বিশ্বের সবচেয়ে উদার গণতন্ত্র আর বড় অর্থনীতির দেশ যুক্তরাষ্ট্রে এখনো প্রেসিডেন্ট হতে পারেননি কোনো নারী। আট বছর আগে মনোনয়নের প্রতিদ্বন্দ্বিতায় নেমে হেরেছিলেন ডেমোক্রেটিক পার্টির নেত্রী হিলারি ক্লিনটন। এ বছর আবারও লড়াইয়ে নেমেছেন। অথচ রাজনীতিতে যুক্তরাষ্ট্রের নারীদের এই অবস্থায় পৌঁছার বহু আগেই দেশ পরিচালনায় নেতৃত্বে এসেছেন বাংলাদেশের নারী। গত ২৫ বছর ধরে প্রধানমন্ত্রীর দায়িত্ব পালন করে আসছেন আওয়ামী লীগ সভানেত্রী শেখ হাসিনা ও বিএনপি চেয়ারপারসন খালেদা জিয়া। আর এইচ এম এরশাদ সরকারের সময় থেকেই প্রায় সাড়ে তিন দশক বিরোধী দলের নেতৃত্বেও আছেন তাঁরা। গত নির্বাচনের পর থেকে জাতীয় পার্টির প্রেসিডিয়াম সদস্য রওশন এরশাদও যুক্ত হয়েছেন বিরোধীদলীয় নেতার ভূমিকায়। বর্তমানে প্রধানমন্ত্রী, সংসদে বিরোধীদলীয় নেতা এবং সংসদের বাইরে থাকা প্রধান বিরোধী দলের নেতাও নারী। জাতীয় সংসদের উপনেতা, স্পিকার, একাধিক মন্ত্রী, এমপি, সচিব, রাষ্ট্রদূত, ব্যাংকের এমডির মতো গুরুত্বপূর্ণ পদ অলঙ্কৃত করছেন তাঁরা।
বিশ্বে আর কোনো দেশের রাজনীতিতে নারীর এত উচ্চাসন নেই। এর স্বীকৃতি মিলছে বিশ্বজুড়েও। হার্ভার্ড ও ক্যালিফোর্নিয়া বিশ্ববিদ্যালয়ের সঙ্গে যৌথভাবে করা ওয়ার্ল্ড ইকোনমিক ফোরামের ‘দ্য গ্লোবাল জেন্ডার গ্যাপ রিপোর্ট, ২০১৫’-তে রাষ্ট্রক্ষমতায় নারীর অবস্থান বিবেচনায় সবাইকে পেছনে ফেলে বিশ্বের এক নম্বরে উঠে এসেছে বাংলাদেশের নাম। জার্মানির অবস্থান এ ক্ষেত্রে ১২, আর যুক্তরাষ্ট্র রয়েছে ৬৪ নম্বরে।
১১০ বছর আগে ঠিক এমন স্বপ্নই দেখেছিলেন নারী জাগরণের অগ্রদূত বেগম রোকেয়া সাখাওয়াত হোসেন। ১৯০৫ সালে তাঁর রচিত ‘সুলতানার স্বপ্ন’ নামের কল্পনায় তিনি এমন একটি দেশ চেয়েছিলেন, যেখানে সবকিছুর নেতৃত্বে থাকবেন নারী।
সংশ্লিষ্টরা বলছেন, এই অগ্রযাত্রার মধ্যেও নারী উন্নয়নে কিছু প্রতিবন্ধকতা রয়ে গেছে দেশে। এখনো ঘর থেকে বের হলেই নিরাপত্তাহীন তাঁরা। তাঁদের নিরাপত্তা নিশ্চিত করা সম্ভব হলে উন্নয়নের শিখরে পৌঁছানোর সিঁড়ি খুঁজে পাবে বাংলাদেশ। এ লক্ষ্যকে সামনে রেখে আজ সারা বিশ্বের সঙ্গে বাংলাদেশেও পালিত হচ্ছে ‘আন্তর্জাতিক নারী দিবস’। এ উপলক্ষে রাষ্ট্রপতি মো. আবদুল হামিদ, প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা, বিরোধীদলীয় নেতা রওশন এরশাদ ও বিএনপি চেয়ারপারসন খালেদা জিয়া বাণী দিয়েছেন। এবারের প্রতিপাদ্য ‘অধিকার, মর্যাদায় নারী-পুরুষ সমানে সমান’। দিনটিতে সরকারের নানা কর্মসূচি রয়েছে। প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার ব্যক্তিগত উদ্যোগে চলমান আটটি কর্মসূচির মধ্যেও নারীর ক্ষমতায়ন একটি।
