আজ প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা সরকারি-বেসরকারি ১০টি অর্থনৈতিক অঞ্চল উদ্বোধন করছেন। সকাল সাড়ে ১০টায় বঙ্গবন্ধু আন্তর্জাতিক সম্মেলন কেন্দ্র থেকে একযোগে এই অঞ্চলগুলোর উদ্বোধন করা হবে। বাংলাদেশ অর্থনৈতিক অঞ্চল কর্তৃপক্ষ (বেজা) এসব অঞ্চল বাস্তবায়ন করছে। ১০টি অঞ্চলের মধ্যে রয়েছে সরকারি অর্থনৈতিক অঞ্চল চারটি ও বেসরকারি অঞ্চল ছয়টি। সরকারিগুলোর মধ্যে রয়েছে চট্টগ্রামের মিরসরাই, মৌলভীবাজারের শ্রীহট্ট ও বাগেরহাটের মংলা। আর আছে কক্সবাজারের সাবরাং পর্যটন অঞ্চল। বেসরকারি উদ্যোগে গড়ে ওঠা ছয়টি অর্থনৈতিক অঞ্চলের মধ্যে আছে নরসিংদীর পলাশে ‘এ কে খান অর্থনৈতিক অঞ্চল’, মুন্সীগঞ্জের গজারিয়ায় ‘আবদুল মোনেম অর্থনৈতিক অঞ্চল’, নারায়ণগঞ্জের ‘মেঘনা ইন্ডাস্ট্রিয়াল অর্থনৈতিক অঞ্চল’ ও ‘মেঘনা অর্থনৈতিক অঞ্চল’, গাজীপুরে ‘বে অর্থনৈতিক অঞ্চল’ এবং নারায়ণগঞ্জে ‘আমান অর্থনৈতিক অঞ্চল’। উদ্বোধনী অনুষ্ঠান সফল করতে সংশ্লিষ্ট জেলা প্রশাসককে প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয় থেকে প্রয়োজনীয় নির্দেশনা দেওয়া হয়েছে। জানা গেছে, সরকারি উদ্যোগে দেশের বৃহত্তম অর্থনৈতিক অঞ্চল হবে মিরসরাইয়ে। চট্টগ্রাম সমুদ্রবন্দর থেকে ৬৭ কিলোমিটার দূরে অবস্থিত মিরসরাইয়ের অর্থনৈতিক অঞ্চলটি হবে ইছাখালী চরের সাত হাজার ৭১৬ একর জমিতে। এতে এক হাজার ২২২টি কারখানার প্লট তৈরি করা হবে। প্রকল্পটি বাস্তবায়ন হলে প্রায় ১০ লাখ লোকের কর্মসংস্থান হবে। মৌলভীবাজারের শ্রীহট্ট অর্থনৈতিক অঞ্চলের জন্য সরকারি-বেসরকারি মোট ৩৫৩ একর জমি অধিগ্রহণ করা হয়। মংলা অর্থনৈতিক অঞ্চল মংলা বন্দর থেকে কাছে হওয়ায় সেখানে বিনিয়োগে উদ্যোক্তারা বেশ আগ্রহী। মংলা অর্থনৈতিক অঞ্চল পোশাক কারখানা, খাদ্য প্রক্রিয়াজাতকরণ কারখানা এবং শিপইয়ার্ডের জন্য আকর্ষণীয় স্থান হতে পারে। কক্সবাজারের টেকনাফ উপজেলার সাবরাংয়ে একটি পর্যটন অঞ্চল তৈরি করা হচ্ছে। কক্সবাজারের সাবরাং ট্যুরিজমের জমির পরিমাণ এক হাজার ২৭ একর। পক্ষান্তরে বেসরকারি অর্থনৈতিক অঞ্চলের মধ্যে এ কে খান অর্থনৈতিক অঞ্চলটি ২০০ একর জমির ওপর প্রতিষ্ঠা হচ্ছে। এরই মধ্যে ভূমি উন্নয়নের কাজ প্রায় শেষ পর্যায়ে রয়েছে। আবদুল মোনেম অর্থনৈতিক অঞ্চলটি দুই দফায় ৩২৫ একর জমির ওপর গড়ে উঠবে। প্রথম দফায় ২১৬ একর জমির ওপর অর্থনৈতিক অঞ্চল গড়ে তোলার কাজ করবে। এরই মধ্যে মাটি ভরাট, সীমানা প্রাচীরের কাজ প্রায় শেষ পর্যায়ে। সম্পূর্ণ অবকাঠামো গড়ে উঠলে এতে প্রায় এক লাখ মানুষের কর্মসংস্থান সৃষ্টি হবে। মেঘনা গ্রুপ নারায়ণগঞ্জের সোনারগাঁয়ে দুটি অর্থনৈতিক অঞ্চল প্রতিষ্ঠা করবে। এর মধ্যে ২৪৫ একর জমির উন্নয়নকাজ প্রায় শেষ করা হয়েছে। আর মেঘনা শিল্প অঞ্চল হবে পৃথকভাবে ৮০ একর জমির ওপর। আমান অর্থনৈতিক অঞ্চল হবে মেঘনা নদীর পাশে ১৫০ একর জমির ওপর। বে অর্থনৈতিক অঞ্চলটি গাজীপুরের কোনাবাড়িতে ৬৫ একর জমির ওপর প্রতিষ্ঠা হবে। সোনারগাঁ প্রতিনিধি জানায়, প্রাচীন বাংলার রাজধানী ঐতিহাসিক সোনারগাঁয়ে ৩৫০ বিঘা জমির ওপর তিনটি বিশেষ অর্থনৈতিক অঞ্চল গড়ে উঠছে। এ উপলক্ষে সব ধরনের প্রস্তুতি সম্পন্ন করা হয়েছে বলে জানিয়েছেন জেলা প্রশাসক। আমান গ্রুপের চেয়ারম্যান ও ব্যবস্থাপনা পরিচালক রফিকুল ইসলাম বলেন, ‘সোনারগাঁ উপজেলার আনন্দবাজার এলাকায় আমাদের ক্রয়কৃত ১৫০ বিঘা জমির ওপর বেসরকারিভাবে অর্থনৈতিক অঞ্চলটি গড়ে তোলা হবে।’ মেঘনা গ্রুপ অব ইন্ডাস্ট্রিজের চেয়ারম্যান ও ব্যবস্থাপনা পরিচালক মোস্তফা কামাল বলেন, ‘আমাদের দুটি অর্থনৈতিক অঞ্চলে ইতিমধ্যে ৯০০ কোটি টাকা বিনিয়োগ করা হয়েছে।’ খুব শিগগির তাদের প্রতিষ্ঠান উত্পাদনে যাবে বলে আশা প্রকাশ করেন তিনি। নিজস্ব প্রতিবেদক, নরসিংদী জানায়, আজ নরসিংদীর পলাশ উপজেলার ডাঙ্গায় শীতলক্ষ্যা নদীর তীরে এ কে খান অর্থনৈতিক অঞ্চল উদ্বোধন করা হবে। এ কম্পানিটি ডাঙ্গায় ২০০৯ সাল থেকে ২০০ একর জমির ওপর বিশেষ অর্থনৈতিক অঞ্চল ও ৫০ একর জমির ওপর অভ্যন্তরীণ কনটেইনার টার্মিনাল নির্মাণের কাজ করছে। ইতিমধ্যে জমি অধিগ্রহণ, বালু ভরাট ও সীমানা প্রাচীরের নির্মাণকাজ শেষ হয়েছে। গত বছর বেজা এ কে খান অর্থনৈতিক অঞ্চলের অনুমোদন দেন। একই সঙ্গে সরকার কম্পানিটিকে আন্তর্জাতিক কনটেইনার টার্মিনালের অনুমতি দিয়েছে। এ কে খান অ্যান্ড কম্পানির এমডি (লজিস্টিক, শিপিং অ্যান্ড পোর্ট) এমরান মিয়া চৌধুরী বলেন, ‘আমাদের অর্থনৈতিক অঞ্চলে অত্যাধুনিক প্রযুক্তিনির্ভর হাইটেক পার্ক নির্মাণ করা হবে। আশা করছি ২০১৭ সালে কনটেইনার টার্মিনাল ও ২০১৮ সালে অর্থনৈতিক অঞ্চলের শিল্পপ্রতিষ্ঠান উত্পাদনে যাবে।’ মুন্সীগঞ্জ প্রতিনিধি জানায়, মুন্সীগঞ্জের গজারিয়া উপজেলার চরবাউশিয়া এলাকায় আবদুল মোনেম লিমিটেডের উদ্যোগে স্থাপিত বিশেষ অর্থনৈতিক অঞ্চলের উদ্বোধন আজ রবিবার। গতকাল দুপুরে মুন্সীগঞ্জের অতিরিক্ত জেলা প্রশাসক হারুন আর রশীদ ভিডিও কনফারেন্সের আয়োজন ও প্রস্তুতি তদারকি করেন।