জিডিপিতে লক্ষ্যপূরণ

একটি নয়, একাধিক সুখবর বাংলাদেশের জন্য। তিন মাস বাকি থাকতেই চলতি অর্থবছরে দেশের জিডিপি প্রবৃদ্ধি লক্ষ্যমাত্রা ছাড়িয়ে যাচ্ছে। বেড়েছে মাথাপিছু আয়। রেমিট্যান্স প্রবাহে ভাটা পড়লেও অব্যাহত রয়েছে রপ্তানি আয় বৃদ্ধির ধারা। আট বছর আগে জিডিপি প্রবৃদ্ধি ৭ শতাংশে উন্নীত করার লক্ষ্যে উদ্যোগ নেওয়া হয়েছিল। ২০১৫-১৬ অর্থবছরের বাজেটে জিডিপি লক্ষ্যমাত্রা ঠিক করা হয়েছিল ৭ শতাংশ। তখন এডিবি ও বিশ্বব্যাংকও এই অর্জন নিয়ে সংশয় প্রকাশ করেছিল। কিন্তু বাংলাদেশ পরিসংখ্যান ব্যুরোর সর্বশেষ প্রাক্কলন বলছে, অর্থবছরের প্রথম ৯ মাসেই লক্ষ্যমাত্রা ছাড়িয়ে গেছে। এই অর্জন ধরে রাখতে এখন সচেষ্ট হতে হবে।

বর্তমান সরকার দায়িত্ব গ্রহণের পর থেকেই দেশে রাজনৈতিক অস্থিরতায় বাধাগ্রস্ত হয় উন্নয়ন কর্মকাণ্ড। রপ্তানি বাণিজ্য থেকে শুরু করে দেশের অভ্যন্তরে দেশি-বিদেশি বিনিয়োগ বাধাগ্রস্ত হয়। ফলে কাঙ্ক্ষিত ফল লাভ করা যায়নি। দেশের অভ্যন্তরে গত এক বছরের রাজনৈতিক স্থিতিশীলতায় আবার ঘুরে দাঁড়াতে শুরু করে বিভিন্ন খাত। কৃষি ও সেবা খাতের পাশাপাশি শিল্প খাতও প্রবৃদ্ধি অর্জনে বিশেষ ভূমিকা রেখেছে। যদিও ব্যক্তি খাতে বিনিয়োগ আগের তুলনায় চলতি অর্থবছরে কমেছে। আমাদের দেশে আমলাতান্ত্রিক জটিলতা অনেক ক্ষেত্রে উন্নয়নের বাধা হয়ে দাঁড়ায়। আমাদের জনপ্রশাসনকে সত্যিকার অর্থে কল্যাণমুখী প্রশাসন হিসেবে গড়ে তুলতে না পারলে এ সমস্যা থেকে রেহাই পাওয়া যাবে না। বাংলাদেশে সেবা খাতের সহায়তা পেতে এখনো মানুষকে অনেক সমস্যা পোহাতে হয়। দীর্ঘসূত্রতার সমস্যাও উন্নয়নের বড় সমস্যা হয়ে দেখা দেয়। এই বাধা দূর করতে না পারলে অর্থনীতির চাকা সচল রাখা যাবে না। দেশি বিনিয়োগের পাশাপাশি বিদেশি বিনিয়োগ আগ্রহ হারাবে। তার অনিবার্য ফল পড়বে দেশের অর্থনীতিতে। আমরা দেখতে পাই, চলতি অর্থবছরের এডিপি থেকে সাত হাজার কোটি টাকা কমিয়ে ৯১ হাজার কোটি টাকায় চূড়ান্ত অনুমোদন দেওয়া হয়েছে। বাজেটে যে এডিপি দেওয়া হয়, তা প্রতিবছরই একপর্যায়ে এসে কাটছাঁট করা হয়। বার্ষিক উন্নয়ন কর্মসূচি বাস্তবায়ন না হওয়ার একটি প্রধান কারণ হচ্ছে, সংশ্লিষ্টদের অদূরদর্শিতা ও অদক্ষতা। সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তারা দেশ ও জনগণের প্রতি কতটুকু দায়বদ্ধ, সে প্রশ্নটাও এখানে এসে পড়ে। দেশের অর্থনীতিতে যে গতির সঞ্চার হয়েছে, তা ধরে রাখতে এখন আমাদের ব্যক্তি খাতের বিনিয়োগে নজর দিতে হবে। বিদেশি বিনিয়োগ আকৃষ্ট করতে হবে। মাথাপিছু জাতীয় আয় বৃদ্ধি বাংলাদেশকে মধ্যম আয়ের দেশে উন্নীত হওয়ার পথে আরেক ধাপ এগিয়ে দিয়েছে। অন্যদিকে রেমিট্যান্স কমলেও রপ্তানি বাণিজ্যে গত বছরের এই সময়ের তুলনায় আয় বেড়েছে ৯ শতাংশ।

প্রবৃদ্ধির লক্ষ্যমাত্রা অর্জন, রপ্তানি আয় ও মাথাপিছু আয় বৃদ্ধিতে আত্মতুষ্টিতে ভুগলে চলবে না। এই পরিস্থিতি ধরে রেখে সামনের দিকে এগিয়ে যেতে হলে আমাদের নতুন লক্ষ্যমাত্রা নির্ধারণ করতে হবে। ব্যবসাবান্ধব প্রশাসনিক পরিবেশ গড়ে তুলতে হবে। যে বাধাগুলো এখনো দৃশ্যমান, তা দূর করতে পারলেই উন্নত দেশ হিসেবে মাথা তুলে দাঁড়াবে বাংলাদেশ।