হান্টিংটনের পলিটিক্যাল অর্ডার এবং বাংলাদেশের উন্নয়ন

একটি দেশের উন্নয়নের জন্য ‘পলিটিক্যাল অর্ডার’ বা রাজনৈতিক নিয়ম-শৃঙ্খলা বজায় থাকা অপরিহার্য। এখন থেকে প্রায় পাঁচ দশক আগে ‘পলিটিক্যাল অর্ডার’ বা রাজনৈতিক নিয়ম-শৃঙ্খলা সম্পর্কে স্যামুয়েল ফিলিপস হান্টিংটন (১৯২৭-২০০৮) যে তাত্তি্বক ও অভিজ্ঞতাভিত্তিক পর্যবেক্ষণ প্রকাশ করেছিলেন তা এখনো প্রাসঙ্গিক। স্নায়ুযুদ্ধকবলিত সেই সময়ের দুই পারমাণবিক শক্তিধর রাষ্ট্র, মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র ও সোভিয়েত ইউনিয়নের নেতৃত্বাধীন দুই সামরিক জোট, যথাক্রমে নর্থ আটলান্টিক ট্রিটি অর্গানাইজেশন (ন্যাটো) এবং ওয়ারশের মধ্যে বিভাজিত বিশ্বে সে সময় বর্তমানের স্বাধীন বাংলাদেশ ছিল ধর্মীয় উপনিবেশ পাকিস্তানের পূর্ব অংশ। মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের সমর্থক পাকিস্তানের সে সময়ের সামরিক শাসক ফিল্ড মার্শাল আইয়ুব খান ছিলেন রাষ্ট্রীয় ক্ষমতায়। আর সে সময়ের পূর্ব পাকিস্তানের গভর্নর ছিলেন মোনায়েম খান। হান্টিংটন তখনো গণতন্ত্র সম্পর্কে কোনো কথা বলেননি। তবে তিনি যুক্তি দেখিয়েছিলেন যে রাজনৈতিক দলগুলো দুর্বল হলে সামরিক অভ্যুত্থানের সম্ভাবনা বেড়ে যায়। বিস্তৃতভাবে, অভ্যুত্থানের প্রতি একটি সামরিক ব্যবস্থার সংবেদনশীলতা রাজনৈতিক দলগুলোর শক্তির সঙ্গে বিপরীতভাবে সম্পর্কযুক্ত। পলিটিক্যাল অর্ডার সম্পর্কে তার গবেষণা কর্ম প্রকাশিত হওয়ার ২৩ বছর পরে স্নায়ুযুদ্ধোত্তর বিশ্বে রাজনৈতিক ব্যবস্থা হিসেবে ‘গণতন্ত্রায়ণের তৃতীয় পর্যায়’ সম্পর্কে তিনি তার অধ্যয়নলব্ধ পর্যবেক্ষণ প্রকাশ করেছিলেন। আরো পরে স্নায়ুযুদ্ধোত্তর বিশ্বে সংঘাতের ভিত্তি হিসেবে তিনি সভ্যতা বা সংস্কৃতি বা ধর্মীয় বিশ্বাসকে চিহ্নিত করেছিলেন।
১৯৬৮ সালে প্রকাশিত চড়ষরঃরপধষ ঙৎফবৎ রহ ঈযধহমরহম ঝড়পরবঃরবং শীর্ষক গ্রন্থের শুরুতেই হান্টিংটন বলছেন, ঞযব সড়ংঃ রসঢ়ড়ৎঃধহঃ ঢ়ড়ষরঃরপধষ ফরংঃরহপঃরড়হ ধসড়হম পড়ঁহঃৎরবং পড়হপবৎহং হড়ঃ ঃযবরৎ ভড়ৎস ড়ভ মড়াবৎহসবহঃ নঁঃ ঃযবরৎ ফবমৎবব ড়ভ মড়াবৎহসবহঃ. কোনো ধরনের সরকার তা নয় বরঞ্চ দেশগুলোর মধ্যে সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ রাজনৈতিক পার্থক্য হচ্ছে সরকারের মাত্রা বা