১০ অর্থনৈতিক অঞ্চলের ভিত্তিপ্রস্তর স্থাপন

দেশের বিভিন্ন স্থানে ১০টি অর্থনৈতিক অঞ্চলের ভিত্তিপ্রস্তর স্থাপন করেছেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। রাজধানীর বঙ্গবন্ধু আন্তর্জাতিক সম্মেলন কেন্দ্রে গতকাল ভিডিও কনফারেন্সের মাধ্যমে এসব অর্থনৈতিক অঞ্চলের ভিত্তিপ্রস্তর স্থাপন করেন তিনি।

সারা দেশে ১০০টি অর্থনৈতিক অঞ্চল প্রতিষ্ঠায় সহযোগিতা দিতে স্থানীয় জনগণের প্রতি আহ্বান জানিয়ে প্রধানমন্ত্রী এ সময় বলেন, ‘১০টি অর্থনৈতিক অঞ্চলের ভিত্তিপ্রস্তর স্থাপিত হলো। কিন্তু আমরা দেশব্যাপী ১০০টি অর্থনৈতিক অঞ্চল গড়ে তুলব। এ কাজে স্থানীয় জনসাধারণসহ সবার সহযোগিতা প্রয়োজন।’

বাংলাদেশ অর্থনৈতিক অঞ্চল কর্তৃপক্ষের (বেজা) উদ্যোগে এসব অর্থনৈতিক অঞ্চলের ভিত্তিপ্রস্তর স্থাপন করা হয়। এগুলোর মধ্যে সরকারি উদ্যোগে প্রতিষ্ঠা করা হচ্ছে চারটি ও সরকারি-বেসরকারি অংশীদারিত্বের (পিপিপি) ভিত্তিতে রয়েছে ছয়টি অর্থনৈতিক অঞ্চল। সরকারি উদ্যোগে নির্মাণাধীন অর্থনৈতিক অঞ্চলগুলো হচ্ছে— ‘মংলা অর্থনৈতিক অঞ্চল’, ‘মিরসরাই অর্থনৈতিক অঞ্চল’, কক্সবাজার এলাকার ‘সাবরাং ট্যুরিজম পার্ক’ ও মৌলভীবাজারে ‘শ্রীহট্ট অর্থনৈতিক অঞ্চল’। পিপিপির আওতায় নির্মাণাধীন অর্থনৈতিক অঞ্চলগুলো হলো— নারায়ণগঞ্জের সোনারগাঁয় ‘আমান অর্থনৈতিক অঞ্চল’, গাজীপুরের ‘বে অর্থনৈতিক অঞ্চল’, নারায়ণগঞ্জের মেঘনা ঘাটসংলগ্ন ‘মেঘনা ইকোনমিক জোন লিমিটেড’ ও ‘মেঘনা ইন্ডাস্ট্রিয়াল ইকোনমিক জোন লিমিটেড’, নরসিংদীর পলাশে ‘এ কে খান অর্থনৈতিক অঞ্চল’ এবং মুন্সীগঞ্জের গজারিয়ায় ‘আবদুুল মোনেম অর্থনৈতিক অঞ্চল’।

ভিত্তিপ্রস্তর স্থাপনকালে প্রধানমন্ত্রী বলেন, শিল্প স্থাপনের ক্ষেত্রে সরকারি, বেসরকারি ও সরকারি-বেসরকারি যৌথ উদ্যোগ এবং জিটুজিসহ সব ধরনের উদ্যোগ নেয়া হবে।

বেসরকারি উদ্যোক্তারা এগিয়ে না এলে দেশের অর্থনীতি গতিশীল হবে না উল্লেখ করে প্রধানমন্ত্রী বলেন, আমাদের দেশের বিভিন্ন এলাকায় নির্দিষ্ট স্থানে শিল্পপ্রতিষ্ঠান গড়ে তুলতে হবে। যেখানে সেখানে শিল্পপ্রতিষ্ঠান গড়ে তুললে পরিবেশের বিপর্যয় ঘটবে। আমাদের নদী-পরিবেশের যাতে দূষণ না হয়, সে লক্ষ্যেই নির্দিষ্ট এলাকায় শিল্পপ্রতিষ্ঠান গড়ে তোলার জন্য সরকারের এ উদ্যোগ।

শেখ হাসিনা বলেন, ‘শিল্প স্থাপনের এলাকায় জলাধার ও সবুজ বৃক্ষরাজি থাকতে হবে। আর থাকতে হবে বর্জ্য নিষ্কাশনের ব্যবস্থা। এ তিনটি আমার পূর্বশর্ত।’

বিভিন্ন উন্নয়নের কথা তুলে ধরে প্রধানমন্ত্রী বলেন, একটা সময় সরকারি বিটিভি ছাড়া বেসরকারি খাতে কোনো টেলিভিশন ছিল না। আওয়ামী লীগ ক্ষমতায় এসে বেসরকারি খাতে টেলিভিশন চ্যানেল চালানোর সুযোগ করে দেয়। দেশে মাত্র একটি মোবাইল কোম্পানি ছিল। মোবাইল সেটের দাম ছিল ১ লাখ ৩০ হাজার টাকা। কল করলেও মিনিটে ১০ টাকা, ধরলেও ১০ টাকা খরচ হতো। সেখান থেকে আজ মানুষের হাতে হাতে মোবাইল ফোন চলে এসেছে। বর্তমান সরকারের উদ্যোগে বেসরকারি খাত উন্মুক্ত করে দেয়াই এর মূল কারণ।

