বাড়ছে রফতানি, কমছে দাম

পোশাক রফতানিতে বাংলাশের সবচেয়ে বড় বাজার যুক্তরাষ্ট্র। রানা প্লাজা ধসের পর কর্মক্ষেত্রে নিরাপত্তা ইস্যুতে পণ্যের শুল্কমুক্ত প্রবেশাধিকার জিএসপি স্থগিত করার ফলে যুক্তরাষ্ট্রের বাজারে রফতানি কমে যাওয়ার আশঙ্কা করা হলেও ধারাবাহিকভাবে রফতানি আয় বেড়েছে। তবে পণ্যের দাম কমেছে বলে জানিয়েছেন ব্যবসায়ী নেতারা।

২০১৫ সালের জানুয়ারি থেকে নভেম্বর পর্যন্ত ১১ মাসে যুক্তরাষ্ট্রের বাজারে ১৭২ কোটি বর্গমিটার সমপরিমাণ কাপড়ের ৫০০ কোটি ডলারের পোশাক রফতানি করেছে বাংলাদেশ। এই আয় ২০১৪ সালের প্রথম ৯ মাসের ৪৪৮ কোটি ডলারের রফতানির চেয়ে ১১ দশমিক ৪১ শতাংশ বেশি। গত দু’বছরের মধ্যে বাজারটিতে এটিই সর্বোচ্চ প্রবৃদ্ধি বাংলাদেশের। ইউএস ডিপার্টমেন্ট অব কমার্সের অফিস অব টেক্সটাইল অ্যান্ড অ্যাপারেল (অটেক্সা) সম্প্রতি এই হালনাগাদ পরিসংখ্যান প্রকাশ করেছে।

অটেক্সার হিসাব বলছে, ২০১৪ সালের জানুয়ারি থেকে নভেম্বরে প্রতি বর্গমিটার সমপরিমাণ কাপড় তৈরি করা এক ইউনিট পোশাকের দাম ছিল প্রায় ৩ ডলার। বিদায়ী বছরের একই সময় এই মূল্য কমে ২ ডলার ৯০ সেন্টে দাঁড়ায়। তার মানে এক বছরের ব্যবধানে পোশাকের দাম কমেছে ৩ দশমিক ৭৫ শতাংশ। গত বছরের প্রথম ছয় মাসে পোশাকের মূলহ্রাসের হার ছিল ২ দশমিক ৪৫ শতাংশ। অর্থাৎ গত বছরের শেষ চার মাসেই মূল্য কমছে ১ দশমিক ৩ শতাংশ।

তবে পোশাক মালিকদের মতে, রফতানির বাজারে পোশাকের মূল্য যেমন কমছে, পাশাপাশি বেড়েছে উৎপাদন খরচও। ফলে পোশাক মালিকরা স্বাভাবিকভাবেই প্রতিযোগিতায় পিছিয়ে পড়বেন। তাছাড়া কমপ্লায়েন্স ইস্যুতে কারখানা সংস্কারেও বিপুল অংকের অর্থ ব্যয় করতে হচ্ছে। তাই পণ্যের দাম বাড়াতে ক্রেতাদের প্রতি আহ্বান জানান তাঁরা।

তবে মালিকদের সঙ্গে দ্বিমত পোষণ করেছেন খাতসংশ্লিষ্ট বিশ্লেষকরা। তাঁদের মতে, কারখানার মালিকরা নিজেদের মধ্যে প্রতিযোগিতার কারণেই পণ্যের দাম কমছে। মালিকরা দাম না কমালে ক্রেতারা বাধ্য হয়েই বেশি দামে কিনতে হতো। নিজেরা দাম কমালে কারো কিছু করার নেই।

