ইউসুফপুর তাঁতি পল্লীর নারীদের মাকুর খটখট শব্দে প্রতিনিয়ত চারঘাট এলাকাবাসীর ঘুম ভাঙে। সকালে সংসারের কাজ শুরু হওয়ার আগেই ববিনে সুতা তোলা থেকে শুরু করে সুতায় রঙ লাগানো সেরে নেন তাঁতিরা। এরপর রঙ লাগানো সুতা রোদে শুকাতে দিয়ে তারা সংসারের কাজে হাত দেন। অর্থনৈতিকভাবে নিজেদের ভাগ্য পরিবর্তনে এভাবেই চেষ্টা চালিয়ে যাচ্ছেন রাজশাহীর চারঘাটের ইউসুফপুর এলাকার হাজারো নারী।
সংসারের কাজ সেরে অবসর সময়ে বসে না থেকে তাঁতের কাজ করে স্বাবলম্বী হওয়ার চেষ্টায় ব্যস্ত থাকেন নারীরা। বর্তমানে এই এলাকার প্রায় চার হাজার নারী তাঁতের কাজ করে সংসার চালাচ্ছেন সচ্ছলভাবে। অনেক স্বামী পরিত্যক্তা, বিধবা ও দরিদ্র নারী তাঁতের কাজ করে সুখে-স্বাচ্ছন্দ্যে জীবনযাপন করছেন। ইউসুফপুর এলাকার তাঁতি সুফিয়া বেগম বলেন, আমার বয়স প্রায় ৬০ বছর। ১৩ বছর বয়সে বিয়ের পর থেকেই আমি তাঁতের কাজ করি। আমাদের এখানে প্রায় সব বাড়ির নারীরাই তাঁতের কাজ করেন। সংসারের কাজ সেরে অবসর সময়ে বসে না থেকে এ কাজ করায় আমাদের সংসারে বাড়তি রোজগার হয়। ছেলেমেয়েদের পড়াশোনাসহ সংসার চলে ভালোভাবে। এই এলাকায় আমরা তাঁতের গামছা আর রুমাল তৈরি করি।
তাঁতি ময়না বলেন, ১৭ বছর আগে আমার স্বামী মারা গেছেন। বিয়ের মাত্র সাড়ে তিন বছরের মাথায় দুই সন্তানকে রেখে স্বামী মারা যান। তারপর থেকেই আমি তাঁতের বুননে হাত দেই। শুধু গামছা তৈরি করে আমি আমার সন্তানদের লেখাপড়া শিখিয়ে বড় করেছি, মেয়ের বিয়েও দিয়েছি। আর ছেলের জন্য কিছু টাকা জমিয়েছি। এখন ছেলেটাকে একটা কাজে লাগিয়ে দিতে পারলেই আমার সব আশা পূরণ হবে। শাহানারা বেগম বলেন, অনেক ছোটবেলায় আমার বিয়ে হয়। বিয়ের আগে মাকে দেখতাম তাঁতের কাপড় বুনতেন। আর এখন বিয়ের পর স্বামীর বাড়িতে এসে আমিও সেই একই কাজ করছি। এ কাজে লাভ মোটামুটি ভালোই হয়।
বাংলাদেশের ঐতিহ্যবাহী শিল্পের মধ্যে তাঁত শিল্প অন্যতম। আর এই শিল্পকে শক্ত হাতে ধরে রেখেছেন রাজশাহীর চারঘাট উপজেলার ইউসুফপুর অঞ্চলের নারীরা। তবে অর্থের সংকট থাকায় এই নারীরা শত চেষ্টা করেও তাঁত শিল্পকে বেশিদূর নিয়ে যেতে পারছেন না। সরকারি ও বেসরকারিভাবে আর্থিক সহযোগিতা পেলে তারা আরও অনেক দূর এগিয়ে যেতে পারবেন বলে এই পল্লীর কর্তৃপক্ষ জানিয়েছে।