সরকারি বড় কেনাকাটা ই-টেন্ডারে যাচ্ছে

সরকারি বড় কেনাকাটায় অনিয়ম ঠেকাতে ই-টেন্ডার চালু করছে সরকার। ৫০ কোটি টাকার বেশি কাজের ক্ষেত্রে মার্চ থেকে কাগজবিহীন দরপত্র চালু হবে। সেন্ট্রাল প্রকিউরমেন্ট টেকনিক্যাল ইউনিটের (সিপিটিইউ) সহায়তায় প্রাথমিকভাবে ১০০ সরকারি প্রতিষ্ঠানের বড় কেনাকাটায় ই-টেন্ডার চালু হচ্ছে। বর্তমানে ৫০ কোটি টাকার নিচে ছোট কেনাকাটায় ই-টেন্ডার চালু আছে।
বড় সরকারি কেনাকাটার ক্ষেত্রে প্রধানমন্ত্রী এবং সরকারি ক্রয়-সংক্রান্ত মন্ত্রিসভা কমিটির অনুমোদনও অনলাইনে করার প্রক্রিয়াও শুরু হয়েছে। এসব বিষয়ে আগামীকাল মঙ্গলবার পরিকল্পনা কমিশনে মন্ত্রিপরিষদ বিভাগ এবং প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয়ের ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তাদের সঙ্গে এক বৈঠক অনুষ্ঠিত হওয়ার কথা রয়েছে। বৈঠকে পরিকল্পনামন্ত্রী আ হ ম মুস্তফা কামাল সভাপতিত্ব করবেন। এতে ১০ কোটি টাকার বেশি বুদ্ধিবৃত্তিক এবং পেশাগত সেবা ক্রয়ের প্রক্রিয়া নিয়েও আলোচনা হবে।
সংশ্লিষ্টরা বলেছেন, পানিসম্পদ, বিদ্যুৎ এবং জ্বালানি খাতসহ কয়েকটি খাতের বড় কেনাকাটা গুটি কয়েক প্রতিষ্ঠানের হাতে রয়েছে। যোগসাজশে ঘুরে-ফিরে কিছু প্রতিষ্ঠান কাজ নিচ্ছে। ই-টেন্ডার চালু হলে যোগসাজশ থাকবে না। এতে দরপত্র আহ্বান থেকে কার্যাদেশ পর্যন্ত অনলাইনে বিশেষ পদ্ধতিতে সম্পন্ন হয়। ফলে কারোর হস্তক্ষেপ করার সুযোগ থাকে না।
পরিকল্পনা মন্ত্রণালয়ের বাস্তবায়ন পরিবীক্ষণ ও মূল্যায়ন বিভাগের (আইএমইডি) সচিব শহীদ উল্লাহ খন্দকার সমকালকে বলেন, ই-টেন্ডার উন্নত বিশ্বের গাইড লাইন অনুযায়ী বাস্তবায়িত হচ্ছে। এ উদ্যোগকে আরও এক ধাপ এগিয়ে নিতে বড় কেনাকাটায় এ পদ্ধতি চালু হচ্ছে। তিনি বলেন, অনলাইনে সরকারি দরপত্র আহ্বান থেকে যাবতীয় কার্যক্রম সম্পন্ন করতে পারলে বিশ্বের যে কোনো প্রান্ত থেকে ঠিকাদাররা দরপত্র জমা দিতে পারবেন। এতে কেনাকাটায় অসুস্থ প্রতিযোগিতা পুরোপুরি বন্ধ হবে। এসব দিক বিবেচনা করে প্রধানমন্ত্রীর নির্দেশে ২০১৬ সালের ডিসেম্বরের মধ্যে সরকারি সব কেনাকাটা ই-টেন্ডারের আওতায় আনা হচ্ছে।