নারীর রাজনৈতিক ক্ষমতায়নে বাংলাদেশ অনেক উন্নত দেশকেও পেছনে ফেলেছে। রাজনীতিতে নারীর অংশগ্রহণ সূচকে দেশের অবস্থান নবম এবং নারীর রাজনৈতিক ক্ষমতায়নে অষ্টম। নারীর রাজনৈতিক ক্ষমতায়নে শীর্ষে রয়েছে আইসল্যান্ড, ফিনল্যান্ড, নরওয়ে, নিকারাগুয়া, আয়ারল্যান্ড ও রুয়ান্ডা। আর জাতীয় সংসদে নারীর প্রতিনিধিত্ব বিবেচনায় বিশ্বে বাংলাদেশের অবস্থান ৭৬তম। এ ক্ষেত্রে যুক্তরাষ্ট্রের অবস্থান ৮১, ভারত ১১৫, জাপান ১২৫, চীন ৬২ ও পাকিস্তান ৭২ নম্বরে।
ওয়ার্ল্ড ইকোনমিক ফোরামের প্রতিবেদন অনুযায়ী, নারীর অগ্রগতির নানা সূচকে বিশ্বকে তাক লাগিয়ে দিয়েছে বাংলাদেশ। দ্য গ্লোবাল জেন্ডার গ্যাপ রিপোর্টে সার্বিক বিবেচনায় নারী উন্নয়নে বিশ্বের ১৪৫টি দেশের মধ্যে এবার বাংলাদেশ জায়গা করে নিয়েছে ৬৪ নম্বরে। এই তালিকায় ভারতের অবস্থান ১০৮ ও পাকিস্তান ১৪৪ নম্বরে। ২০০৬ সালে বাংলাদেশ ছিল ৯১ নম্বরে। মাত্র ১০ বছরে দেশ নারী উন্নয়নে যতটা এগিয়েছে, বিশ্বের আর কোনো দেশ এতটা পারেনি বলে প্রতিবেদনটিতে স্পষ্টভাবে উল্লেখ করা হয়েছে। এতে আরো বলা হয়েছে, নারীর স্বাস্থ্য উন্নয়নে বিশ্বে সবচেয়ে বেশি উন্নতি করা দেশগুলোর মধ্যে রয়েছে বাংলাদেশ। এ সময়ে সবচেয়ে বেশি অবনতি হয়েছে ভারত, চীন ও আলবেনিয়ার। মন্ত্রণালয়ে বিভিন্ন পদে নারী কর্মকর্তার সংখ্যা বিবেচনায় দেশের অবস্থান ১২৬ নম্বরে।
‘২০০৬ সাল থেকে নারীর উন্নতিতে বাংলাদেশ সব সূচকেই উন্নতি করেছে শুধু অর্থনৈতিক কর্মকাণ্ডে অংশগ্রহণ ও সুযোগ-সুবিধা বাদে। নারীশিক্ষার হার বাড়ছে। নারীর স্বাস্থ্য সুরক্ষা ও টিকে থাকার সক্ষমতা বিবেচনায় ২০০৬ সাল থেকে এশিয়া-প্রশান্ত মহাসাগরীয় অঞ্চলের দেশগুলোর মধ্যে বাংলাদেশ প্রথম এবং সারা বিশ্বে দ্বিতীয় অবস্থানে রয়েছে। নারীর রাজনৈতিক ক্ষমতায়নেও বাংলাদেশ এই অঞ্চলের দেশগুলোর মধ্যে দ্বিতীয় সর্বোচ্চ উন্নতি করেছে। এমনকি সার্বিক সূচকেও ২০০৬ সাল থেকে বাংলাদেশ এশিয়া-প্রশান্ত মহাসাগরীয় অঞ্চলের দেশগুলোর মধ্যে দ্বিতীয় সর্বোচ্চ উন্নতি করেছে’—বাংলাদেশে নারীর অগ্রযাত্রা সম্পর্কে এভাবে মূল্যায়ন করা হয়েছে দ্য গ্লোবাল জেন্ডার গ্যাপ রিপোর্টে।
