ডিসিসির সিসি ক্যামেরা

অপরাধ দমনে ক্লোজ সার্কিট (সিসি) ক্যামেরায় আওতায় আসছে পুরো রাজধানী। ডিএমপির পাশাপাশি দুই সিটি কর্পোরেশন ক্যামেরা বসানোর সিদ্ধান্ত নিয়েছে। ইতোমধ্যে গুরুত্বপূর্ণ এলাকায়গুলোতে সিসি ক্যামেরা বসানো হয়েছে। পর্যায়ক্রমে পুরো শহরে ক্যামেরা বসানো হবে বলে দুই মেয়র ঘোষণা দিয়েছেন। গতকালের ভোরের কাগজে এ খবর জানিয়ে একটি রিপোর্ট ছাপা হয়েছে। যথাযথ রক্ষণাবেক্ষণ নিশ্চিত করা গেলে এগুলো জননিরপত্তা রক্ষায় পুলিশের সহায়ক হবে একই সঙ্গে সিটি কর্পোরেশনের সেবা কার্যক্রমেরও সহায়ক হবে।

রাজধানীতে মহানগর পুলিশ বিভাগের উদ্যোগে সিসি ক্যামেরা স্থাপনের উদ্যোগ নেয়া হয়েছিল বেশ কয়েক বছর আগেই। কিন্তু এ প্রকল্পটি যথাযথভাবে বাস্তবায়িত হয়নি। ডিএমপির সিসি ক্যামেরা প্রকল্পের নাজুক পরিণতি এবং অর্থের অপচয় নিয়ে পত্রপত্রিকায় অনেক লেখালেখি হয়েছে বিগত সময়ে। গত অক্টোবরে ভোরের কাগজের একটি রিপোর্টে জানানো হয়, পুলিশের ক্যামেরা কাজ করে না। রোদে পুড়ে ও বৃষ্টির পানিতে নষ্ট হয়ে গেছে ১৫৫টি ক্যামেরার প্রায় সবকটি। বিকল ৩১টি ইলেক্ট্রনিক ট্র্যাফিক মেসেজ ডিসপ্লে বোর্ড। জানা যায়, পুলিশের কাজকে সহজতর ও গতিশীল করতে বর্তমান সরকার ১৯৯৮ সালে ‘ঢাকা মেট্রোপলিটন কন্ট্রোল রুম আধুনিকায়ন’ নামে একটি প্রকল্প হাতে নেয়। প্রকল্পের উদ্দেশ্য ছিল নগরের গুরুত্বপূর্ণ স্থানে সিসি ক্যামেরা বসানো ও কেন্দ্রীয়ভাবে অপরাধ ও ট্রাফিক ব্যবস্থা নিয়ন্ত্রণ করা, ট্রাফিক ডিসপ্লে বোর্ডের মাধ্যমে রাস্তার যানজট পরিস্থিতি পথ ব্যবহারকারীদের জানানো, পুলিশের বেতার যোগাযোগ ব্যবস্থাকে সম্পূর্ণ ডিজিটাল করা এবং ওয়াকিটকি ব্যবস্থাপনা উন্নত করা। প্রকল্প গ্রহণের ১০ বছর পর কাজ শুরু হয়। ওই প্রকল্পের আওতায় রাজধানী ঢাকার গুরুত্বপূর্ণ ৫৯টি সংযোগ ও প্রবেশমুখে ১৫৫টি ক্লোজড সার্কিট (সিসি) ক্যামেরাও বসানো হয়। এও চার বছর আগে। কিন্তু পুলিশ কর্তৃপক্ষ এগুলো বুঝে না নেয়ায় রক্ষণাবেক্ষণের অভাবে নষ্ট হয়ে যায় ক্যামেরা ও আনুষঙ্গিক যন্ত্রপাতি। এ হলো পুলিশের সিসি ক্যামেরা প্রকল্প বিষয়ক আমাদের নেতিবাচক অভিজ্ঞতা। সিটি কর্পোরেশনের এবারের উদ্যোগ ভিন্নতর অভিজ্ঞতা দেবে বলেই আমরা আশাবাদী।

রাজধানীতে অপরাধী শনাক্তকরণে সিসি ক্যামেরা সহায়ক হয়েছে এমন উদাহরণ কিছু রয়েছে। গত বছর ২৮ ফেব্রুয়ারি সন্ধ্যার পর মালিবাগ মোড়ে দৈনিক ভোরের কাগজ পত্রিকা ও দেশটিভি কার্যালয়ের সামনে বোমাবাজি ও যানবাহনে অগ্নিসংযোগের ঘটনা ঘটে। ভোরের কাগজের সিসি টিভিতে রেকর্ডকৃত সেই দৃশ্য থেকে তদন্ত সহায়ক তথ্য পেয়েছে বলে পুলিশের দাবি। এর আগে ২০১৩ সালের ২৯ জুলাই রাতে গুলশানে শপার্স ওয়ার্ল্ডের সামনে যুবলীগ নেতা রিয়াজুল হক খান মিল্কী হত্যাকাণ্ডের দৃশ্য সিসি টিভিতে রেকর্ড হলে তার ভিত্তিতেই পুলিশ ঘাতকদের শনাক্ত করে। আবার গত ২৯ সেপ্টেম্বর সন্ধ্যায় গুলশান ৯০ নম্বর সড়কে ইতালির নাগরিক তাবেলা সিজার খুনের পর ওই এলাকার দুই শতাধিক সিসি টিভি ফুটেজ খতিয়ে দেখেও মেলেনি কোনো ক্লু। সিসি ক্যামেরা বসালেই যে অপরাধ বন্ধ হয়ে যাবে বা এর মাধ্যমে শতভাগ ঘটনায় অপরাধী শনাক্ত হয়ে যাবে- তার নিশ্চয়তা হয়তো নেই। তবে যথাযথভাবে পরিচালিত হলে এর কিছু সুফল নিশ্চয়ই পাওয়া যাবে।

সিটি কর্পোরেশনের সিসি ক্যামেরা বসানোর উদ্যোগেকে আমরা স্বাগত জানাই। এর পূর্ণ কার্যকারিতা নিশ্চিত করতে হলে সংশ্লিষ্ট যন্ত্রপাতিগুলোর যথাযথ রক্ষণাবেক্ষণের ব্যবস্থা নিতে হবে। প্রশিক্ষিত লোকবল দিয়ে এর সিস্টেম সচল ও আপডেটেড রাখতে হবে, প্রাপ্ত তথ্যেরও সুরক্ষা নিশ্চিত করতে হবে।