সূত্র জানায়, ৫০ কোটি টাকার ঊধর্ে্বর কেনাকাটা অনুমোদনে সরকারি ক্রয় কমিটি এবং প্রধানমন্ত্রীর অনুমোদনও ডিজিটাল প্রক্রিয়ায় সম্পন্ন হবে। সরকারি ক্রয় কমিটি বৈঠকে কেনাকাটার প্রস্তাব স্ক্রিনে উপস্থাপন করা হবে। বৈঠকে আলোচনার পর অর্থমন্ত্রী সভার সিদ্ধান্ত অনুযায়ী সংশ্লিষ্ট বাটনে ক্লিক করবেন। এরপর প্রধানমন্ত্রী লগ ইন করে সরকারি ক্রয়-সংক্রান্ত মন্ত্রিসভা কমিটির সুপারিশ অনুমোদন করবেন। এক্ষেত্রে প্রধানমন্ত্রীর অনুমোদন নিয়ে মন্ত্রিপরিষদ সচিব প্রধানমন্ত্রীর পক্ষে অনলাইনে অনুমোদন দেওয়ার সুযোগও রাখা হচ্ছে। ক্রয়-সংক্রান্ত মন্ত্রিসভা কমিটির বৈঠকে সভাপতি ও সব সদস্য কেনাকাটার প্রস্তাব লগ ইন করতে পারবেন। তারা প্রত্যেকে অনলাইনে ক্রয় প্রস্তাবটি দেখে তাদের সিদ্ধান্ত অনলাইনে জানাবেন। ক্রয়-সংক্রান্ত মন্ত্রিসভা কমিটির সভাপতি সেটি সমন্বয় করে নির্দিষ্ট বাটনে ক্লিক করে জানাবেন। এর পর প্রধানমন্ত্রী লগ ইন করে অনলাইনে তা অনুমোদন করবেন।
সিপিটিইউ মহাপরিচালক ফারুক হোসেন সমকালকে বলেন, ৫০ কোটি টাকার বেশি বড় কেনাকাটায় অনলাইনভিত্তিক করার ক্ষেত্রে কিছু জটিলতা ছিল। এ কারণে গত ছয় বছরের বেশি সময় ছোট ছোট কেনাকাটায় ই-টেন্ডার চালু হয়েছে। এ ছাড়া দরপত্র মূল্যায়নসহ যাবতীয় কার্যক্রম অনলাইনে সম্পন্ন করা হলেও প্রধানমন্ত্রী এবং সরকারি ক্রয়-সংক্রান্ত্র মন্ত্রিসভা কমিটির অনুমোদনের প্রক্রিয়া নিয়ে কিছু সমস্যা ছিল। এসব বিষয়ে প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয়, মন্ত্রিপরিষদ বিভাগ এবং জনপ্রশাসন মন্ত্রণালয়ের সঙ্গে আলোচনা করে সমাধান করা হবে। তিনি বলেন, সিপিটিইউর প্রস্তাব অনুমোদন হলেই
বড় কেনাকাটায় ই-জিপি চালু
করা হবে।
২০১১ সালে চারটি সংস্থা স্বল্প পরিসরে ই-টেন্ডার কার্যক্রম শুরু করে। গত পাঁচ বছরে সেটি বেড়ে দাঁড়িয়েছে ১০০ সংস্থায়। বাকি সংস্থাগুলোকে ই-টেন্ডারে আনতে রোডম্যাপ করেছে সিপিটিইউ। সেখানে ২০১৬ সালের ডিসেম্বরের মধ্যেই ১২শ’ সংস্থা পুরোপুরি এ পদ্ধতির আওতায় আনছে। সারাদেশে দরপত্র দাতার সংখ্যা বর্তমানে ১৮ হাজার। ইতিমধ্যে ৩০ হাজার কোটি টাকার বেশি কেনাকাটা ই-টেন্ডারের মাধ্যমে করা হয়েছে। কার্যক্রমে সহযোগিতা করছে ৪০টি সরকারি-বেসরকারি ব্যাংক।