ডিগ্রি। অর্থাৎ সরকারের সিদ্ধান্ত কতটুকু কার্যকর হয়। হান্টিংটনের যুক্তি হচ্ছে নিয়ম-শৃঙ্খলা বা ‘অর্ডার’ নিজেই একটি জটিল ব্যাপার। সরকারের ধরন দিয়ে নয় ‘গৃহীত নিয়ম বা সিদ্ধান্ত বা আদেশ-নির্দেশ অনুযায়ী দেশ পরিচালিত হচ্ছে কিনা’ তাই দিয়েই সরকারের কার্যকারিতা বিবেচনা করতে হয়। হান্টিংটন যতগুলো গবেষণা গ্রন্থ লিখেছেন সেগুলোর মধ্যে চড়ষরঃরপধষ ঙৎফবৎ রহ ঈযধহমরহম ঝড়পরবঃরবং গ্রন্থটিকে সর্বাধিক শক্তিশালী, মৌলিক এবং তাত্তি্বক কাজ হিসেবে গণ্য করা হয়ে থাকে। ফ্রান্সিস ফুকুইয়ামার মতে বিগত ৭৫ বছরে যেসব গবেষণা গ্রন্থ প্রকাশিত হয়েছে সেগুলোর মধ্যে হান্টিংটনের ‘পলিটিক্যাল অর্ডার’ গ্রন্থটি প্রথম পাঁচটির অন্যতম। আর এই বইটি রাষ্ট্রবিজ্ঞান বা সামাজিক বিজ্ঞানগুলোর একাডেমিক সাহিত্যের জগতে সর্বাধিক প্রভাবশালী গ্রন্থের স্থায়ী মর্যাদা লাভ করেছে।
হান্টিংটন বলছেন, ুঞযব টহরঃবফ ঝঃধঃবং, এৎবধঃ ইৎরঃধরহ, ধহফ ঃযব ঝড়ারবঃ টহরড়হ যধাব ফরভভবৎবহঃ ভড়ৎসং ড়ভ মড়াবৎহসবহঃ, নঁঃ রহ ধষষ ঃযৎবব ংুংঃবসং ঃযব মড়াবৎহসবহঃ মড়াবৎহংৃঞযবংব মড়াবৎহসবহঃং পড়সসধহফ ঃযব ষড়ুধষঃরবং ড়ভ ঃযবরৎ পরঃরুবহং ধহফ ঃযঁং যধাব ঃযব পধঢ়ধপরঃু ঃড় ঃধী ৎবংড়ঁৎপবং, ঃড় পড়হংপৎরঢ়ঃ সধহঢ়ড়বিৎ, ধহফ ঃড় রহহড়াধঃব ধহফ ঃড় বীবপঁঃব ঢ়ড়ষরপু. ওহ ধষষ ঃযবংব পযধৎধপঃবৎরংঃরপং, ঃযব ঢ়ড়ষরঃরপধষ ংুংঃবসং ড়ভ ঃযব টহরঃবফ ঝঃধঃবং, এৎবধঃ ইৎরঃধরহ ধহফ ঃযব ঝড়ারবঃ টহরড়হ ফরভভবৎ ংরমহরভরপধহঃষু ভৎড়স ঃযব মড়াবৎহসবহঃং যিরপয বীরংঃ রহ সধহু, রভ হড়ঃ সড়ংঃ, ড়ভ ঃযব সড়ফবৎহরুরহম পড়ঁহঃৎরবং ড়ভ অংরধ, অভৎরপধ, ধহফ খধঃরহ অসবৎরপধ.চ্ অর্থাৎ মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র, গ্রেট ব্রিটেন এবং সোভিয়েত ইউনিয়নে বিভিন্ন ধরনের সরকার আছে, কিন্তু এই তিন ব্যবস্থাতেই সরকার শাসন করে…। এই সরকারগুলো তাদের নাগরিকদের আনুগত্য পেয়ে থাকে এবং এভাবে ট্যাক্স আরোপ করার, মানবসম্পদ নিয়ন্ত্রণ করার এবং সরকারি নীতি উদ্ভাবন ও বাস্তবায়নের সক্ষমতা আছে। এসব বৈশিষ্ট্যের দিক দিয়ে, বেশিরভাগ না হলেও, এশিয়া, আফ্রিকা ও ল্যাটিন আমেরিকার বিদ্যমান অনেক দেশের সরকার থেকে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র, গ্রেট ব্রিটেন এবং সোভিয়েত ইউনিয়ন তাৎপর্যপূর্ণভাবে ভিন্ন। ২০০৬ সালে চড়ষরঃরপধষ ঙৎফবৎ রহ ঈযধহমরহম ঝড়পরবঃরবং-এর সর্বশেষ সংস্করণ প্রকাশিত হয়েছে। এই সংস্করণের মুখবন্ধ লিখেছেন ফ্রান্সিস ফুকুইয়ামা।
