ডিজিটাল বিচার ব্যবস্থার যাত্রা শুরু

সিলেট থেকে শুরু হয়েছে বিচার বিভাগ ডিজিটালাইজেশন প্রক্রিয়া।

বুধবার দুপুরে সিলেটের জেলা ও দায়রা জজ আদালতে ‘ডিজিটালাইজড উইটনেস ডিপোজিশন সিস্টেম’ নামের এ প্রকল্পের আনুষ্ঠানিক উদ্বোধন করেন প্রধান বিচারপতি সুরেন্দ্র কুমার সিনহা।

এ পদ্ধতি সাক্ষ্যগ্রহণ চলাকালে সাক্ষীর দেওয়া সাক্ষ্য সংশ্লিষ্ট দপ্তরে কম্পিউটারাইজ পদ্ধতিতে তাৎক্ষণিক সংরক্ষণ করা হবে।

পাইলট প্রকল্প হিসেবে সিলেটের আদালতে ডিজিটাল পদ্ধতিতে সাক্ষ্যগ্রহণ প্রক্রিয়ার যাত্রা শুরু হয়। সিলেটের ৪০টি আদালতের মধ্যে ২০টিতে ডিজিটাল সাক্ষ্যগ্রহণ প্রক্রিয়া চালু হয়েছে। শত বছরের পুরাতন পদ্ধতি বদলে নতুন পদ্ধতি বিচার বিভাগের স্বচ্ছতা নিশ্চিত করবে এবং বিচারপ্রার্থীদের কষ্ট অনেকাংশে কমাবে বলে জানিয়েছেন প্রধান বিচারপতি।

সিলেট জেলা ও দায়রা জজ মনির আহমেদ পাটোয়ারীর সভাপতিত্বে অনুষ্ঠানে বিশেষ অতিথির বক্তব্য দেন অর্থমন্ত্রী আবুল মাল আবদুল মুহিত, আইনমন্ত্রী আনিসুল হক, সুপ্রিম কোর্টের অ্যাপিলেট ডিভিশনের বিচারক বিচারপতি মোহাম্মদ ইমান আলী, তথ্য ও প্রযুক্তি প্রতিমন্ত্রী জুনাইদ আহমেদ পলক এবং ইউএনডিপির আবাসিক প্রতিনিধি রোবার্ট ওয়াটকিন্স।

আরও বক্তব্য দেন সিলেটের পিপি অ্যাডভোকেট মিসবাহ উদ্দিন সিরাজ, জিপি অ্যাডভোকেট খাদেমুল মিল্লাত মো. জালাল, জেলা আইনজীবী সমিতির সভাপতি অ্যাডভোকেট সমিউল আলম, সাধারণ সম্পাদক অ্যাডভোকেট শাহ আশরাফুল ইসলাম প্রমুখ।

প্রধান বিচারপতি বলেন, ‘আমাদের দেশের মিডিয়া যথেষ্ট স্বাধীনতা লাভ করেছে। আজ মিডিয়াতে অনেক কিছু দেখি। রাত হলে টকশোতে আলোচনা হয়। কিছু কিছু মিডিয়াতে বিচার বিভাগ নিয়ে আলোচনা হয়। আমি এসব অনুষ্ঠানের সবাইকে বলতে চাই, আমাদের মিডিয়া বা আমাদের লিবার্টি আছে। কিন্তু এটা সংবিধানের ৩৯ অনুচ্ছেদ মতে। তবে এখানে আইনের বাধা-নিষেধ সাপেক্ষে। বেশি লিবার্টি কিন্তু জনগণের মঙ্গল আনে না। এটার সীমাবদ্ধতা থাকা উচিত।’

আমেরিকার গণতন্ত্রের উদাহরণ দিয়ে প্রধান বিচারপতি বলেন, ‘যার কাছে ডলার আছে, তার কাছে গণতন্ত্র। আমাদের দেশেও গণতন্ত্র কিছু সুবিধাভোগী মহলের কাছে সীমাবদ্ধ রয়েছে। তাই গণতন্ত্র প্রতিষ্ঠার জন্য সবার আগে আইনের শাসন প্রতিষ্ঠা করতে হবে। ডিজিটাল সাক্ষ্যগ্রহণ ব্যবস্থার বিষয়ে তিনি বলেন, এ ব্যবস্থা পর্যায়ক্রমে দেশের সব জেলায় চালু করা হবে।’

এস কে সিনহা বলেন, ‘দেশের উন্নয়নের সঙ্গে সঙ্গে বিচার বিভাগেরও উন্নয়ন করতে হবে। অন্যথায় বিদেশিরা এ দেশে বিনিয়োগে আগ্রহী হবে না। এ জন্য বিচার ব্যবস্থায় ডিজিটালাইজেশন অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ।’

তিনি ১৮৯২, ১৮৩৬ সালসহ পুরনো বিভিন্ন আইন বাদ দেওয়া ও যুগোপযোগী আইন সংযোজনের জন্য অনুষ্ঠানে উপস্থিত আইনমন্ত্রীসহ সংশ্লিষ্টদের আহ্বান জানিয়ে বলেন, ‘স্কুল-কলেজের এমপিভুক্তি ও বাতিল, দেশের বিভিন্ন অঞ্চলে ফিশারিজ, বালু ও জলমহাল ইজারাসহ বেশ কিছু বিষয়ে আইন নেই। কেবল সার্কুলারের মাধ্যমে এগুলো হয়ে থাকে।’

এসব কারণে নতুন যুগোপযোগী আইনের প্রয়োজন রয়েছে উল্লেখ করে প্রধান বিচারপতি বলেন, ‘এতে বিচার বিভাগের ওপর চাপ অনেকাংশে হ্রাস পাবে।’

দেশে এখনও ৩০ লাখ মামলাজট রয়েছে জানিয়ে তিনি বলেন, ‘আমাদের মামলাজট কবে শেষ হবে, তা নিশ্চিত করে বলা যাচ্ছে না। তবে যেভাবে সাক্ষ্যগ্রহণ ও বিচার প্রক্রিয়ার আধুনিকায়ন হচ্ছে, এতে আস্তে আস্তে সংখ্যা কমে আসবে।’

আইনজীবী, সুশীল সমাজ ও রাজনীতিবিদদের সহযোগিতা ছাড়া এ সংকট থেকে উত্তরণ সম্ভব হবে না বলেও মন্তব্য করেন তিনি।

অনুষ্ঠানে অর্থমন্ত্রী আবুল মাল আবদুল মুহিত বলেন, ‘ই-জুডিসিয়ারির জন্য ১০/১৫ বছর অপেক্ষা করতে হবে না। আগামী বছর থেকে পর্যায়ক্রমে সব জেলায় এ পদ্ধতি চালু করা হবে।

তিনি বলেন, অনেকে ডিজিটালের সঙ্গে বিদ্যুতের কথা বলেছেন। আমি আশা করি, ২০১৮ সালের পর বিদ্যুতের সমস্যা থাকবে না।’