ওয়ার্ল্ড ইকোনমিক ফোরামের প্রতিষ্ঠাতা ও নির্বাহী চেয়ারম্যান ক্লাউস চ্যুহাব নারী উন্নয়নের ওপর গুরুত্ব দিয়ে প্রতিবেদনটির ভূমিকায় বলেছেন, দীর্ঘমেয়াদি অর্থনৈতিক উন্নয়ন ও তা টিকিয়ে রাখার জন্য জনগণ ও তাদের মেধাই মূল চালিকাশক্তি। যদি এই মেধার অর্ধেকই অপরিপক্ব বা অব্যবহৃত থাকে, তাহলে উন্নয়ন টেকসই হয় না। এ ছাড়া, নারীর ক্ষমতায়ন একটি মৌলিক বিষয়। তাঁরাও স্বাস্থ্য, শিক্ষা, উপার্জন ক্ষমতা ও রাজনীতিতে প্রতিনিধিত্ব করার অধিকার রাখেন।
প্রতিবেদন মতে, নারীশিক্ষায় বাংলাদেশের সাফল্য বিশ্বজুড়ে নন্দিত। প্রাথমিক শিক্ষায় নারী শিশু ভর্তির হার বিবেচনায় বিশ্বে এ দেশের অবস্থান আরো ৬২টি দেশের সঙ্গে সমন্বিতভাবে প্রথম। নারীর মাধ্যমিক শিক্ষার ক্ষেত্রেও বাংলাদেশ শীর্ষস্থানে রয়েছে। তবে উচ্চশিক্ষায় অনেক পিছিয়ে। এ ক্ষেত্রে বাংলাদেশ ১১৯ নম্বরে। সংশ্লিষ্টদের ধারণা, নিরাপত্তার অভাবে বাংলাদেশে উচ্চশিক্ষা স্তরে পা রাখার আগেই বেশির ভাগ মেয়ের বিয়ে হয়ে যায়। এ ছাড়া পুরুষতান্ত্রিক সমাজে দরিদ্র পরিবারগুলো আর্থিক সংকটের কারণে মেয়েদের তুলনায় ছেলেদের উচ্চশিক্ষায় আগ্রহী হয়। এসব কারণেই উচ্চশিক্ষায় নারী শিক্ষার্থীর হার বাংলাদেশে কম। এতে করে উচ্চপদের চাকরি যেমন বিচারক, সিনিয়র কর্মকর্তা কিংবা ব্যবস্থাপক হিসেবে নারীর উপস্থিতি কম। ফলে এই শ্রেণিতে বাংলাদেশ ১২৩ নম্বরে পড়ে আছে। আর পেশাজীবী ও কারিগরি পেশার সঙ্গে নারীর সম্পৃক্ততা বিবেচনায় অবস্থান ১১৮ নম্বরে। তবে ভারত ও পাকিস্তানের চেয়ে বেশ এগিয়ে বাংলাদেশ। নারীশিক্ষার হার বিবেচনায় বাংলাদেশের অবস্থান ১০৯ নম্বরে।
নারী উন্নয়নে বাংলাদেশ সার্বিক সূচকে বিশ্বে ৬৪তম অবস্থানে থাকলেও এশিয়া-প্রশান্ত মহাসাগরীয় অঞ্চলভুক্ত ২৪টি দেশের মধ্যে অস্ট্রেলিয়ার পরেই দ্বিতীয় শীর্ষ অবস্থানে রয়েছে। নিউজিল্যান্ড, জাপান, থাইল্যান্ড, ইন্দোনেশিয়া ও দক্ষিণ কোরিয়ার মতো উন্নত ও অগ্রসর অর্থনীতির দেশগুলো এ ক্ষেত্রে পেছনে পড়েছে। আর বিশ্বের ৩৬টি নিম্ন-মধ্যম আয়ের দেশের মধ্যে বাংলাদেশের অবস্থান দ্বিতীয়। শ্রমশক্তিতে নারীর অংশগ্রহণ বিবেচনায় ৯৭ নম্বরে বাংলাদেশ। প্রতিবেদন মতে, প্রতি ৮৭ জন পুরুষ যেখানে কর্মরত, সেখানে কাজ করছেন ৬০ জন নারী। বেশির ভাগ উন্নয়নশীল ও স্বল্পোন্নত দেশে নারী-পুরুষের মজুরি বৈষম্য বেশ কম। তবে বাংলাদেশে নারীদের মজুরি বৈষম্য অন্য সমমানের দেশগুলোর তুলনায় বেশ বেশি। এ ক্ষেত্রে অবস্থান ১২৬ নম্বরে। অনেক উন্নত দেশেও নারী-পুরুষের মজুরি বৈষম্য রয়েছে। এতে যুক্তরাষ্ট্রের অবস্থান ৭৪তম, ভারত ১২৯। মজুরি বৈষম্য থাকলেও নারী-পুরুষের আয়ের বৈষম্য বাংলাদেশে বেশ কম। বাংলাদেশে একজন নারীর আয় ২১৪৩ ডলার, যেখানে পুরুষের আয় ৪১০৫ ডলার। ফলে এ ক্ষেত্রে বাংলাদেশের অবস্থান ১০৮, ভারত ১৩৯ ও পাকিস্তান ১৪০ নম্বরে।
