পাট উৎপাদনের লক্ষ্যমাত্রা ৭২ দশমিক ৮৩ লাখ বেল

কৃষি সম্প্রসারণ বিভাগ (ডিএই) চলতি ২০১৬-২০১৭ কৃষি মৌসুমে দেশে ৬.৭০ লাখ হেক্টর জমি থেকে ৭২.৮৩ লাখ বেল পাট উৎপাদনের লক্ষ্যমাত্রা নির্ধারণ করেছে। সংশ্লিষ্ট সূত্র এ কথা জানায়।

লক্ষ্যমাত্রা অনুযায়ী কৃষকরা ৬.২০ লাখ হেক্টর জমি থেকে ৬৮.২০ লাখ বেল তোষা জাতের পাটের অাঁশ এবং ৫০ হাজার হেক্টর জমি থেকে ৪.৬৩ লাখ বেল দেশি জাতের পাটের অাঁশ উৎপাদন করবে। এর মধ্যে জাতীয় লক্ষ্যমাত্রার ৯.৫৪ শতাংশ ৬.৯৫ লাখ বেল পাট পাঁচ জেলা রংপুর, গাইবান্ধা, কুড়িগ্রাম, লালমনিরহাট ও লালমনিরহাট জেলার ৬৪,১০১ হেক্টর জমি থেকে উৎপাদিত হবে। ইতোমধ্যেই কৃষকরা পাট বীজ বপন শুরু করেছে। দেশের অপর ১৩টি কৃষি অঞ্চলের পাশাপাশি রংপুর কৃষি অঞ্চলে আগামী মাসের প্রথম সপ্তাহ থেকে এই বীজ বপণ কার্যক্রম জোরদার হবে।

ডিইএর উদ্যানতত্ত্ববিদ খন্দকার মেসবাহুল ইসলাম বলেন, চলতি মৌসুমে রংপুর কৃষি অঞ্চলে ৫৮,৩৫০ হেক্টর জমি থেকে ৬.৪১ লাখ বেল তোষা জাতের এবং ৫৭৫১ হেক্টর জমি থেকে ৫৩,২৫৫ বেল দেশি জাতের পাট উৎপাদন হবে বলে আশা প্রকাশ করেন। কৃষকরা সহজেই বাংলাদেশ কৃষি উন্নয়ন কর্পোরেশন (বিএডিসি), অন্যান্য অনুমোদিত সরকারি ও বেসরকারি সংস্থা ও ডিলারদের কাজ থেকে মানসম্মত পাট বীজ সংগ্রহ করছেন।

পাট উৎপাদনকারী আবদুস সালাম, এসহাক আলী ও এরশাদুল হক বিএডিসি, পাট অধিদপ্তর, ডিএই ও অনুমোদিত ডিলারদের মাধ্যমে মানসম্মত পাট বীজ সরবরাহ নিশ্চিত করার জন্য সরকারকে ধন্যবাদ জানান। তারা পাট পচন প্রক্রিয়া সহজ করতে রিবম-রেটিং মেশিন সরবরাহ ও এ বিষয় প্রশিক্ষণ প্রদানের জন্যও সরকারকে অভিনন্দন জানান।

বিশিষ্ট কৃষি বিজ্ঞানী এবং ব্র্যাক ইন্টারন্যাশনালের (দক্ষিণ এশিয়া ও আফ্রিকা) উপদেষ্টা ড. এমএ মজিদ বলেন, কৃষকরা যদি আগামী এপ্রিল নাগাদ পাট বীজ বপন সম্পন্ন করতে পারে তাহলে কৃষকরা ভালো ফলন পাবে। তিনি মানসম্পন্ন বীজ সাশ্রয়ে প্রতি একরে মাত্র ২ কেজি বীজ ব্যবহার করে পাট চাষের জন্য কৃষকদের সিক্স লাইন পিক আপ জুট সিডিং ম্যাথড ব্যবহারের আহ্বান জানান। প্রচলিত প্রদ্ধতিতে প্রতি একরে ২.৫ থেকে ৩.৫ কেজি পাট বীজ ব্যবহার করা হয়।

আরডিআরএস-এর কৃষি ও পরিবেশ সমন্বয়ক মামুনুর রশীদ কৃষকদের উৎসাহিত করতে এবং পাটের আবাদ বাড়াতে পাট ভিত্তিক শিল্প এবং রফতানি বৃদ্ধির ওপর গুরুত্বারোপ করেন। ডিএই রংপুর অঞ্চলের অতিরিক্ত পরিচালক এসএম আশরাফ আলী চলতি মৌসুমে পাট উৎপাদন কার্যক্রম সফল করে তুলতে কৃষি সম্পৃক্ত সংস্থাগুলোকে কৃষকদের সহায়তা দিতে মাঠ পর্যায়ের কর্মকর্তাদের প্রতি আহ্বান জানান।

