছে। চুক্তির শর্তানুসারে রাশান ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠান এটমস্ট্রয় এক্সপোর্ট রূপপুর পারমাণবিক বিদ্যুেকন্দ্র নির্মাণের জন্য প্রয়োজনীয় যন্ত্রপাতি ও মালামাল প্রকল্প সাইট পর্যন্ত পরিবহন করবে। তবে ওই মালামাল দেশের অভ্যন্তরে পরিবহনের ক্ষেত্রে যোগাযোগ অবকাঠামো বিশেষ করে নৌ, রেল ও সড়কপথের প্রয়োজনীয় সংস্কারের দায়িত্ব বাংলাদেশের। এ লক্ষ্যে বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি মন্ত্রণালয়ের সচিব সিরাজুল হক খান সংশ্লিষ্টদের সঙ্গে গত সপ্তাহে একটি সভা করেন। সভায় উপস্থিত সূত্রগুলো জানায়, পরমাণু বিদ্যুেকন্দ্রের জন্য যেসব ভারী যন্ত্রপাতি আনা হবে সেগুলো সড়কপথের চেয়ে নৌপথে পরিবহন করাই সুবিধাজনক হবে বলে মনে করছেন সংশ্লিষ্টরা। এ জন্য বেশ কিছু সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছে। মংলা ও চট্টগ্রাম বন্দর হতে পাকশী পর্যন্ত নৌ-রুট জরুরি ভিত্তিতে সংস্কার করে ভারী যন্ত্রপাতি পরিবহনের উপযোগী করতে হবে। প্রয়োজনবোধে ক্যাপিটাল ড্রেজিং পরিকল্পনা ছাড়াও বিশেষ প্রাধিকার সম্পন্ন প্রকল্প গ্রহণ করে এ কাজ সম্পন্ন করতে হবে। এ জন্য নৌপরিবহন মন্ত্রণালয়কে দায়িত্ব দেওয়া হয়েছে। এ ছাড়া চাঁদপুর-পাটুরিয়া নৌরুটে রাত্রিতে পর্যাপ্ত মার্কিং এবং নেভিগেশন লাইটের ব্যবস্থা রাখতে হবে। পাটুরিয়া-রূপপুর নৌরুটে দিনের বেলায় জাহাজ চলাচলের জন্য পর্যাপ্ত চ্যানেল মার্কিংয়ের ব্যবস্থা রাখার জন্যও বলা হয়েছে সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষকে। কর্মকর্তারা জানান, নৌপথ ছাড়াও রেলপথে মালামাল পরিবহনের প্রয়োজন হতে পারে। সেজন্য রাশান ঠিকাদার প্রতিষ্ঠান কী ধরনের মালামাল রেলপথে পরিবহন করতে চায় তার একটি তালিকা রেলওয়েকে জানানোর নির্দেশনা দেওয়া হয়েছে। ২০১৩ সালের অক্টোবরে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা রূপপুর প্রকল্পের ভিত্তি স্থাপন করেন। এরপর পারমাণবিক বিদ্যুেকন্দ্র পরিচালনায় কোম্পানি গঠন করতে সংসদে বিল পাস হয়। এই বিদ্যুেকন্দ্রের ১২০০ মেগাওয়াটের প্রথম ইউনিট ২০২২ সালে এবং সমান ক্ষমতার দ্বিতীয় ইউনিট চালু হওয়ার কথা রয়েছে ২০২৩ সালে। এ লক্ষ্যে এক হাজার ৬২ একর জমির ওপর চলছে রূপপুর পারমাণবিক বিদ্যুেকন্দ্রের প্রথম পর্যায়ের কাজ। এ প্রকল্পের ব্যয় ধরা হয়েছে ১২ দশমিক ৬৫ বিলিয়ন ডলার, যার ৯০ শতাংশ রাশিয়া ঋণ হিসেবে দেবে। কেন্দ্র থেকে যে বিদ্যুৎ পাওয়া যাবে, তার প্রতি ইউনিটের দাম পড়বে সাড়ে তিন টাকা।