পাটশ্রমিকদের জন্য ১০০০ কোটি টাকা বরাদ্দ

আন্দোলনরত পাটকলের শ্রমিক–কর্মচারীদের বকেয়া পরিশোধ ও পাট কেনার জন্য সরকার এক হাজার কোটি টাকা বরাদ্দের সিদ্ধান্ত নিয়েছে। একই সঙ্গে পয়লা বৈশাখের আগে বকেয়া মজুরির একটি অংশ মন্ত্রণালয়ের নিজস্ব ব্যবস্থাপনায় পরিশোধ করা হবে।

আজ সোমবার প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার সভাপতিত্বে মন্ত্রিসভার বৈঠকে প্রধানমন্ত্রী এ বিষয়ে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নিতে অর্থ মন্ত্রণালয়কে নির্দেশ দেন। এরপর বস্ত্র ও পাট প্রতিমন্ত্রী মির্জা আজম সচিবালয়ে তাঁর দপ্তরে সংবাদ ব্রিফিং করে এসব তথ্য জানান। একই সঙ্গে প্রতিমন্ত্রী আন্দোলনরত শ্রমিকদের কাজে যোগ দেওয়ার আহ্বান জানান।

কয়েক দিন ধরে পাঁচ দফা দাবিতে শ্রমিকদের টানা আন্দোলনের মুখে অচল হয়ে পড়েছে খুলনাঞ্চলের রাষ্ট্রায়ত্ত পাটকলগুলো। খুলনাঞ্চলের রাষ্ট্রায়ত্ত সাত পাটকলে টানা ছয় দিনের শ্রমিক ধর্মঘটের কারণে প্রায় এক হাজার মেট্রিক টন উৎপাদন–ঘাটতি হয়েছে, যার বাজারমূল্য প্রায় আট কোটি টাকা।

ব্রিফিংয়ে প্রতিমন্ত্রী মির্জা আজম বলেন, প্রধানমন্ত্রী সব বকেয়া পরিশোধ ছাড়াও পঞ্চাশ ও ষাটের দশকে স্থাপিত পাটকলগুলো সংস্কার ও আধুনিকায়ন করতে বলেছেন। প্রতিমন্ত্রী আরও বলেন, ইতিমধ্যে পাটকলগুলোর উৎ​পাদনক্ষমতা ৪০ শতাংশে নেমে এসেছে। একদিকে সরকারি পাটকলে শ্রমিক বেশি ও মজুরিও বেশি; এ ছাড়া দুর্নীতির বেশ কিছু অভিযোগ ছিল, যেগুলোর উৎ​সমুখ বন্ধ করার উদ্যোগ নেওয়া হয়েছে।

প্রতিমন্ত্রী আশা প্রকাশ করেন, আগামী পাঁচ বছরের মধ্যে পাটকলগুলো লাভ করতে না পারলেও আয়-ব্যয় সমান হবে। এক প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, সরকারি ২৭টি পাটকলে মোট শ্রমিক আছেন ৭০ হাজার। এর মধ্যে স্থায়ী শ্রমিক ৩২ হাজার আর বাকিরা বদলি শ্রমিক।
মির্জা আজম বলেন, প্রধানমন্ত্রীর নির্দেশে পয়লা বৈশাখের আগে শ্রমিকদের বকেয়া মজুরির একটা অংশ দেওয়া হবে। বাকি টাকা অর্থ মন্ত্রণালয় থেকে ছাড় পাওয়া গেলে গ্র্যাচুইটি ও ভবিষ্য তহবিল (প্রভিডেন্ট ফান্ড) বাবদ পরিশোধ করা হবে।
সংবাদ বিফ্রিংয়ের সময় বস্ত্র ও পাটমন্ত্রী মুহা. ইমাজ ​উদ্দিন প্রামাণিক এবং মন্ত্রণালয়ের সচিব এম কাদের সরকার উপস্থি​ত ছিলেন।

মন্ত্রিসভার বৈঠক সূত্রে জানা যায়, বৈঠক শেষে বস্ত্র ও পাট মন্ত্রণালয়ের পক্ষ থেকে প্রধানমন্ত্রীর দৃষ্টি আকর্ষণ করেন প্রতিমন্ত্রী মির্জা আজম। কয়েকজন জ্যেষ্ঠ মন্ত্রী প্রতিমন্ত্রীর আজমের এ বক্তব্য সমর্থন করেন। তবে এ সময় অর্থ মন্ত্রণালয়ের পক্ষ থেকে প্রস্তাবিত বাজেটের আগে এত টাকা সংগ্রহ করা কঠিন বলে মত প্রকাশ করা হয়। তারপরও প্রধানমন্ত্রী এ বিষয়ে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নিতে অর্থমন্ত্রীকে নির্দেশ দেন।

বৈঠক সূত্রে জানা যায়, পাটকলশ্রমিক ও কর্মচারীদের গ্র্যাচুইটি বাবদ ৩০০ কোটি টাকা, ভবিষ্য তহবিল (প্রভিডেন্ট ফান্ড) ৩০০ কোটি, এবং পাট কেনার জন্য ২০০ কোটি দরকার বলে বস্ত্র ও পাট মন্ত্রণালয় হিসেব দেয়। এ ছাড়া শ্রমিকদের সপ্তাহের মজুরি বাবদ মোটা অঙ্কের টাকা বকেয়া পড়েছে। সব মিলিয়ে প্রধানমন্ত্রী এক হাজার কোটি টাকা বরাদ্দ দিতে বলেন।