বিজিএমইএর সাবেক সভাপতি ও বাংলাদেশ রফতানিকারক সমিতির (ইএবি) সভাপতি আবদুস সালাম মুর্শেদী ভোরের পাতাকে জানান, রানা প্লাজা ধস পোশাক শিল্পের জন্য একটা বড় ধাক্কা। তবে দেশের শিল্পোদ্যোক্তাদের দৃঢ় মনোবলের কারণে পোশাক শিল্প টিকে আছে। দেশি-বিদেশি ষড়যন্ত্রের শিকার পোশাক শিল্পের জিএসপি স্থগিত হওয়ায় আরেকটি ইমেজ সঙ্কট দেখা দেয়। তবে এতকিছুর পরও পোশাক রফতানি আশানুরূপ হারে বাড়ছে। কিন্তু দাম নিয়ে হতাশা রয়েছে। ক্রেতারা দাম কমিয়ে দিয়েছেন। কিন্তু খরচ

যেভাবে দিন দিন বাড়ছে, ভবিষ্যতে পোশাকের দাম বৃদ্ধি না হলে অনেক ব্যবসায়ীর টিকে থাকাটা কষ্ট হয়ে যাবে।
এদিকে অর্থের পাশাপাশি পরিমাণের দিক থেকেও যুক্তরাষ্ট্রের পোশাক রফতানি বেড়েছে। গত বছরের প্রথম ১১ মাসে বাংলাদেশ থেকে ১৭২ কোটি ৫৭ লাখ বর্গমিটারের সমপরিমাণ পোশাক রফতানি হয়। এটি তার আগের বছরের একই সময়ে রফতানি হওয়া ১৪৮ কোটি বর্গমিটারের চেয়ে ১৫ দশমিক ৯৫ শতাংশ বেশি। এই প্রবৃদ্ধি যুক্তরাষ্ট্রে শীর্ষ ১০ রফতানিকারক দেশের মধ্যে সর্বোচ্চ।

গত বছরের প্রথম ১১ মাসে বিশ্বের বিভিন্ন দেশ থেকে যুক্তরাষ্ট্র ২ হাজার ৫১৯ কোটি বর্গমিটার সমপরিমাণ কাপড়ের ৭ হাজার ৮৯৬ কোটি ডলারের তৈরি পোশাক আমদানি করেছে। তাদের পোশাক আমদানিতে প্রবৃদ্ধি হয়েছে ৪ শতাংশ।এদিকে তৈরি পোশাক রফতানিতে যুক্তরাষ্ট্রের বাজারে শীর্ষস্থানটি চীনের দখলেই আছে। গত বছরের প্রথম ১১ মাসে দেশটি ২ হাজার ৮৪০ কোটি ডলারের পোশাক রফতানি করেছে। প্রবৃদ্ধি হয়েছে ২ দশমিক ৩৪ শতাংশ। যুক্তরাষ্ট্রের পোশাকের বাজারের ৩৫ দশমিক ৮৬ শতাংশই চীনের দখলে।

দ্বিতীয় অবস্থানে আছে ভিয়েতনাম। আলোচ্য সময়ে দেশটি রফতানি করেছে ৯৭৯ কোটি ডলারের পোশাক। তাদের প্রবৃদ্ধি প্রায় ১৪ শতাংশ এবং বাজার হিস্যা ১২ দশমিক ৩৪ শতাংশ। অনেক দিন ধরেই তৃতীয় বাংলাদেশ।

অটেক্সার তথ্য বিশ্লেষণ করে দেখা যায়, যুক্তরাষ্ট্রে শীর্ষ ছয় রফতানিকারকের মধ্যে পোশাক রফতানি আয়ের প্রবৃদ্ধিতে বাংলাদেশ বর্তমানে দ্বিতীয় অবস্থানে আছে। অন্যদিকে পরিমাণের হিসাবে এই বাজারে বাংলাদেশের হিস্যা বেড়ে হয়েছে ৬ দশমিক ৮১ শতাংশ। আর অর্থের হিসাবে ৬ দশমিক ৩০ শতাংশ। ফলে বাংলাদেশের অবস্থান আগের চেয়ে কিছুটা শক্ত হয়েছে।