ধীরগতিতে হলেও দেশে শৈশবকালীন অপুষ্টির হার কমছে। এর মূল কারণ যথাযথভাবে শিশুখাদ্য ও পুষ্টিবিধির চর্চা না করা। বাংলাদেশের অনূর্ধ্ব পাঁচ বছর বয়সী প্রতি পাঁচজন শিশুর মধ্যে দুজন খর্বকায়। আর প্রজননক্ষম বয়সের প্রতি আটজন নারীর মধ্যে একজন নারী খর্বকায়। অনূর্ধ্ব পাঁচ বছর বয়সী শিশুদের শতকরা ১৪ ভাগ কৃশকায়। দেশের মানুষের মধ্যে ব্যাপক মাত্রায় অণুপুুষ্টি-কণার ঘাটতি রয়েছে। বয়ঃসন্ধিকালীন মেয়েদের এক-চতুর্থাংশ অপুষ্টির শিকার। নারীদের মধ্যে ওজনাধিক্য এবং স্থুলতার হার ক্রমবর্ধমান।গতকাল জাতীয় পুষ্টি নীতি-২০১৫ এর অবহিতকরণ সভায় এসব তথ্য জানানো হয়। দুপুরে স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয় আয়োজিত এই সভা অনুষ্ঠিত হয় বিয়াম মিলনায়তনে। স্বাস্থ্য সচিব সৈয়দ মনজুরুল ইসলামের সভাপতিত্বে সভায় প্রধান অতিথি ছিলেন কৃষিমন্ত্রী বেগম মতিয়া চৌধুরী। প্রধান বক্তা ছিলেন স্বাস্থ্যমন্ত্রী মোহাম্মদ নাসিম। বিশেষ অতিথি ছিলেন খাদ্যমন্ত্রী মো. কামরুল ইসলাম, স্বাস্থ্য প্রতিমন্ত্রী জাহিদ মালেক। সম্মানিত অতিথি ছিলেন স্বাস্থ্য অধিদফতরের মহাপরিচালক অধ্যাপক ডা. দীন মোহাম্মদ নুরুল হক, বাংলাদেশ মেডিকেল অ্যাসোসিয়েশনের মহাসচিব অধ্যাপক ডা. ইকবাল আর্সলান, ইউনিসেফ-এর দেশীয় প্রতিনিধি এডুয়ার্ড বেইগবেঁদে, বিশ্বস্বাস্থ্য সংস্থার প্রতিনিধি ডা. নবরত্নাস্বামী পারানিয়েথরন, খাদ্য ও কৃষি সংস্থার দেশীয় প্রতিনিধি মাইক রবসন। সভায় স্বাগত বক্তব্য রাখেন স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়ের অতিরিক্ত সচিব রোকসানা কাদের। জাতীয় পুষ্টি নীতি-২০১৫’র ওপর মূল প্রবন্ধ উপস্থাপন করেন জাতীয় পুষ্টি সেবার লাইন ডিরেক্টর ডা. মো. কামরুল ইসলাম।অপুষ্টি দূর করতে সচেতনতা বৃদ্ধিতে গুরুত্বারোপ করে মতিয়া চৌধুরী বলেন, পুষ্টির সঙ্গে ন্যায় ও সমতা জড়িত। খাদ্যে স্বয়ংসম্পূর্ণতা না থাকলে দেশে পুষ্টি নিশ্চিত হবে তা ভাবা বাতুলতা। বাংলাদেশ এখন খাদ্যে স্বয়ংসম্পূর্ণ দেশ। শুধু তাই নয় কিছু উদ্বৃত্তও থাকে। গর্ভস্থ ভ্রূণ থেকে শুরু করে মৃত্যু পর্যন্ত একজন মানুষের পুষ্টি দরকার। দেশে মানুষের গড় আয়ু বেড়েছে। মা ও শিশুর পাশাপাশি প্রবীণদের স্বাস্থ্য সুরক্ষা ও পুষ্টির বিষয়ে আমাদের বিশেষ গুরুত্ব দিতে হবে।দেশ থেকে দূর হলেও রাজনীতিতে অপুষ্টি আছে বলে মন্তব্য করেছেন স্বাস্থ্যমন্ত্রী মোহাম্মদ নাসিম। আর যারা মুক্তিযুদ্ধে শহীদের সংখ্যা নিয়ে প্রশ্ন তোলেন এবং একাত্তর সালে শহীদ বুদ্ধিজীবীদের নিয়ে কটূক্তি করেন তারা অপুষ্টিজনিত রোগে ভুগছে। তাদের সঠিক মাত্রায় পুষ্টি দিতে পারলেই দেশ থেকে অপুষ্টি দূর হবে।স্বাস্থ্য, কৃষি, খাদ্যসহ বিভিন্ন খাতে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার উন্নয়নের চিত্র তুলে ধরে স্বাস্থ্যমন্ত্রী বলেন, গুলি খরচ না করে বিনাযুদ্ধে শুধু শান্তি স্থাপনের মাধ্যমে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা ছিটমহল উদ্ধার করেছেন। সমুদ্রসীমা জয় করেছেন। যে কোন মূল্যে আমরা পুষ্টিসমৃদ্ধ বাংলাদেশ গড়ব। সমন্বিতভাবে কাজ করলে পুষ্টির ক্ষেত্রে আমরা যেটুকু পিছিয়ে আছি তা থেকে উত্তরণ করতে পারব বলে আমি বিশ্বাস করি।কামরুল ইসলাম খান বলেন, জাতীয় পুষ্টিনীতি প্রণয়নের মধ্য দিয়ে বর্তমান সরকার তার নির্বাচনী অঙ্গীকার পূরণ করেছে। মানুষের গড় আয়ু বেড়েছে, মাতৃ ও শিশুমৃত্যু কমেছে, শিক্ষার হার বেড়েছে, খাদ্যাভা্যাসের পরিবর্তন হয়েছে। এসব কিছুই সরকারের ইতিবাচক এবং দূরদর্শী পদক্ষেপের ফসল। বাংলাদেশ খাদ্যে স্বয়ংসম্পূর্ণ হয়েছে, এখন পুষ্টিসমৃদ্ধ দেশ গড়ার লক্ষ্যে আমাদের সমন্বিতভাবে কাজ করতে হবে।