হান্টিংটনের মতে, …ঢ়ড়ষরঃরপধষ ড়ৎফবৎ ধিং ধ মড়ড়ফ ঃযরহম রহ রঃংবষভ ধহফ ড়িঁষফ হড়ঃ ধঁঃড়সধঃরপধষষু ধৎরংব ড়ঁঃ ড়ভ ঃযব সড়ফবৎহরুধঃরড়হ ঢ়ৎড়পবংং….ডরঃযড়ঁঃ ঢ়ড়ষরঃরপধষ ড়ৎফবৎ, হবরঃযবৎ বপড়হড়সরপ হড়ৎ ংড়পরধষ ফবাবষড়ঢ়সবহঃ পড়ঁষফ ঢ়ৎড়পববফ ংঁপপবংংভঁষষু. বাংলাদেশের উন্নয়নের জন্য শেখ হাসিনার নেতৃত্বের সরকারের রাজনৈতিক সিদ্ধান্ত বা ‘পলিটিক্যাল অর্ডার’ বহাল থাকার কারণেই মুক্তিযুদ্ধের মাধ্যমে অর্জিত বাংলাদেশ বিশ্বে উন্নয়নের রোল মডেলের মর্যাদা লাভ করেছে। যেটি এর আগে কখনো হয়নি। তবে ষড়যন্ত্র থেমে নেই! তাই ষড়যন্ত্রকারীদের সম্পর্কে সতর্ক থাকাটাও প্রয়োজনীয়।
যেমনটি আগেই উল্লেখ করা হয়েছে, ‘পলিটিক্যাল অর্ডার’ সম্পর্কে লেখার সময় হান্টিংটনের দৃষ্টি ছিল ‘সরকারের সিদ্ধান্ত বাস্তবায়নের দিকে’। ভিন্ন ধরনের সরকার পদ্ধতি থাকা সত্ত্বেও মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র, গ্রেট ব্রিটেন ও সোভিয়েত ইউনিয়নে এ ধরনের সমস্যা ছিল না। এসব দেশে, হান্টিংটনের ভাষায়, ‘গভর্নমেন্ট গভার্নস’ অর্থাৎ সরকার শাসন করে। কিন্তু এশিয়া, আফ্রিকা ও ল্যাটিন আমেরিকার পরিবর্তনশীল সমাজের দেশগুলোতে, দৃশ্যত ‘পলিটিক্যাল অর্ডার’ সম্পন্ন শাসন প্রায়ই অনুপস্থিত। এই সমস্যাকে তিনি ‘রাজনৈতিক নিয়ম-শৃঙ্খলা বা অর্ডার’জনিত সমস্যা হিসেবেই দেখেছেন। যাকে তিনি রাজনৈতিক ফরংড়ৎফবৎ এবং ফবপধু হিসেবে আখ্যায়িত করেছেন। স্নায়ুযুদ্ধ পরে ‘গণতন্ত্রায়ন’-এর যুগেও বাংলাদেশসহ গণতান্ত্রিক পদ্ধতিতে নির্বাচিত সরকারগুলোর রাজনৈতিক কৌতূহলের অন্যতম একটি বিষয় হচ্ছে_ ‘পলিটিক্যাল অর্ডার’ বজায় রাখা। গণতান্ত্রিক ব্যবস্থায় ‘পলিটিক্যাল অর্ডার’ বজায় রাখা দেশের সার্বিক উন্নয়নের জন্য একান্ত অপরিহার্য।
