বাংলাদশে তথ্য প্রযুক্তি খাতে হার্ডওয়্যারের গুরুত্ব দিয়ে শুরু হচ্ছে ৩ দিনের এক আইসিটি এক্সপো। বলা হচ্ছে এখন দেশেই স্মার্টফোন, ট্যাব, ল্যাপটপ প্রভৃতি প্রযুক্তি উৎপাদন করাতে চায় সরকার। ভবিষ্যতে তা রপ্তনিও করতে চায় বাংলাদেশ। সরকারি হিসেব মতে প্রতিবছর ৫ লাখের বেশি ল্যাপটপ, ৩ কোটিরও বেশি মোবাইল ফোন আমদানী হচ্ছে।
কিন্তু বাংলাদেশে এ ধরণের পণ্য প্রস্তুত ও রপ্তানী কতোটা সম্ভব? বাংলাদেশ কম্পিউটার সমিতির উপদেষ্টা মোস্তফা জব্বার বলেন- ‘বাংলাদেশে ১৯৬৪ সালে প্রথম কম্পিউটার এসেছে। সেক্ষেত্রে বলা যায় কম্পিউটারের ইতিহাস বাংলাদেশে অনেক পুরোন। এখন পর্যন্ত আমাদের দেশে কম্পিউটার চর্চার মানে হচ্ছে, বিদেশ থেকে কম্পিউটার আমদানি করে তা কিছু খুচরা ব্যবসায়ীর মাধ্যমে বিক্রি করা। আমরা সফ্টওয়্যারের দিক থেকেও প্রায় বিদেশের উপরে নির্ভরশীল। বাংলাদেশে বিজয় সফ্টওয়্যার বা আরও কিছু সফ্টওয়্যার কেবল অভ্যন্তরীণ বাজারের মধ্যে বিক্রি করে থাকি। এই অবস্থাটা এতদিন চলার পরে আমাদের যে বিষয়টি উপলব্ধি করার, সেটা হচ্ছে যে, প্রকৃতপক্ষে বিদেশ থেকে আমদানি করা প্রযুক্তি নিয়ে আমরা কতদুর যেতে পারবো। এটি ভাবার বিষয়।’
বাংলাদেশ উৎপাদনের জন্য আসলে কতোটা প্রস্তুত? তার ইনফ্রাস্ট্রাকচারটা আসলে কেমন? এ বিষয়ে জানতে চাইলে মোস্তফা জব্বার বলেন, কিছু কিছু পণ্য আছে যা দুই-চারটি প্রতিষ্ঠান ছাড়া আর অন্য কোন প্রতিষ্ঠান উৎপাদন করেনা। যেমন, মাইক্রোপ্রসেসর। সেজন্যে আমরা মাইক্রোপ্রসেসর উৎপাদন করবো এরকম চিন্তা করবো না। অথবা এমন দিকে যাবো না যেগুলো হাইলি ইনেভেস্টমেন্টটরিয়েন্টড। কিন্তু এখন এমন অনেক কিছুই আছে যেগুলো এখন আমরা উৎপাদন করতে পারি।
বাংলাদেশে এরমধ্যে ইলেক্ট্রনিক্সের ক্ষেত্রে একটি সংযোজন কালচার গড়ে উঠে। অর্থাৎ বহুবছর আগ থেকেই এ্যফান্ডিং করা শুরু করেছে। এখন বেশ কিছু কোম্পানী আছে যারা বাংলাদেশে মাদারবোর্ড পর্যন্ত তৈরী করে। প্রসেসরের মত দুই-একটা জিনিসপত্র বাইরে থেকে এনে বাংলাদেশেই মাদারবোর্ড উৎপাদন করছে। কিছুদিন আগ পর্যন্ত আমরা মনে করেছি যে আমরা বোধহয় প্রিন্ট্রেড সার্কিটবোর্ড বানাতে পারিনা। কিন্তু কয়েকদিন আগে আমি জানতে পারলাম, আমাদের এখানে কিছু মোবাইল কোম্পানী আছে যারা প্রিন্ট্রেড সার্কিটবোর্ড নিজেরা প্রস্তুত করে।
এছাড়া গত ২৮ তারিখে হাইটেক পার্ক অথরিটির সাথে আমাদের একটি চুক্তি হয়েছে। বাংলাদেশে শ্রীলঙ্কান কোম্পানী তাদের কারখানা স্থাপন করে ল্যাপটপ তৈরী করবে, স্মার্টফোন তৈরী করবে। অতএব আমাদের এই সম্ভাবনাটা কিন্তু ইতিমধ্যেই বাস্তবে পরিণত হয়েছে।’
সরকারি উদ্যোগে দোয়েল নামে ল্যাপটপ তৈরী করে সেটি স্বল্প মূল্যে মানুষের হাতে দেয়ার একটা প্রকল্পের কথা শুনেছিলাম। কিন্তু সেটি খুব বেশিদুর অগ্রসর হতে দেখিনি। সেক্ষেত্রে এখন যদি আমরা সত্যিই ল্যাপটপ, ট্যাব এবং স্মার্টফোন বানিয়ে রপ্তানি করার মত পর্যায়ে যেতে চাই তবে সত্যিকার অর্থে কতোটা সময় লাগতে পারে?
‘দোয়েলের যে ব্যর্থতা আমরা দেখি, সেই ব্যর্থতা আসলে দোয়েল কারিগরি ব্যর্থতা নয়। এ ব্যর্থতাটা হচ্ছে ব্যবস্থাপনা এবং বিপণনের ব্যর্থতা। খুব সম্প্রতি আমরা একটা রিপোর্টে দেখেছি যে বাংলাদেশ ম্যানুফ্যাকচারিংয়ের জন্য সবচেয়ে সস্তা যায়গা। কোন একটি পণ্য জাপানে যদি বানাতে ১০০ ডলার লাগে চীনে বা ভিয়েতনামে লাগে ৭০ ডলার। আর বাংলাদেশে লাগে কেবলমাত্র ৪৯ ডলার। এবং সেই যায়গাটাকে আমরা এখন কাজে লাগাতে পারি। আমাদের এই বিষয়ে দক্ষতা তৈরী করার যায়গাটা তৈরী হয়ে গেছে।’