২০৩০ সালের মধ্যে এইডস নির্মূলে ‘ঢাকা ঘোষণা’

২০৩০ সালের মধ্যে বাংলাদেশসহ এশিয়া ও প্রশান্ত মহাসাগরীয় অঞ্চলের দেশগুলো থেকে এইডস নির্মূল করা হবে—এমন ঢাকা ঘোষণার মধ্য দিয়ে গতকাল সোমবার রাজধানীর ইন্টারন্যাশনাল কনভেনশন সিটি বসুন্ধরায় শেষ হলো এইডস বিষয়ক আন্তর্জাতিক সম্মেলন-আইক্যাপের ১২তম আসর। ঢাকা ঘোষণায় বলা হয়, বিশ্বের ৭০ শতাংশ মানুষের বসবাস এশিয়া ও প্রশান্ত মহাসাগরীয় অঞ্চলের দেশগুলোতে। তাই বিশ্বকে এইডসমুক্ত করার ক্ষেত্রে সবচেয়ে বেশি গুরুত্ব দিতে হবে এই অঞ্চলের দিকে। বাংলাদেশে অনুষ্ঠিত সবচেয়ে বড় আন্তর্জাতিক এ বৈজ্ঞানিক সম্মেলন ঘিরে ইন্টারন্যাশনাল কনভেনশন সিটি বসুন্ধরা পরিণত হয়েছিল বিশ্বের ৫৬টি দেশ ও বাংলাদেশের ভেতরের বিভিন্ন এলাকা থেকে আগত এক হাজারের বেশি প্রতিনিধির মিলনমেলায়। কনভেনশন সিটি বসুন্ধরার পাঁচটি হলে একাধারে একের পর এক সেমিনার, প্রবন্ধ উপস্থাপন, আলোচনা, সুপারিশ ও সিদ্ধান্ত গ্রহণের মতো রাশভারী অধিবেশন ছাড়াও ছিল এইডস-এইচআইভি বিষয় নিয়ে কাজ করা সরকারি-বেসরকারি এবং দেশি-বিদেশি বিভিন্ন প্রতিষ্ঠান ও সংগঠনের স্টল। যেখানে এইডস-এইচআইভি থেকে মুক্ত থাকার নানা পরামর্শমূলক উপকরণ, এইডস-এইচআইভিতে আক্রান্তদের সমস্যা তুলে ধরে নানা প্রচারপত্র, যৌনকর্মীদের মানবাধিকার সুরক্ষায় বিভিন্ন দিকনির্দেশনা। এ ছাড়া একাধিক হলে প্রতিদিনই চলে এইডস-এইচআইভির ঝুঁকিতে থাকা বিশেষ জনগোষ্ঠীর প্রতিনিধিদের পরিবেশনায় সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠান। গত শনিবার রাষ্ট্রপতি মো. আবদুল হামিদ এ সম্মেলনের উদ্বোধন করেন। আর গতকাল এর সফল সমাপ্তি ঘোষণা করেন অর্থমন্ত্রী আবুল মাল আবদুল মুহিত। অনুষ্ঠানে আরো উপস্থিত ছিলেন স্বাস্থ্য ও পরিবারকল্যাণ মন্ত্রী মো. নাসিম, প্রতিমন্ত্রী জাহিদ মালেক, কম্বোডিয়ার মন্ত্রী ইয়াং মৌলি, বাংলাদেশের স্বাস্থ্যসচিব সৈয়দ মনজুরুল ইসলাম। গতকাল সমাপনী অনুষ্ঠানের প্রধান অতিথি অর্থমন্ত্রী আবুল মাল আবদুল মুহিত বলেন, ব্যাপক সচেতনতার মাধ্যমেই এইডস-এইচআইভির ঝুঁকি থেকে মুক্ত থাকা সম্ভব। বিশেষ করে এ ধরনের রোগের ক্ষেত্রে জীবনযাপনের প্রভাব থাকে। তাই সুশৃঙ্খল জীবনের বিষয়েও সবাইকে সচেতন করে তোলা জরুরি। অর্থমন্ত্রী বলেন, ‘আমাদের দেশের অনেকে আর্থিক সচ্ছলতার আশায় বিভিন্ন দেশে পাড়ি জমিয়ে নানা রোগ বাধিয়ে নিয়ে আসে। আমাদের সরকার দেশের মানুষের দারিদ্র্য দূরীকরণে প্রতিশ্রতিবদ্ধ। এ জন্য নানাভাবে কাজও করা হচ্ছে। আমার বিশ্বাস আমাদের দেশের মানুষের দারিদ্র্য দূর হয়ে যাবে।’ স্বাস্থ্যমন্ত্রী মো. নাসিম বলেন, ‘বাংলাদেশ এইডস-এইচআইভির খুবই কম ঝুঁকিতে রয়েছে। পরিসংখ্যানে যা মাত্র ০.০১ শতাংশ। কিন্তু আশপাশের অনেক দেশে আমাদের চেয়ে বেশি ঝুঁকি থাকায় এবং ওই সব দেশের সঙ্গে যাতায়াত থাকায় আমাদের এখানে সতর্ক থাকতে হচ্ছে, যাতে পরিস্থিতির অবনতি না হয়।’ স্বাস্থ্যমন্ত্রী অনুষ্ঠানে জানান, প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার সার্বিক নির্দেশনায় বাংলাদেশে আইক্যাপের মতো এত বড় একটি সম্মেলন সফল করা সম্ভব হয়েছে। আইক্যাপের সমাপনী পর্বে ঢাকা ঘোষণায় ২০৩০ সালের মধ্যে এইডস-এইচআইভি নির্মূলের প্রত্যয় ছাড়াও জাতিসংঘের ৭০তম অধিবেশনে গৃহীত টেকসই উন্নয়ন লক্ষ্যমাত্রা-এসডিজির ৩.৩ নম্বরে ২০৩০ সালের মধ্যে এইডস-এইচআইভি নির্মূলের লক্ষ্য নির্ধারণ করাকে স্বাগত জানানো হয়। একই সঙ্গে এইডস-এইচআইভি প্রতিরোধে প্রয়োজনীয় পদক্ষেপ গ্রহণ, আক্রান্তদের সেবা ও সহায়তা নিরাপত্তার ওপর গুরুত্ব দেওয়ার আহ্বান জানানো হয়েছে।