বাংলাদেশের নারী পুলিশকে অন্যদের জন্য দৃষ্টান্ত হিসেবে স্বীকৃতি দিয়েছে জাতিসংঘ। জাতিসংঘের মহাসচিব বান কি মুন বলেছেন, বাংলাদেশের নারী পুলিশ সদস্যরা নিষ্ঠার সাথে দায়িত্ব পালন করেছেন। যা অন্যদের জন্য দৃষ্টান্ত হয়ে থাকবে। এরমধ্য দিয়ে শান্তিরক্ষায় লিঙ্গ সমতা আনতেও বাংলাদেশ পথপ্রদর্শক হিসেবে কাজ করছে।
গত বুধবার জাতিসংঘ সদর দপ্তরে বাংলাদেশ মহিলা পুলিশের সাফল্য নিয়ে নির্মিত “এ জার্নি অব এ থাউজেন্ড মাইলস্ ঃ পিসকিপার” নামের একটি তথ্যচিত্র (ডকুমেন্টারি) প্রদর্শনীর অনুষ্ঠানে মহাসচিব একথা বলেন।
হাইতির যুদ্ধবিধ্বস্ত এলাকায় নানা প্রতিকূল পরিবেশে মানুষের জন্য শান্তি প্রতিষ্ঠায় কাজ করছে বাংলাদেশ পুলিশের একটি টিম। পাঁচজন নারী পুলিশ সাহসী ভূমিকা নিয়ে দাঁড়িয়েছেন বিক্ষুদ্ধ জনতার সামনে। শান্তিপূর্ণ পরিবেশ নিশ্চিত করেছেন তারা। তাদের সাহসী ভূমিকা, সন্তান-স্বামীকে দেশে রেখে গিয়ে এক বছর হাইতিতে কাটানো পেশাদারিত্বের অভিজ্ঞতা আলোকিত হয়েছে ওই ডকুমেন্টারিতে। সেখানে কলেরা আক্রান্ত এলাকায় মানবতার সেবায় বাংলাদেশ পুলিশের ভূমিকা নিয়ে উচ্ছসিত মানুষ। সেটাও প্রশংসিত হয়েছে ডকুমেন্টারিতে।
ডকুমেন্টারিটি পর্যালোচনায় দেখা যায়, কাঁচা হাতে ছোট্ট শিশুর লেখা চিঠিতে চোখ রেখে অশ্রু ঝরিয়েছেন মা পুলিশ। আবার মুহুর্তেই হয়েছেন পেশাদার। খেলাধুলা, নামাজসহ ধর্মাচার এবং ইউনিফরম পরে নিষ্ঠার সাথে পেশাগত দায়িত্ব পালন করছেন। সব মিলিয়ে এক অনন্য প্রতিচ্ছবি তুলে ধরা হয়েছে বাংলাদেশের মহিলা পুলিশ ইউনিটের। সমস্ত সংশয় উড়িয়ে দিয়ে আন্তর্জাতিক অঙ্গনে তারাও যে পুরুষ পুলিশ সদস্যদের মত সমান গুরুত্বপূর্ণ দায়িত্ব পালন করতে পারেন-সেটা তারা প্রমাণ করেছেন। হাইতির জনগণ, জাতিসংঘে কর্মরত সদস্য এবং নিজেদেরকে রক্ষার চ্যালেঞ্জে তারা জয়ী হয়েছে। বাংলা, ইংরেজি এবং ক্রিয়োল ভাষায় নির্মিত ৯৫ মিনিটের ওই তথ্যচিত্রটি নির্মাণ করেছেন ফিল্ম একাডেমি পুরস্কারপ্রাপ্ত ভারতের গীতা গান্দভির এবং পাকিস্তানের শারমিন ওবায়েদ চিনয়।
জাতিসংঘ মহাসচিব বান কি মুন তার বক্তৃতায় নানা প্রতিকূলতার মধ্যেও শান্তিরক্ষার চ্যালেঞ্জিং দায়িত্ব পালনের জন্য বাংলাদেশের মেয়েদেরকে অভিনন্দন জানিয়েছেন।
বাংলাদেশ পুলিশের ইন্সপেক্টর জেনারেল এ কে এম শহীদুল হক এক প্রতিক্রিয়ায় বলেছেন, “বাংলাদেশ পুলিশের পেশাদারিত্ব, সক্ষমতা শুধু দেশেই নয়-আন্তর্জাতিক অঙ্গনেও প্রমাণিত সত্য। বিশ্বের ১৭টি দেশে পুরুষ সদস্যগণ যে কৃতিত্ব দেখিয়েছে-তার সাথে যুক্ত হলো আমাদের নারী সদস্যদের কৃতিত্ব। জাতিসংঘ মহাসচিব যে কৃতিত্বের প্রশংসা করেছেন-সেটা এদেশের সকল পুরুষ ও নারী পুলিশের পেশাদারীত্বকে আরো উজ্জীবিত করবে। সব সংশয় কাটিয়ে এদেশের তরুণ প্রজন্মের নারীরা পৃথিবীর যে কোন প্রান্তে যে কোন প্রতিকূলতা জয় করতে সাহসী হবে। এটা নারীর এগিয়ে যাওয়া, ক্ষমতায়নের এক অনন্য দৃষ্টান্ত।”
তথ্যচিত্রটির নির্মাতা গীতা গান্দভির এক প্রতিক্রিয়ায় বলেছেন-“সারা বিশ্বের জানা দরকার যে বাংলাদেশের মেয়েরা কি করছে।”
শারমিন ওয়াজেদ চিনয় বলেছেন, অনেকে বিশ্বাস করবে না যে বাংলাদেশ থেকে মুসলমান মেয়েরা হাইতিতে এসে শান্তিরক্ষার চ্যালেঞ্জ গ্রহণ করেছে। বাচ্চাদের কোলে নিয়ে অশ্রুসিক্ত স্বামীরা যাদেরকে বিদায় জানিয়েছে-আজ তারা গর্বের প্রতীক। বাংলাদেশের নারী পুলিশ সেদেশে বেড়ে ওঠা অন্যান্য মেয়েদের জন্য অনুকরণীয় ব্যক্তিত্বে পরিণত হয়েছে।
জাতিসংঘ পুলিশের উপদেষ্টা স্টেফান ফেলার, সদস্য রাষ্ট্রগুলোর প্রতিনিধি এবং বিশ্বসংস্থার ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তাগণ প্রদর্শনীতে উপস্থিত ছিলেন।
২০১৩ সালে সর্বপ্রথম বাংলাদেশ হাইতিতে একটি পূর্ণাঙ্গ নারী পুলিশ কন্টিনজেন্ট প্রেরণ করে। বর্তমানে হাইতি ও কঙ্গোতে মোট ৮৬২ জন নারী পুলিশ শান্তি রক্ষার দায়িত্ব পালন করছেন।
বাংলাদেশ পুলিশের পুরুষ কন্টিনজেন্ট বিভিন্ন দেশে শান্তিরক্ষার দায়িত্ব পালনকালে তাদের পেশাদারিত্ব ও নিষ্ঠার জন্য নানাভাবে প্রশংশিত হয়েছেন।