প্রধানমন্ত্রী আরো বলেন, দেশের অর্থনৈতিক ব্যবস্থাপনায় জাতির জনক বঙ্গবন্ধু যে সরকারি, বেসরকারি ও কো-অপারেটিভ উদ্যোগের কথা বলেছিলেন, সরকার এখন সে পথ অনুসরণ করেই এগোচ্ছে।

উদ্যোক্তাদের পরিবেশবান্ধব বিনিয়োগের আহ্বান জানিয়ে প্রধানমন্ত্রী বলেন, জমি বাড়ছে না। বৃহত্ এ জনগোষ্ঠীর খাদ্য সরবরাহ নিশ্চিত করেই আমাদের শিল্পোন্নয়ন করতে হবে। আবার পরিবেশ রক্ষা করাও আমাদের দরকার। সেজন্য উদ্যোক্তাদের পরিবেশবান্ধব বিনিয়োগের আহ্বান জানাচ্ছি।

বিশ্ববাজারে পণ্য রফতানির জন্য কাজ করতে হবে উল্লেখ করে শেখ হাসিনা বলেন, আমাদের বাজার ধরতে হবে। বহির্বিশ্বের পাশাপাশি দেশের অভ্যন্তরের এত বড় বাজারকেও কাজে লাগাতে হবে। আধুনিক শিল্পের বিকাশ ঘটাতে দেশের

মানুষের ক্রয়ক্ষমতা বাড়াতে হবে। যত বেশি ক্রয়ক্ষমতা বাড়বে, তত বেশি শিল্পের

বিকাশ হবে।

বর্তমান সরকার ব্যবসা ও বিনিয়োগবান্ধব উল্লেখ করে প্রধানমন্ত্রী বলেন, আমাদের সরকার ব্যবসা করতে আসেনি। আমরা বরং ব্যবসায়ীদের ব্যবসায়ীবান্ধব পরিবেশ গড়ে তুলে ব্যবসার সুযোগ করে দিতে চাই। এরই মধ্যে আমরা বিনিয়োগবান্ধব নানা পদক্ষেপ নিয়েছি; নীতিমালা করেছি। অর্থনৈতিক অঞ্চলে যেন নারী উদ্যোক্তাদের ভালো ব্যবস্থা থাকে, সে ব্যবস্থাও করব।

শ্রমিকদের সুবিধার্থে অর্থনৈতিক অঞ্চল এলাকায় আবাসন সুবিধা, বিশেষ করে নারী শ্রমিকদের জন্য নিরাপদ আবাসন ব্যবস্থার উদ্যোগ নিতে উদ্যোক্তাদের প্রতি আহ্বান জানান প্রধানমন্ত্রী। তিনি বলেন, শ্রমিকদের বিশেষ করে নারী শ্রমিকদের আবাসন ব্যবস্থা করা গেলে উত্পাদন বেশি হবে। প্রয়োজনে শ্রমিকরা ওভারটাইম করলেও পর্যাপ্ত বিশ্রামের সুবিধা পাবেন।

শেখ হাসিনা বলেন, বর্তমান সরকার দেশের প্রবৃদ্ধি ৬ শতাংশের ওপরে উন্নীত করেছে। দারিদ্র্যের হার ২২ শতাংশে নামিয়ে এনেছে, ২০২১ সাল নাগাদ আরো অন্তত ১০ শতাংশ কমিয়ে আনার চেষ্টা করছে। মাথাপিছু আয় ১ হাজার ৩১৬ ডলারে উন্নীত করেছে। আমাদের গৃহীত পদক্ষেপের ফলে দেশে বর্তমানে বিনিয়োগবান্ধব পরিবেশ সৃষ্টি হয়েছে।

অনুষ্ঠানে আরো বক্তব্য রাখেন সিকদার গ্রুপের ব্যবসায়িক প্রতিষ্ঠান পাওয়ার প্যাক ইকোনমিক জোনের ব্যবস্থাপনা পরিচালক রণ সিকদার, আমান গ্রুপের ব্যবস্থাপনা পরিচালক রফিকুল ইসলাম, বে গ্রুপের ব্যবস্থাপনা পরিচালক মো. জিয়াউর রহমান, মেঘনা গ্রুপ অব ইন্ডাস্ট্রিজের ব্যবস্থাপনা পরিচালক মোস্তফা কামাল, এ কে খান গ্রুপের ব্যবস্থাপনা পরিচালক সালাউদ্দিন কাশেম খান ও আব্দুল মোনেম গ্রুপের ব্যবস্থাপনা পরিচালক এএসএম মাঈনউদ্দিন মোনেম।