মুক্তিযুদ্ধের ইতিহাস বিকৃত করলে পাঁচ বছরের জেল

মুক্তিযুদ্ধ নিয়ে স্বীকৃত ইতিহাস বিকৃত ও বিরোধিতা করলে পাঁচ বছরের জেল ও এক কোটি টাকা জরিমানার বিধান রেখে একটি আইনের খসড়া তৈরি করেছে আইন কমিশন। ‘বাংলাদেশের মুক্তিযুদ্ধের ইতিহাস বিকৃতিকরণ অপরাধ আইন, ২০১৬’-এর খসড়াটি আইন কমিশন আইন মন্ত্রণালয়ে পাঠিয়েছে। এতে যুদ্ধপরাধীদের বিচার প্রশ্নবিদ্ধ করলে তাকেও এ জেল-জরিমানা করার বিধান রাখা হয়েছে। এ ছাড়া স্বাধীনতার ঘোষক হিসেবে যে স্বীকৃত ইতিহাস রয়েছে তাও অবমাননা করা যাবে না। যদিও এ বিষয়ে আইনে সরাসরি কিছু বলা নেই, তবে এটি ভিন্নভাবে বলা হয়েছে। আইন কমিশন সূত্রে এ তথ্য জানা গেছে। গতকাল মঙ্গলবার বঙ্গভবনে রাষ্ট্রপতি মো. আবদুল হামিদের সঙ্গে সাক্ষাৎ করতে গিয়ে তাঁকে আইনের খসড়া তৈরির বিষয়টি জানান আইন কমিশনের চেয়ারম্যান বিচারপতি এ বি এম খায়রুল হক। খসড়া আইনে বলা হয়েছে, ১৯৭১ সালের ১ মার্চ হতে ১৯৭২ সালের ১৬ ডিসেম্বর পর্যন্ত প্রচারিত বা প্রকাশিত মুক্তিযুদ্ধের ইতিহাসসংক্রান্ত দলিলসমূহ এবং উক্ত সময়ের যেকোনো ধরনের প্রকাশনার অপব্যাখ্যা বা অবমূল্যায়ন করা হলে তাকে পাঁচ বছরের দণ্ড ও এক কোটি টাকা জরিমানা করা হবে। গত সোমবার ‘বাংলাদেশের মুক্তিযুদ্ধের ইতিহাস বিকৃতিকরণ অপরাধ আইন, ২০১৬-এর ধারণাপত্রসহ খসড়াটি আইন মন্ত্রণালয় এবং মুক্তিযুদ্ধবিষয়ক মন্ত্রণালয়ে পাঠায় আইন কমিশন। গতকাল মঙ্গলবার আইন কমিশন আইনটির খসড়া দুই মন্ত্রণালয়ে পাঠানোর কথা জানিয়েছে। এ বিষয়ে জানতে চাইলে আইনমন্ত্রী আনিসুল হক গতকাল রাতে কালের কণ্ঠকে বলেন, ‘আইনটি এখনো কমিশনের কাছ থেকে আমার কাছে এসে পৌঁছায়নি। তবে আইন কমিশন এ আইনের ব্যাপারে তাদের কাজ শেষ করেছে বলে জানতে পেরেছি।’ ‘মুক্তিযুদ্ধের ইতিহাস বিকৃতিকরণ অপরাধ’ শিরোনামের খসড়া আইনে বলা হয়েছে, বাংলাদেশের মুক্তিযুদ্ধের ইতিহাস বিকৃতিকরণ অপরাধ হিসেবে গণ্য করা হয়েছে। যেসব বিষয়ে বিকৃতি ঘটালে তা অপরাধ হিসেবে গণ্য হবে তার মধ্যে রয়েছে, ‘১৯৭১ সালের ১ মার্চ হতে ১৯৭১ সালের ২৫শে মার্চের মধ্যবর্তী ঘটনাসমূহ অস্বীকার; ১৯৭১ সালের ২৬শে মার্চ তারিখ হইতে ১৯৭১ সালের ১৬ই ডিসেম্বরের মধ্যবর্তী সময়ে মুক্তিযুদ্ধের ঘটনাসমূহ অস্বীকার; মুক্তিযুদ্ধের কোনো ঘটনাবলিকে হেয়প্রতিপন্ন করিবার উদ্দেশ্যে দেশি বা বিদেশি গণমাধ্যম বা প্রচারমাধ্যমে বিদ্বেষমূলক বক্তব্য প্রদান বা প্রচার; ১৯৭১ সালের ১ মার্চ তারিখ হইতে ১৯৭২ সালের ১৬ই ডিসেম্বর পর্যন্ত প্রচারিত বা প্রকাশিত মুক্তিযুদ্ধের ইতিহাস-সংক্রান্ত দলিলসমূহ এবং উক্ত সময়ের যেকোনো ধরনের প্রকাশনার অপব্যাখ্যা বা অবমূল্যায়ন করা হলে তাকে ৫ বছরের দণ্ড দেওয়া হবে। মুক্তিযুদ্ধের ইতিহাসকে অসত্য, অর্ধসত্য, ভ্রান্ত বা বিভ্রান্তিকরভাবে উপস্থাপন করা হলেও তিনি এ দণ্ড পাবেন। এ ছাড়া মুক্তিযুদ্ধের শহীদ, মুক্তিযোদ্ধা, বীরাঙ্গনা মুক্তিযোদ্ধা বা জনগণকে হত্যা, ধর্ষণ ও তাহাদের সহায়-সম্পত্তি লুটতরাজ বা তাহাতে অগ্নিসংযোগ-সংক্রান্ত যেকোনো তথ্যের অবনমন; মুক্তিযুদ্ধ-সংক্রান্ত কোনো ঘটনা, তথ্য বা উপাত্ত ব্যঙ্গাত্মকভাবে উপস্থাপন, ১৯৭১ সালে পাকিস্তানি দখলদার সশস্ত্র বাহিনী, তাহাদের বিভিন্ন সহায়ক বাহিনী যেমন : রাজাকার, আলবদর, আলশামস, শান্তি কমিটি ইত্যাদির বিভিন্ন অপরাধমূলক কার্যক্রমের পক্ষে কোনো ধরনের যুক্তি প্রদর্শন বা প্রচারণা; মুক্তিযুদ্ধে সংঘটিত মানবতাবিরোধী অপরাধ, শান্তিবিরোধী অপরাধ, গণহত্যা, যুদ্ধাপরাধকে সমর্থন বা উক্ত রূপ অপরাধের বিচার কার্যক্রমকে প্রশ্নবিদ্ধকরণ বা এতদ্বিষয়ে কোনো ধরনের অপপ্রচারকারীও একই দণ্ড পাবেন। ৫ বছর সাজার পাশাপাশি অপরাধীকে এক কোটি টাকা জরিমানা করারও বিধান রাখা হয়েছে খসড়া আইনে।’ জানা গেছে, একই ব্যক্তি একই অপরাধ দ্বিতীয়বার করলে কারাদণ্ড ও অর্থদণ্ড দ্বিগুণ হয়ে যাবে।