ডিকশনারিতে ফরংড়ৎফবৎ-এর বাংলা অর্থ করা হয়েছে ‘বিশৃঙ্খলা, গোলযোগ, হাঙ্গামা, হুজ্জত’ প্রভৃতি। অন্যদিকে ফবপধু শব্দটির বাংলা অর্থ ‘পতন ঘটানো বা ক্ষয়প্রাপ্ত হওয়া’। ফরংড়ৎফবৎ এবং ফবপধু-এর সম্ভাবনাকে তিরোহিত করে নেতৃত্ব দিয়ে সিঙ্গাপুরকে একটি উন্নত নগর রাষ্ট্রে পরিণত করার অনন্য দৃষ্টান্ত হচ্ছেন সিঙ্গাপুরের নেতা লি কুয়ান ইউ। ১৯৫৯ থেকে ১৯৯০ পর্যন্ত প্রধানমন্ত্রী থাকাকালে লি সিঙ্গাপুরকে উন্নতি ও সমৃদ্ধির শীর্ষে পেঁৗছে দিয়েছেন। নগর রাষ্ট্রটি এখন উপনিবেশোত্তর দেশগুলোর মধ্যে সবচেয়ে সফল। বাংলাদেশও অনেক ষড়যন্ত্র ও বাধা-বিপত্তি পেরিয়ে শেখ হাসিনার নেতৃত্বে এগিয়ে যাচ্ছে। এর মধ্যে বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষকদের দাবির প্রেক্ষিতে প্রধানমন্ত্রীর নির্দেশক্রমে সিনিয়র মন্ত্রীদের দ্বারা গৃহীত সিদ্ধান্তগুলো অমান্য করেই অষ্টম জাতীয় বেতন স্কেলের গেজেট নোটিফিকেশনে করা হয়েছিল। বাইরে আন্দোলনের নামে বোমা মেরে বা পুড়িয়ে মানুষ মারা যেমন উন্নয়নের প্রতিবন্ধক, তেমনি রাজনৈতিক নেতৃত্বের সিদ্ধান্ত অমান্য স্পষ্টতই ফরংড়ৎফবৎ এবং ফবপধু-র লক্ষণ।
বাংলাদেশের উন্নয়নের জন্য প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার সিদ্ধান্তের অপরিহার্যতা প্রমাণিত। বিশ্বব্যাংক যখন কোনো বাস্তবভিত্তিক ও যুক্তিসঙ্গত কারণ ছাড়াই পদ্মা সেতুর অর্থায়ন বন্ধ করে দিয়েছিল তখন বাংলাদেশের প্রধানমন্ত্রীর উত্তর ছিল ‘বাংলাদেশ নিজস্ব অর্থায়নেই পদ্মা সেতু নির্মাণ করবে।’ ২০১২ সালের ৮ জুলাই জাতীয় সংসদের বাজেট অধিবেশনের সমাপনী ভাষণে শেখ হাসিনা এ ঘোষণা দেন। এরপর তিনি ২০১৫ সালের ১২ ডিসেম্বর মুন্সিগঞ্জ জেলার মাওয়া গোলচত্বরে সাত নাম্বার পিলারের পাইলিং কাজ উদ্বোধনের মাধ্যমে মূল সেতুর নির্মাণ কাজের সূচনা করেন। ইতোমধ্যে পদ্মা সেতু নির্মাণের এক-চতুর্থাংশ কাজ সমাপ্ত হয়েছে। রাজনৈতিক নেতৃত্বের সিদ্ধান্ত এবং তা বাস্তবায়নের এ এক দৃশ্যমান অনন্য দৃষ্টান্ত। বলা বাহুল্য, বিশ্ব ব্যাংকের সুপারিশে ইতোপূর্বে যখন বাংলাদেশের বেশ কয়েকটি রেলওয়ে স্টেশন বন্ধ করে দেয়া হয়েছিল তখন বাংলাদেশের মুক্তিযুদ্ধের চেতনাবিরোধী শক্তি রাষ্ট্রীয় ক্ষমতায় ছিল।
সামাজিক এবং মানবোন্নয়নের অনেক সূচকেই বাংলাদেশ এখন এগিয়ে যাচ্ছে। নোবেল বিজয়ী অর্থনীতিবিদ অমর্ত্য সেনসহ বিশ্বের অনেক ব্যক্তি ও সংস্থা শেখ হাসিনার প্রশংসা করেছেন। তবে নিজস্ব অর্থায়নে পদ্মা বহুমুখী সেতু নির্মাণের সিদ্ধান্ত সমগ্র বিশ্বে অত্যন্ত জোরালো ও সুস্পষ্টভাবে বার্তা পেঁৗছিয়ে দিয়েছিল যে শেখ হাসিনার নেতৃত্বে বাংলাদেশ এগিয়ে যাচ্ছে।