বাংলাদেশে অর্থনৈতিক কর্মকাণ্ডে নারীর অংশগ্রহণ বাড়ছে। তবে তা এখনো কাঙ্ক্ষিত মাত্রায় পৌঁছেনি বলে মনে করেন অর্থমন্ত্রী আবুল মাল আবদুল মুহিত। গত ৯ অক্টোবর কেনিয়ার রাজধানী নাইরোবিতে বিশ্বব্যাংক ও আন্তর্জাতিক মুদ্রা মহবিলের (আইএমএফ) বার্ষিক সম্মেলনে লিখিত বক্তব্যে তিনি বলেন, ‘১৯৮৩-১৯৮৪ অর্থবছরে দেশের শ্রমশক্তির ৭ শতাংশ ছিল নারী। এখন এটি বেড়ে ৩০ শতাংশে উন্নীত হয়েছে।’
ওয়ার্ল্ড ইকোনমিক ফোরামের প্রতিবেদনে আরো বলা হয়েছে, বাংলাদেশে নারীর গড় আয়ু পুরুষের চেয়ে বেশি। গড় আয়ু বিবেচনায় ১০৪ নম্বরে থাকা বাংলাদেশে অর্থনৈতিক সুবিধা ও অর্থনৈতিক কর্মকাণ্ডে নারীর অংশগ্রহণ এখনো বেশ কম। এই সূচকে ১৩০ নম্বরে আছে দেশ।
প্রধানমন্ত্রী ‘শেখ হাসিনা বিশেষ উদ্যোগ’ শিরোনামে আটটি কর্মসূচি বাস্তবায়ন করছে সরকার। এর একটি নারীর ক্ষমতায়ন। গত ৯ ফেব্রুয়ারি এই আটটি কর্মসূচি নিয়ে প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয়ের মুখ্য সচিব আবুল কালাম আজাদের সভাপতিত্বে এক বৈঠকে নারীর উন্নয়ন ও ক্ষমতায়ন নিয়ে বিস্তারিত তথ্য উঠে এসেছে। এর কার্যপত্রে বলা হয়েছে, বাংলাদেশে নারীর মানবসম্পদ উন্নয়ন সূচক, গড় আয়ু, স্কুলে পাঠের গড় হার দক্ষিণ এশিয়ার গড়ের চেয়ে বেশি।
গত মাসে প্রণীত অর্থবিভাগের এক প্রতিবেদন অনুযায়ী, প্রতিবছর জাতীয় বাজেটের আকারের সঙ্গে বাড়ছে নারী উন্নয়নে বরাদ্দের পরিমাণ। ২০০৯-২০১০ অর্থবছরে এক লাখ ১০ হাজার ৫২৩ কোটি টাকার বাজেটে নারী উন্নয়নে বরাদ্দ ছিল ২৭ হাজার ২৪৮ কোটি টাকা, যা ছিল মোট বাজেটের ২৪.৬৫ শতাংশ ও জিডিপির ৩.৯৫ শতাংশ। আর চলতি অর্থবছরের দুই লাখ ৯৫ হাজার ১০০ কোটি টাকার বাজেটে এ খাতে বরাদ্দ ৭৯ হাজার ৮৭ কোটি টাকা, যা মোট বাজেটের ২৬.৮০ শতাংশ ও জিডিপির ৪.৬১ শতাংশ।
প্রতিবেদনটিতে বলা হয়েছে, বাংলাদেশে নারীর অগ্রযাত্রা ও অধিকার প্রতিষ্ঠার মূল ভিশন হলো এমন একটি সমাজব্যবস্থা গড়ে তোলা, যেখানে নারী ও পুরুষ সমাজ ও রাষ্ট্রীয় জীবনের সর্বত্র সমান সুযোগ ও অধিকার লাভ করবে এবং সব মৌলিক অধিকার ভোগের ক্ষেত্রে কোনো ধরনের লিঙ্গ বৈষম্য থাকবে না। জাতীয় নারী উন্নয়ন নীতির বাস্তবায়ন এবং নারী ও শিশুর প্রতি সহিংসতা প্রতিরোধে দুটি জাতীয় কর্মপরিকল্পনা প্রণয়ন করা হয়েছে।
