সরকারের পাশাপাশি বেসরকারি অর্থনৈতিক অঞ্চলও অগ্রাধিকার ভিত্তিতে গ্যাস-বিদ্যুৎ পাবে। সম্প্রতি প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয়ে অনুষ্ঠিত এক সভায় এ সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছে। সিদ্ধান্ত কার্যকর করতে গত সপ্তাহে সভার কার্যবিবরণী সংশ্লিষ্ট মন্ত্রণালয়গুলোর কাছে পাঠানো হয়। সিদ্ধান্ত অনুসারে অর্থনৈতিক অঞ্চলে ডেডিকেটেড লাইনের মাধ্যমে নিরবচ্ছিন্ন বিদ্যুৎ সরবরাহ করবে বিদ্যুৎ বিভাগ। এ ছাড়া অগ্রাধিকার ভিত্তিতে গ্যাস সরবরাহ নিশ্চিত করতে জ্বালানি বিভাগ উদ্যোগ নেবে।
সূত্র জানায়, বাংলাদেশ অর্থনৈতিক অঞ্চল কর্তৃপক্ষ (বেজা)-এর অধীনে বেসরকারি অর্থনৈতিক অঞ্চল এবং মংলা অর্থনৈতিক অঞ্চল প্রতিষ্ঠার লক্ষ্যে গত আগস্টে প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয়ে একটি বৈঠক হয়। ওই কার্যালয়ের মুখ্য সচিব আবুল কালাম আজাদের সভাপতিত্বে অনুষ্ঠিত বৈঠকে বেসরকারি অর্থনৈতিক অঞ্চলের প্রতিনিধিরা গ্যাস, বিদ্যুৎ অবকাঠামো সমস্যাসহ বিভিন্ন প্রতিবন্ধকতা তুলে ধরেন। পরে বেসরকারি অর্থনৈতিক অঞ্চলের উন্নয়নে গ্যাস ও বিদ্যুৎ সরবরাহসহ এ ব্যাপারে বেশ কয়েকটি বিষয়ে সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়। এ সংক্রান্ত সিদ্ধান্তগুলো হলো : বেসরকারি অর্থনৈতিক জোন চাইলে বাণিজ্যিক ভিত্তিতে বিদ্যুৎ কেন্দ্র স্থাপন করতে পারবে; ডুয়েল ফুয়েল পাওয়ার প্ল্যান্ট স্থাপন করা হলে ডিজেল আমদানির অনুমতি দেওয়া যেতে পারে; অর্থনৈতিক অঞ্চলের মূল পরিকল্পনা তৈরির সময় গ্রিড সাব স্টেশন স্থাপনের বিষয়টি বিবেচনায় রাখতে হবে; মীরসরাই অর্থনৈতিক অঞ্চলে বিএসআরএম গ্রিড থেকে প্রয়োজনীয় বিদ্যুৎ সরবরাহ করতে হবে; বিদ্যুৎ সরবরাহের স্থায়ী সমাধানের জন্য মীরসরাই অর্থনৈতিক অঞ্চলের নিজস্ব জায়গায় পিজিসিবি নিজস্ব অর্থায়নে গ্রিড সাব স্টেশন স্থাপন করবে এবং অর্থনৈতিক অঞ্চলের জন্য সম্ভাব্য স্বল্পতম সময়ের মধ্যে পরিবেশ ছাড়পত্র ইস্যু নিশ্চিত করতে হবে। এ ছাড়া একে খান অর্থনৈতিক অঞ্চল (নরসিংদী) সংলগ্ন ইপিজেডের সঙ্গে ৩১ দশমিক ৭৭ একর সরকারি খাস জমি বেজার অনুকূলে প্রতীকী মূল্যে বন্দোবস্ত দেওয়ার বিষয়টি পরীক্ষা করার সিদ্ধান্ত হয়েছে; এক্ষেত্রে বেজা একে খান অর্থনৈতিক অঞ্চল মূলধন অংশীদারি হতে পারে বলে কার্যবিবরণীতে উল্লেখ করা হয়েছে। এ ছাড়া শীতলক্ষ্যা নদীর পাশে অর্থনৈতিক জোন স্থাপনের ক্ষেত্রে ওই নদীর নাব্য বজায় রাখা এবং কাঞ্চন ব্রিজ ও কাঁচপুর ব্রিজের পাশে ড্রেজিং করার নির্দেশনা দেওয়া হয়েছে।
বাংলাদেশ ইকোনমিক জোন অথরিটি (বেজা) সূত্রে জানা গেছে, সরকার বিনিয়োগ বাড়াতে সরকারি অর্থনৈতিক অঞ্চলের পাশাপাশি দেশের বিভিন্ন এলাকায় বেসরকারি উদ্যোগে এবং মংলায় সরকারি-বেসরকারি (পিপিপি) উদ্যোগ অর্থনৈতিক অঞ্চল প্রতিষ্ঠায় উৎসাহ দিচ্ছে। আগামী ১৫ বছরে এক কোটি নতুন কর্মসংস্থানের লক্ষ্যে দেশের বিভিন্ন এলাকায় ১০০ অর্থনৈতিক অঞ্চল প্রতিষ্ঠার উদ্যোগ নিয়েছে সরকার। এরই মধ্যে দেশের বিভিন্ন স্থানে ৪৬টি অর্থনৈতিক অঞ্চল প্রতিষ্ঠার প্রকল্প অনুমোদন দেওয়া হয়েছে। ২০১৮ সালের মধ্যে ২২টির কাজ সম্পন্ন হবে। পাশাপাশি বিদেশি উদ্যোক্তাদের নিয়ে আরও চার ধরনের অর্থনৈতিক অঞ্চল স্থাপনের উদ্যোগও নেয়া হয়েছে। এ ছাড়া আগামী ২০১৬-১৭ অর্থবছরের মধ্যে আরও ১০ থেকে ১২টি অর্থনৈতিক অঞ্চল প্রতিষ্ঠার জন্য স্থানও চূড়ান্ত করা হবে। বেসরকারি উদ্যোগে দেশে আরও ৪টি অর্থনৈতিক অঞ্চল প্রতিষ্ঠার অনুমতি দেওয়া হয়েছে। নরসিংদী, মুন্সীগঞ্জের গজারিয়া, নারায়ণগঞ্জের সোনারগাঁয় দুটি অর্থনৈতিক জোনের কাজ চলছে। এসব অঞ্চলে সরকারের পক্ষ থেকে জমি, গ্যাস, বিদ্যুৎ সংযোগ, যোগাযোগ অবকাঠামোসহ প্রয়োজনীয় পদক্ষেপ নেবে সরকার।