সুদহার কমাচ্ছে কেন্দ্রীয় ব্যাংক

দীর্ঘ সময় পর নীতিনির্ধারণী সুদহার (পলিসি রেট) কমাচ্ছে কেন্দ্রীয় ব্যাংক। সুদহার দশমিক ৫০ শতাংশ কমিয়ে রেপোতে ছয় দশমিক ৭৫ এবং রিভার্স রেপোতে চার দশমিক ৭৫ শতাংশ নির্ধারণ করা হচ্ছে। মূল্যস্ফীতি নিয়ন্ত্রণ ও কাক্সিক্ষত প্রবৃদ্ধি অর্জনের মধ্যে ভারসাম্য রাখার প্রয়াস থেকে আজ বৃহস্পতিবার চলতি অর্থবছরের দ্বিতীয়ার্ধের (জানুয়ারি-জুন ২০১৬) নতুন মুদ্রানীতি ঘোষণা করবে বাংলাদেশ ব্যাংক। এতে বিনিয়োগকারীদের উৎসাহ দিতে ব্যাংকিং খাতে সুদহার কমানোর সিদ্ধাšে-র বি¯-ারিত দিক তুলে ধরবেন বাংলাদেশ ব্যাংকের গভর্নর ড. আতিউর রহমান। এর আগে সর্বশেষ ২০১৪ সালের ফেব্র“য়ারিতে সুদহার কমানো হয়েছিল।

মুদ্রানীতিতে

বেসরকারি খাতে উৎপাদনমুখী কর্মকাণ্ডের জন্য বিশ্বব্যাংকের ৩০ কোটি ডলারের তহবিল এবং পরিবেশবান্ধব উপায়ে রফতানি উপযোগী গার্মেন্ট ও চামড়া শিল্প খাতের উদ্যোক্তাদের ঋণ দিতে ২০ কোটি ডলারের ইডিএফ তহবিলের ঘোষণাও থাকবে।

বিনিয়োগ বাড়াতে বেশ কিছুদিন ধরে সুদহার কমানোর পরামর্শ দিয়ে আসছেন অর্থনীতিবিদ ও বিশেষজ্ঞরা। সম্প্রতি বেসরকারি গবেষণা প্রতিষ্ঠান সিপিডি নীতিনির্ধারণী সুদহার কমানোর পরামর্শ দেয়। অবশ্য বেশ কিছুদিন ধরে ব্যাংকগুলোর সুদহার কমতির দিকে রয়েছে। বর্তমানে ব্যাংকগুলোর ঋণের গড় সুদহার নেমে এসেছে ১১ দশমিক ২৭ শতাংশে। এক বছর আগে যা ছিল ১২ দশমিক ৪৯ শতাংশ। ব্যবসায়ীরা চান এ সুদহার আরও কমে এক অঙ্কে নেমে আসুক। উল্লেখ্য, বাংলাদেশ ব্যাংক থেকে ব্যাংকগুলোর স্বল্প সময়ের জন্য নেওয়া ধারকে ‘রেপো’ বলে। আর ব্যাংকগুলো থেকে কেন্দ্রীয় ব্যাংকের টাকা তুলে নেওয়ার পদ্ধতিকে বলা হয় ‘রিভার্স রেপো’। রেপোতে বর্তমানে সুদহার নির্ধারিত আছে সাত দশমিক ২৫ শতাংশ। আর রিভার্স রেপোতে পাঁচ দশমিক ২৫ শতাংশ।

মুদ্রানীতিতে আগামী ছয় মাসের ঋণ জোগান, মুদ্রা সরবরাহ, প্রবৃদ্ধি, মূল্যস্ফীতিসহ বিভিন্ন বিষয়ে ধারণা দেওয়া হয়। জানা গেছে, নতুন মুদ্রানীতিতে আগামী জুন নাগাদ বেসরকারি খাতে ঋণ বাড়ানোর লক্ষ্যমাত্রা ধরা হচ্ছে ১৪ দশমিক ৮০ শতাংশ। বেসরকারি খাতের রফতানিমুখী শিল্পের জন্য বৈদেশিক মুদ্রায় গঠিত ৫০ কোটি ডলারের দুটি তহবিল থেকে ঋণ নেওয়ার সুযোগের ঘোষণা থাকছে। গত জুলাই মাসে ঘোষিত মুদ্রানীতিতে ডিসেম্বর পর্যš- ঋণ বাড়ানোর লক্ষ্য ছিল ১৪ দশমিক ৩০ শতাংশ। জুন নাগাদ তা ১৫ শতাংশে নেওয়ার লক্ষ্য ছিল। তবে বাংলাদেশ ব্যাংকের সর্বশেষ হিসাবে নভেম্বর পর্যš- বেসরকারি খাতে ঋণ বেড়েছে ১৩ দশমিক ৭২ শতাংশ।

চলতি অর্থবছরে জিডিপি প্রবৃদ্ধি সরকার নির্ধারিত লক্ষ্যমাত্রার কাছাকাছি তথা ছয় দশমিক ৮০ থেকে ছয় দশমিক ৯০ শতাংশের মধ্যে থাকবে বলে মনে করছে কেন্দ্রীয় ব্যাংক। সরকার প্রবৃদ্ধির লক্ষ্যমাত্রা নির্ধারণ করেছে সাত শতাংশ। মূল্যস্ফীতি সরকার নির্ধারিত ৬ দশমিক ২ শতাংশের মধ্যে সীমিত রাখা হবে। যদিও আগের মুদ্রানীতিতে অর্থবছর শেষে মূল্যস্ফীতি ছয় দশমিক চার শতাংশ হবে বলে ধারণা দিয়েছিল কেন্দ্রীয় ব্যাংক। তবে গত ডিসেম্বর পর্যš- তা ছয় দশমিক ১০ শতাংশে সীমিত থাকায় অর্থবছর শেষে সরকারের লক্ষ্য অর্জন হবে বলে এবারের মুদ্রানীতিতে ধারণা দেওয়া হচ্ছে।

মুদ্রানীতিতে ব্যাপক মুদ্রা জোগানের বার্ষিক প্রবৃদ্ধি আগামী জুন নাগাদ ১৫ শতাংশ ধরা হচ্ছে। আগের মুদ্রানীতিতে গত ডিসেম্বর পর্যš- মুদ্রা সরবরাহের লক্ষ্যমাত্রা একই ছিল। আর জুনে তা ১৫ দশমিক ছয় শতাংশে উন্নীত করার লক্ষ্যমাত্রা ছিল। তবে গত নভেম্বর পর্যš- মুদ্রা সরবরাহের বার্ষিক প্রবৃদ্ধি দাঁড়িয়েছে ১৩ দশমিক ৮১ শতাংশ।