এবারের প্রতিপাদ্য বিষয় ‘অধিকার, মর্যাদায় নারী-পুরুষ সমানে সমান’
আন্তর্জাতিক নারী দিবস উপলক্ষে রাষ্ট্রপতি মো. আবদুল হামিদ, প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা, বিরোধীদলীয় নেতা রওশন এরশাদ ও বিএনপি চেয়ারপারসন খালেদা জিয়া পৃথক বাণী দিয়েছেন।
রাষ্ট্রপতি বলেন, সরকারের বলিষ্ঠ পদক্ষেপ ও নেতৃত্বে নারী উন্নয়ন আজ দৃশ্যমান। ব্যবসা-বাণিজ্য, রাজনীতি, বিচার বিভাগ, প্রশাসন, কূটনীতি, সশস্ত্র বাহিনী, আইনশৃঙ্খলা বাহিনী, শান্তিরক্ষা মিশনসহ সব ক্ষেত্রে নারীর সফল অংশগ্রহণের মাধ্যমে দেশ ক্রমান্বয়ে উন্নয়নের দিকে এগিয়ে যাচ্ছে। বিভিন্ন কর্মসূচি বাস্তবায়ন করায় নারীর ক্ষমতায়নে শক্ত ভিত্তি প্রতিষ্ঠিত হয়েছে। ফলে বাংলাদেশ আজ বিশ্ব দরবারে রোল মডেল হিসেবে স্বীকৃতি পেয়েছে।
প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা তাঁর বাণীতে বলেন, গত সাত বছরে সরকার নারীসমাজের উন্নয়নে বিভিন্ন কর্মসূচি বাস্তবায়ন করেছে। সরকার জাতীয় নারী উন্নয়ন নীতি-২০১১ প্রণয়ন এবং বাস্তবায়ন কার্যক্রম গ্রহণ করেছে। পারিবারিক সহিংসতা (প্রতিরোধ ও সুরক্ষা) আইন-২০১০, পারিবারিক সহিংসতা (প্রতিরোধ ও সুরক্ষা) বিধিমালা-২০১৩, ডিএনএ আইন ২০১৪ এবং নারী ও শিশুর প্রতি সহিংসতা প্রতিরোধে জাতীয় কর্মপরিকল্পনা ২০১৩-২০২৫ প্রণয়ন করেছে।
শেখ হাসিনা বলেন, মাতৃত্বকালীন ছুটি ছয় মাসে উন্নীত করা এবং মাতৃত্বকালীন ভাতা ও ল্যাকটেটিং মাদার ভাতা চালু হয়েছে। সরকার এখন মন্ত্রণালয়গুলোতে জেন্ডার সংবেদনশীল বাজেট প্রণয়ন করছে।
সংসদে বিরোধীদলীয় নেতা রওশন এরশাদ বলেন, সামাজিক সূচকে বাংলাদেশের বিস্ময়কর সাফল্যের পেছনে নারীর বিরাট ভূমিকা রয়েছে। সামাজিক-সাংস্কৃতিক-মনস্তাত্ত্বিক বৈষম্য ও নিরাপত্তাহীনতা সত্ত্বেও অর্থনৈতিক কর্মকাণ্ডে নারীর অংশগ্রহণ বাড়ছে। তবে তা এখনো সন্তোষজনক নয়।
নারী উন্নয়নে বিএনপি সরকারের সময় নেওয়া বিভিন্ন কর্মসূচির কথা উল্লেখ করে খালেদা জিয়া বলেন, ‘আমরা সরকারে থাকতে এ দেশের নারীসমাজের উন্নয়নে ব্যাপক কর্মসূচি বাস্তবায়ন করেছি। নারীর ক্ষমতায়ন ও উন্নয়নের মূল স্রোতধারায় সম্পৃক্ত করার কারণে তাদের মধ্যে আত্মবিশ্বাস জেগে উঠেছে। সুখী, সমৃদ্ধ ও আত্মনির্ভরশীল দেশ গড়তে সমাজ ও রাষ্ট্রের প্রতিটি ক্ষেত্রে নারীর অংশগ্রহণ নিশ্চিত করতে হবে। নারীসমাজ যাতে অবহেলা, নির্যাতন ও নিপীড়নের শিকার এবং ন্যায্য অধিকার থেকে বঞ্চিত না হয়, সেদিকে সবার দৃষ্টি রাখতে হবে।’