পাটপণ্য বিশ্বের ১১৮টি দেশে রপ্তানি হচ্ছে : বহুমুখী পাটপণ্য বিশ্বের প্রায় ১১৮টি দেশে রপ্তানি হচ্ছে। বিশ্বের বিভিন্ন দেশে পরিবেশবান্ধব পণ্যের ব্যাপক চাহিদা থাকায় বহুমুখী পাটপণ্যের খাতটি দিন দিন সমপ্রসারিত হচ্ছে। পণ্যে পাটজাত মোড়কের বাধ্যতামূলক ব্যবহার আইন-২০১০ বাস্তবায়নের ফলে স্থানীয় বাজারে পাটপণ্যের বিক্রি ও চাহিদা বহুগুণ বৃদ্ধি পেয়েছে। বাংলাদেশ পাট ও পাটপণ্য রপ্তানিতে বিশ্বে প্রথম ও পাট উৎপাদনে বিশ্বের দ্বিতীয় স্থানে রয়েছে।

জাতীয় রপ্তানি আয়ের শতকরা ৪ দশমিক ৯ ভাগ পাটখাত থেকে অর্জিত হচ্ছে। এই খাত রপ্তানি আয়ের বৃহত্তম খাতও বটে। ২০১৫ সালের ৩০ নভেম্বর থেকে ৩১ ডিসেম্বর পর্যন্ত মাসব্যাপী ৩ কোটি ৩৪ লাখ পাটের ব্যাগ বিক্রি হয়েছে এবং ব্যাগের বাৎসরিক চাহিদা ১০ কোটি ব্যাগ থেকে বেড়ে ৭০ কোটি ব্যাগে উন্নীত হয়েছে। বর্তমানে পাটের ব্যবহার বেড়ে যাওয়ায় এবং ভবিষ্যতে এ হার আরো বৃদ্ধির সম্ভাবনা থাকায় পাট ও পাটপণ্য দেশের অর্থনীতিতে আরো গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখবে।

জুট ডাইভারসিফিকেশন প্রমোশন সেন্টার (জিডিপিসি) এর তত্ত্বাবধানে পাটপণ্য বহুমুখীকরণের ব্যাপক উদ্যোগ গ্রহণের ফলে এ পর্যন্ত ২৫০ জন সফল উদ্যোক্তা তৈরি হয়েছে। রাস্তা, বাঁধ, নদীতীর সংরক্ষণ কাজে ব্যবহৃত সিনথেটিক জিও টেক্সটাইল এর পরিবর্তে জুট জিও টেক্সটাইল ব্যবহার পরিবেশ সুরক্ষায় ও স্বল্প খরচে মাটির ক্ষয়রোধে এক নতুন দিগন্তের সূচনা করেছে। ইতোমধ্যেই জুট জিও টেক্সটাইল সফলভাবে উৎপাদন ও বাজারজাতকরণ করা হচ্ছে।

বিজেএমসির বছরে প্রায় ১২শ’ কোটি টাকা মূল্যমানের জুট জিও টেক্সটাইল উৎপাদনে সক্ষম। বেসরকারি পাটকলগুলোও জুট জিও টেক্সটাইল উৎপাদনে সক্ষমতা অর্জন করেছে। স্থানীয়ভাবে এলজিইডি, সড়ক ও সেতু বিভাগ, পানি উন্নয়ন বোর্ড, রেলপথ মন্ত্রণালয়, পার্বত্য চট্টগ্রাম উন্নয়ন বোর্ডের উন্নয়ন কাজে বছরে ৭১৬ দশমিক ৫২ কোটি টাকার জেটজিটি ব্যবহারের চাহিদা রয়েছে।

উল্লেখ্য, দেশে ধান, চালসহ বিভিন্ন পণ্যসামগ্রী পরিবহন, প্লাস্টিক ও পলিথিনের পরিবর্তে পাটের তৈরি ব্যাগ ব্যবহারের জন্য ‘পণ্যে পাটজাত মোড়কের বাধ্যতামূলক ব্যবহার আইন-২০১০’ প্রণীত হয়েছে। উক্ত আইনের ধারা-১৪ এ পণ্যে পাটজাত মোড়ক ব্যবহার না করে কৃত্রিম মোড়ক দিয়ে কোনো পণ্য বা পণ্যসামগ্রী মোড়কজাতকরণ, বিক্রয়, বিতরণ বা সরবরাহ করলে বা করবার অনুমতি প্রদান করলে অনূর্ধ্ব এক বছর কারাদ- বা অনধিক পঞ্চাশ হাজার টাকা অর্থদ- বা উভয় দ-ে দ-িত হবে। তাছাড়া ধারা-১৫ এ উলি্লখিত অপরাধ পুনঃসংগঠনের ক্ষেত্রে সর্বোচ্চ দ-ের দ্বিগুণ দ-নীয় হবেন। আইন অনুযায়ী ছয়টি পণ্য অর্থাৎ ধান, চাল, গম, ভুট্টা, সার ও চিনি পাটজাত মোড়কের বাধ্যতামূলক ব্যবহারের জন্য নির্ধারিত হয়েছে। উক্ত আইনটি মোবাইল কোর্ট আইন এর তফসিলেও অন্তর্ভুক্ত করা হয়েছে।