বাংলাদেশের স্বাধীনতার পর থেকে ১৯৭৫ সালের ১৫ আগস্ট পর্যন্ত জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের সরকার দেশ পরিচালনার দায়িত্বে থাকা কালে দেশের উল্লেখযোগ্য অগ্রগতি সাধিত হয়েছিল। কিন্তু ১৫ আগস্টে সপরিবারে বঙ্গবন্ধুকে হত্যার পর থেকে সবকিছু পাল্টে যেতে থাকে। এরপরে ১৯৯৬ সালে বঙ্গবন্ধুকন্যা জননেত্রী শেখ হাসিনার নেতৃত্বাধীন সরকার গঠনের পর বেশকিছু উন্নয়নমূলক কাজ হয়েছিল। কিন্তু ২০০১-এর নির্বাচনে জামায়াত-বিএনপি জোট ক্ষমতায় অধিষ্ঠিত হওয়ার পর দেশ আবার অন্ধকারে নিমজ্জিত হয়। আবার ২০০৮-এর নির্বাচনের মাধ্যমে সরকার পরিচালনার দায়িত্বে লাভের পর থেকে শেখ হাসিনার নেতৃত্বে দেশে অভূতপূর্ব উন্নতি সাধিত হয়েছে। এসময় দারিদ্র্যের হার হ্রাস পেয়ে ২০১৫-তে দাঁড়িয়েছে শতকরা ২২.৪ ভাগে। সামাজিক নিরাপত্তা বলয় ১৪৫টি কার্যক্রম, এতে বরাদ্দ হয়েছে ৩৮০ কোটি মার্কিন ডলার। একটি বাড়ি একটি খামার প্রকল্পের মাধ্যমে ১ কোটি মানুষের দারিদ্র্যের হাত থেকে মুক্তি লাভ করেছে। এসময় দেশের মানুষের গড় আয়ু বেড়ে দাঁড়িয়েছে ৭০.৭ বছরে। নবজাতক শিশু মৃত্যুর হার কমে দাঁড়িয়েছে হাজারে মাত্র ৩০ জনে। ১৯৫ কোটি বই বিতরণ করা হয়েছে। ১০ বছরে শতকরা ৩৮.৭ ভাগ কর্মসংস্থান বৃদ্ধি পেয়েছে। নারী কর্মসংস্থান শতকরা ৪০ ভাগ বৃদ্ধি পেয়েছে। তথ্যপ্রযুক্তি খাতে ১৩৫.৭৬ কোটি মার্কিন ডলার রপ্তানি হয়েছে। ১৪,০৭৭ মেগাওয়াট বিদ্যুৎ উৎপাদনের সক্ষমতা অর্জন করেছে বাংলাদেশ।
দেশের শতকরা ৭৪ ভাগ মানুষ বিদ্যুৎ সুবিধা পাচ্ছেন। বর্তমানে রপ্তানি আয় ২৮.৪১ বিলিয়ন মার্কিন ডলারে উন্নীত হয়েছে। রেমিট্যান্স উন্নীত হয়েছে ১৬.৪৮৭ বিলিয়ন মার্কিন ডলারে। বৈদেশিক মুদ্রার রিজার্ভ ২৭ বিলিয়ন ডলার। বৈদেশিক সরাসরি বিনিয়োগ শতকরা ১৮.৭ ভাগ বৃদ্ধি পেয়েছে। ৩৮.৩৫ মেট্রিক টন খাদ্য উৎপাদন হয়েছে। ওয়ার্ল্ড ইকোনমিক ফোরাম, দক্ষিণ এশিয়ার হিসেব হচ্ছে লিঙ্গবৈষম্য দূরীকরণে শীর্ষে বাংলাদেশ। শান্তি রক্ষায় বাংলাদেশ ৪০টি দেশে, ৫৪টি মিশনে ৮৪২০ জন শান্তিরক্ষী প্রেরণ করেছে। দেশের মানুষের মাথাপিছু আয় ১৩১৪ মার্কিন ডলার। বিশ্বের ১০০ জন শ্রেষ্ঠ চিন্তাবিদদের তালিকায় প্রধানমন্ত্রী জননেত্রী শেখ হাসিনা ১৩তম মর্যাদাপূর্ণ স্থান লাভ করেছেন। বাংলাদেশের পর্বতারোহী ওয়াসফিয়া নাজরীন ৭টি মহাদেশের ৭টি সর্বোচ্চ চূড়ায় আরোহণ করেছেন। নিজস্ব অর্থায়নে পদ্মা সেতুর নির্মাণ কাজ দ্রুতগতিতে এগিয়ে চলছে। ইতোমধ্যেই পদ্মা সেতু নির্মাণের ২৫ ভাগ কাজ শেষ হয়েছে। বাংলাদেশের প্রধানমন্ত্রী জাতিসংঘের চ্যাম্পিয়নস অব দ্য আর্থ পুরস্কার লাভ করেছেন। গ্যালাপ সার্ভে অনুযায়ী বাংলাদেশ বিশ্বের দেশগুলোর মধ্যে ষষ্ঠ নিরাপদতম দেশ। এসব উন্নয়নমূলক কর্মকা-ের সফলতা অর্জন সম্ভব হয়েছে প্রধানমন্ত্রী জননেত্রী শেখ হাসিনার কারণে।
১৯৭১ সালে সর্বকালের সর্বশ্রেষ্ঠ বাঙালি জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের নেতৃত্বে দক্ষিণ এশিয়ায় রাজনৈতিক মানচিত্রে স্বাধীন সার্বভৌম বাংলাদেশ নামের একটি দেশের আবির্ভূত হয়েছে। স্বাধীন বাংলাদেশের শত্রুরা ষড়যন্ত্রের মাধ্যমে ১৯৭৫ সালের ১৫ আগস্ট সপরিবারে বঙ্গবন্ধুকে হত্যার মধ্য দিয়ে দেশে পাকিস্তানি স্টাইলে ‘আমলাতান্ত্রিক শাসন’ কায়েম করে। পরে ২০০৮ সালের ডিসেম্বর মাসের ২৮ তারিখে ৮১ বছর বয়সে হান্টিংটন মৃত্যুবরণ করেছেন। কিন্তু ‘পলিটিক্যাল অর্ডার’ সম্পর্কে তার যুক্তি এখনো খুবই প্রাসঙ্গিক।
স্থিতিশীলতা, শান্তি ও উন্নয়নের লক্ষ্যে ২০২১ সালে মধ্যম আয়ের দেশ এবং ২০৪১ সালে বাংলাদেশকে উন্নত দেশ হিসেবে প্রতিষ্ঠিত করার ‘ভিশন’ নিয়ে দেশরত্ন শেখ হাসিনার নেতৃত্বাধীন সরকার কাজ করে যাচ্ছে। নবম ও দশম জাতীয় সংসদ নির্বাচনে জয় লাভের প্রেক্ষিতে দেশে অভূতপূর্ব উন্নতি হয়েছে যা দেশ স্বাধীনের পরে আর হয়নি। দেশে গণতান্ত্রিক পরিবেশ এবং ‘পলিটিক্যাল অর্ডার’ বজায় থাকার কারণেই এটি সম্ভব হচ্ছে। এই সময়ে সরকারের সর্বোচ্চ সিদ্ধান্ত বাস্তবায়িত না হওয়া রাজনৈতিক ফরংড়ৎফবৎ এবং ফবপধু-এর লক্ষণ। যে কোনো মূল্যে তা প্রতিহত করা দরকার। দেশ যখন অর্থনৈতিকভাবে এগিয়ে যাচ্ছে এবং জনগণ যখন শান্তি ও অর্থনৈতিক দিক দিয়ে স্বাবলম্বী তখন, এই ধারা অব্যাহত রাখার জন্য, যে কোনো ষড়যন্ত্র সম্পর্কে সতর্ক থাকা অত্যন্ত জরুরি।

অধ্যাপক ড. অরুণ কুমার গোস্বামী:চেয়ারম্যান, রাষ্ট্রবিজ্ঞান বিভাগ ও পরিচালক, সাউথ এশিয়ান স্টাডি সার্কেল, জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয়।