শান্তি মিশনে বাংলাদেশি নারী পুলিশের অবস্থানও শীর্ষে

১৯৮৯ সাল। নামিবিয়ায় পরিচালিত ইউএন ট্রানজিট অ্যাসিস্ট্যান্স গ্রুপে ( ইউএনটিএজি) সদস্য প্রেরণের মাধ্যমে জাতিসংঘ শান্তিরক্ষা মিশনে বাংলাদেশ পুলিশের যাত্রা শুরু। বাংলাদেশ পুলিশের পুরুষ সদস্যরাই অংশ গ্রহণ করে। ২০০০ সালে ৫ নারী পুলিশের একটি টিম প্রথমবারের মত শান্তিমিশনে পূর্ব তিমুরে অংশ নেয়। পরবর্তীতে নানা কারণে আর নারী পুলিশের কোন টিম মিশনে অংশ নেয়নি। এরপর অপেক্ষা করতে হয় আরো দশ বছর। সব বাধা অতিক্রম করে ২০১০ সালে বাংলাদেশ নারী পুলিশের প্রথম কনটিনজেন্ট পাঠানো হয় শান্তিরক্ষা হাইতি মিশনে। এ কনটিনজেন্টে ছিল নারী পুলিশের ১৬৮ সদস্য। আর এর মধ্য দিয়েই ব্যাপক আকারে শান্তি মিশনে বাংলাদেশ নারী পুলিশের যাত্রা শুরু। ইতিপূর্বে বাংলাদেশ পুলিশের পুরুষ সদস্যদের পাশাপাশি নারী সদস্যরাও কর্মদক্ষতার মধ্য দিয়ে শান্তি মিশনে কুড়িয়েছে প্রশংসা। সংখ্যার দিক দিয়ে পৌঁছে গেছে শীর্ষ অবস্থানে। আর গতকাল বৃহস্পতিবার শান্তিরক্ষা কঙ্গো মিশনে যোগ দিতে ঢাকা ত্যাগ করেছে বাংলাদেশ নারী পুলিশের দ্বিতীয় কনটিনজেন্ট ( ১২৫ সদস্য)। এর মধ্য দিয়ে বাংলাদেশ নারী পুলিশও সংখ্যার দিক দিয়ে পৌঁছে গেল শীর্ষ অবস্থানে। কথাগুলো জানিয়েছেন শান্তিরক্ষা মিশনের অংশগ্রহণকারী প্রথম পুলিশের নারী কর্মকর্তা ডিআইজি মিলি বিশ্বাস। তিনি বর্তমানে ঢাকা মেট্রোপলিটন পুলিশের অতিরিক্ত কমিশনার।

 

মিলি বিশ্বাস শান্তিমিশনের অভিজ্ঞতার কথা উল্লেখ করে বলেন, নানা সমস্যা সংকুল পথ পাড়ি দিয়ে বাংলাদেশ পুলিশ বাহিনীতে ১৪ নারীর অংশ গ্রহণ শুরু সেই সাড়ে তিন দশক আগে। এরপর ধাপে ধাপে পুলিশ বাহিনীতে বেড়েছে নারী সদস্য। এখন এ সংখ্যা প্রায় আট হাজারে পৌঁছেছে। আর শান্তিমিশনে নারী পুলিশের অংশগ্রহণ এবং শীর্ষ অবস্থানে পৌঁছানোকে তিনি মাইলফলকই বলেন। এর ফলে পুলিশ বাহিনীতে অংশ গ্রহণে মেয়েদের উত্সাহ যোগাবে।

 

 পুলিশ সদর দফতর সূত্র জানায়, ২০১০ সালে নারী পুলিশের ( হাইতি মিশনে) কনটিনজেন্টে সদস্য সংখ্যা ছিল ১৬৮ জন। এর মধ্যে ছিল একজন পুলিশ সুপার, ৬ জন অতিরিক্ত পুলিশ সুপার, ২ জন সিনিয়র এএসপি, ৪ জন এএসপি, ২ জন মেডিক্যাল অফিসার, ৯ জন ইন্সপেক্টর, ১৬ জন সাব-ইন্সপেক্টর, ৪১ জন এএসআই, ৮৫ জন কনস্টেবল, একজন বাবুর্চি এবং একজন পরিচ্ছন্নকর্মী। বাংলাদেশ পুলিশের অপর একটি নারী এফপিইউ হাইতিতে অত্যন্ত দক্ষতা ও সুনামের সাথে দায়িত্ব পালন করছে।

 

সর্বশেষ গতকাল বৃহস্পতিবার রাতে বাংলাদেশ পুলিশের ১২৫ নারী সদস্যের একটি এফপিইউ জাতিসংঘ শান্তিরক্ষা বাহিনীর কঙ্গো মিশনে যোগ দিতে ঢাকা ত্যাগ করেছে। এই নারী সদস্যের দলটির কমান্ডারের দায়িত্বে থাকবেন অতিরিক্ত পুলিশ সুপার আতিয়া হোসনা। জাতিসংঘের ভাড়া করা বিমানযোগে তারা হযরত শাহজালাল আন্তর্জাতিক বিমান বন্দর ত্যাগ করেন। তাদেরকে বিদায় জানান বাংলাদেশ পুলিশের ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তাগণ।

 

 পুলিশ সদর দফতরের সিনিয়র তথ্য কর্মকর্তা একে এম কামরুল আহছান জানান, বর্তমানে কঙ্গো, দক্ষিণ সুদান, দারফুর, আইভরি কোস্ট, হাইতি, মালি, লাইবেরিয়া ও সোমালিয়াসহ বিভিন্ন শান্তিরক্ষা মিশনে বাংলাদেশ পুলিশের ১ হাজার তিন শত ৬৯ জন সদস্য পেশাদারিত্বের সাথে দায়িত্ব পালন করছেন।