শামসুন্নাহার নারী পুলিশ কর্মকর্তা। কর্মক্ষেত্রে এক সফল নারী। দেশে নারীরা পিছিয়ে নেই। প্রধানমন্ত্রী, স্পিকার ও বিরোধীদলীয় নেতা নারী। এছাড়া বিভিন্ন সেক্টরে নারীরা গুরুত্বপূর্ণ পদে সাহস ও নিষ্ঠার সঙ্গে কাজ করে এগিয়ে যাচ্ছেন। আইনশৃঙ্খলা বাহিনী, সেনাবাহিনী, বিমানবাহিনীতেও নারী সাহসী ভূমিকা পালন করছে। গতকাল পুলিশ সপ্তাহ-২০১৬ উপলক্ষে দেশের ইতিহাসে প্রথম প্যারেড অধিনায়ক হয়েছেন নারী পুলিশ সুপার শামসুন্নাহার। রাজারবাগে প্যারেড মাঠে তার সাহসিকতা ও কৌশল দেখে পুলিশ সপ্তাহের অনুষ্ঠানে উপস্থিত প্রধানমন্ত্রীসহ সকল অতিথি মুগ্ধ। শামসুন্নাহার চাঁদপুর জেলার পুলিশ সুপার হিসেবে কর্মরত আছেন। গত ১৫ বছরের চাকরি জীবনে তার অধিনায়ক হওয়ার স্বপ্ন গতকাল পূরণ হলো। এতে তিনি গর্বিত ও আনন্দিত।রাজারবাগে প্যারেড অধিনায়কের দায়িত্ব পালন শেষে শামসুন্নাহার সংবাদকে জানান, গত ২৭ ডিসেম্বর থেকে পুলিশ সপ্তাহের প্যারেড শুরু হয়। এরপর ২ জানুয়ারি থেকে টানা তিনি প্যারেড মাঠে সিনিয়র অধিনায়কদের গাইডলাইন নিয়ে অধিনায়কত্ব পালনের বিভিন্ন কৌশল শিখেন। পুলিশ সপ্তাহের অনুষ্ঠানে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা, স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী, পুলিশের আইজিপি, অতিরিক্ত আইজিপিসহ কয়েক হাজার অতিথির উপস্থিতিতে তিনি দেশের ইতিহাসের প্রথমবারের মতো নারী পুলিশ সুপার হিসেবে অধিনায়কত্ব করেন। এর আগে তিনি ২০০৮ সালে উপ-অধিনায়ক হিসেবে দায়িত্ব পালন করেছেন। তিনি বলেন, আমি আনন্দিত ও গর্বিত। স্বপ্ন ছিল একদিন পুলিশ সপ্তাহের প্যারেড অনুষ্ঠানের অধিনায়ক হবেন। গতকাল তার সেই স্বপ্ন পূরণ হলো।ফরিদপুর সদর উপজেলার চর মাধবদিয়া ইউনিয়নে জন্ম গ্রহণকারী শামসুন্নাহার ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় থেকে রাষ্ট্রবিজ্ঞানে এমএসএস ও এমফিল কোর্স শেষ করে ২০০১ সালে বিসিএস-এর মাধ্যমে পুলিশে যোগ দেন। বিসিএস-এ প্রথম পছন্দ ছিল পুলিশ। বিসিএস পরীক্ষায় পাস করে সহকারী পুলিশ সুপার হিসেবে বাংলাদেশ পুলিশ সার্ভিসে যোগদান করেন। স্বপ্ন ছিল প্যারেড অফিসার হবেন। তাই পুলিশে যোগদানের পর পরই পুলিশ একাডেমির সারদার ক্যাম্প থেকে প্যারেড করেন। তিনি প্রথমে মানিকগঞ্জে চাকরিতে যোগদান করেন। এরপর ঢাকা মেট্রোপলিটন পুলিশ, পুলিশ সদর দফতর, টুরিস্ট পুলিশসহ পুলিশের বিভিন্ন ইউনিটে সফলতার সঙ্গে দায়িত্ব পালন করেন। চাকরি জীবনে ২০১১ সাল থেকে ২০১৪ পর্যন্ত জাতিসংঘের শাখা অফিস ইতালিতে উচ্চ পদস্থ কর্মকর্তা হিসেবে সফলতার সঙ্গে দায়িত্ব পালন করেছেন। এর আগে ২০০৯ সাল থেকে ২০১০ সাল পর্যন্ত পূর্ব তিমুরে জাতিসংঘ মিশনের মাধ্যমে পূর্ব তিমুর জাতীয় পুলিশের মানবসম্পদ উন্নয়ন কর্মকা-ে সফলতার সঙ্গে দায়িত্ব পালন করেন।কর্মজীবনে তিনি ২০০৭ সালে যুক্তরাজ্যের বার্মিংহাম বিশ্ববিদ্যালয় থেকে স্কলারশিপ নিয়ে এমবিএ ডিগ্রি লাভ করেন। জাতিসংঘে দীর্ঘদিন উচ্চ পদে সফলতার সঙ্গে দায়িত্ব পালনের স্বীকৃতিস্বরূপ ৭ বার জাতিসংঘ শান্তি পদক লাভ করেন। এছাড়াও বাংলাদেশ পুলিশে দক্ষতার সঙ্গে দায়িত্ব পালনের স্বীকৃতিস্বরূপ ২ বার আইজি ব্যাজপ্রাপ্ত হন।কর্মজীবনে তিনি পেশাগত ও ব্যক্তিগত কারণে যুক্তরাষ্ট্র, যুক্তরাজ্য, ফ্রান্স, জার্মানি, ইতালি, ভ্যাটিকান সিটি, অস্ট্রেলিয়া, পূর্ব তিমুর, সিঙ্গাপুর, মালয়েশিয়া, ইন্দোনেশিয়া, সৌদি আরব, দুবাই, কাতারসহ বিশ্বের বিভিন্ন দেশ ভ্রমণ করেন।পুলিশ কর্মকর্তাদের মতে, নারীর ক্ষমতায়নে নতুন মাইলফলক হিসেবে এটি ইতিহাস হয়ে থাকবে। পুলিশ সপ্তাহের এ অনুষ্ঠানে আমর্ড পুলিশ, মেট্রোপলিটন পুলিশ, রেঞ্জ পুলিশ ও র্যাবসহ পুলিশের ১৩টি দলের সহস্রাধিক সদস্যের প্যারেডে নেতৃত্ব দেন অধিনায়ক। এসপি শামসুন্নাহার চার ভাই-বোনের মধ্যে সবার বড়। প্যারেড অনুষ্ঠানে তার বাবা সামছুল হক ওরফে ভোলা মাস্টার ও মা আমিনা বেগম উপস্থিত ছিলেন। তারা মেয়ের প্যারেড অনুষ্ঠানের নেতৃত্ব দেখে মুগ্ধ ও গবির্ত হন। এসপি শামসুন্নাহার ছুটির সময় পরিবারের সদস্যদের নিয়ে সময় কাটান। গান গাওয়া ও গান শোনাও তার শখ। ব্যক্তিগত জীবনে তিনি বিবাহিত এবং এক পুত্র ও এক কন্যা সন্তানের জননী।
–