শাহ আমানত বিমানবন্দর উন্নয়নে ১০ বছর মেয়াদি পরিকল্পনা

চট্টগ্রামের শাহ আমানত আন্তর্জাতিক বিমানবন্দর আধুনিকায়নের উদ্যোগ নিয়েছে সরকার। এ লক্ষ্যে ১০ বছর মেয়াদি বিভিন্ন পরিকল্পনা নেয়া হয়েছে; যার আওতায় ২০২৫ সালের মধ্যে বেশকিছু প্রকল্প বাস্তবায়ন করা হবে। এর মধ্যে রয়েছে বিমানবন্দরে রানওয়ে সম্প্রসারণ, প্যাসেঞ্জার টার্মিনাল ভবন ও কার্গো ভবন সম্প্রসারণ এবং বিমানবন্দরে প্যারালাল ট্যাক্সিওয়ে নির্মাণ।

বেসামরিক বিমান চলাচল কর্তৃপক্ষ (বেবিচক) সূত্রে জানা গেছে, শাহ আমানত আন্তর্জাতিক বিমানবন্দরের রানওয়ে সম্প্রসারণ প্রকল্পের সম্ভাব্য বাস্তবায়নকাল ধরা হয়েছে ২০১৯ সালের জুলাই থেকে ২০২১ সালের ডিসেম্বর পর্যন্ত। একইভাবে বিমানবন্দরের প্যাসেঞ্জার টার্মিনাল ভবন ও কার্গো ভবন সম্প্রসারণ প্রকল্পের সম্ভাব্য বাস্তবায়নকাল ধরা হয়েছে ২০২০ সালের জুলাই থেকে ২০২২ সালের ডিসেম্বর পর্যন্ত। প্রকল্পটি বাস্তবায়নের জন্য প্রয়োজনীয় কার্যক্রম হাতে নেয়া হবে ২০২০ সালে।

বিমানবন্দরের অন্যান্য উন্নয়ন পরিকল্পনার মধ্যে রয়েছে কার্গো টার্মিনাল ভবনের সামনে কার্গো অ্যাপ্রোন নির্মাণ প্রকল্প। এ প্রকল্পের সম্ভাব্য বাস্তবায়নকাল ধরা হয়েছে ২০১৫ সালের জানুয়ারি থেকে ২০১৬ সালের ডিসেম্বর পর্যন্ত। প্রকল্পের আওতায় ঠিকাদার নিয়োগের জন্য গত ২৯ নভেম্বর দরপত্রও আহ্বান করেছে বেবিচক।

এছাড়া বিমানবন্দরের রানওয়ে ওভারলে প্রকল্পের বাস্তবায়নকাল ধরা হয়েছে ২০১৬ সালের জুলাই থেকে ২০১৮ সালের জুন পর্যন্ত। এরই মধ্যে পরামর্শক প্রতিষ্ঠান কর্তৃক প্রকল্পের বিস্তারিত নকশা, ড্রয়িং ও টেন্ডার ডকুমেন্ট প্রস্তুত কার্যক্রম চূড়ান্ত পর্যায়ে রয়েছে।

এ প্রসঙ্গে বেবিচকের এটিএস অ্যান্ড অ্যারোড্রোমস বিভাগের পরিচালক মো. নুরুল ইসলাম বণিক বার্তাকে বলেন, শাহ আমানত আন্তর্জাতিক বিমানবন্দর উন্নয়নে বিভিন্ন পরিকল্পনা নেয়া হয়েছে; যা পর্যায়ক্রমে বাস্তবায়ন করা হবে। বিমানবন্দরে রাডার স্থাপন প্রকল্পটির সাইট সার্ভে কার্যক্রম চলমান রয়েছে। প্রকল্পটি ২০১৭ সালে শেষ হওয়ার কথা।

জানা গেছে, শাহ আমানত আন্তর্জাতিক বিমানবন্দরের বোর্ডিং ব্রিজ স্থাপন ও কানেক্টিং করিডোর নির্মাণেও প্রকল্প নেয়া হয়েছে। এ প্রকল্পের সম্ভাব্য বাস্তবায়নকাল ধরা হয়েছে ২০১৮ সালের জানুয়ারি থেকে ২০১৯ সালের ডিসেম্বর পর্যন্ত। বর্তমানে প্রকল্পের বিস্তারিত নকশা, ড্রয়িং ও টেন্ডার ডকুমেন্ট প্রস্তুত করছে পরামর্শক প্রতিষ্ঠান। মার্চের মধ্যে রিপোর্ট চূড়ান্ত করা হবে। একইভাবে ভবিষ্যৎ যাত্রী চাহিদা ও ফ্লাইট কার্যক্রম বৃদ্ধির বিষয়টি বিবেচনায় নিয়ে শাহ আমানত আন্তর্জাতিক বিমানবন্দরে প্যারালাল ট্যাক্সিওয়ে নির্মাণে একটি প্রকল্পের পরিকল্পনা রয়েছে বেবিচকের। এ প্রকল্প বাস্তবায়নের সম্ভাব্য সময় ধরা হয়েছে ২০২৩ সালের জুলাই থেকে ২০২৫ সালের ডিসেম্বর পর্যন্ত।

এসব প্রকল্পের পাশাপাশি জাইকার অনুদানে শাহ আমানত আন্তর্জাতিক বিমানবন্দরে রাডার স্থাপনের লক্ষে প্রকল্প গ্রহণ করা হয়েছে। এ প্রকল্পের আওতায় ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠান সুমিতোমো করপোরেশনের অনুকূলে গত ৪ নভেম্বর নোটিফিকেশন অব অ্যাকশন (এনওএ) দেয়া হয়েছে। ১২ নভেম্বর বেবিচকের সদর দফতরে বাংলাদেশ ও জাইকার যৌথ অর্থায়নে জাপানের সুমিতোমো করপোরেশনের মধ্যে প্রকল্পের চুক্তি স্বাক্ষর হয়। এ প্রকল্পের আওতায় শাহ আমানত আন্তর্জাতিক বিমানবন্দর, চট্টগ্রামে একটি অত্যাধুনিক প্রাইমারি ও সেকেন্ডারি রাডার সংস্থাপন করা হবে। প্রকল্পটি কার্যকর হলে বিমানবন্দরে নিরাপদ ফ্লাইট চলাচল অধিকতর নিশ্চিত হবে এবং নিরাপত্তা ব্যবস্থা আরো উন্নত হবে।

এ প্রসঙ্গে বেসামরিক বিমান পরিবহন ও পর্যটন মন্ত্রণালয়-সম্পর্কিত সংসদীয় কমিটির সভাপতি মুহাম্মদ ফারুক খান বলেন, শাহ আমানত আন্তর্জাতিক বিমানবন্দরের রানওয়ে সম্প্রসারণসহ সার্বিক উন্নয়ন পরিকল্পনা এবং এ কার্যক্রমের সর্বশেষ অগ্রগতি বিষয়ে কমিটি অবগত আছে। কমিটির পক্ষ থেকে যত দ্রুত সম্ভব কাজ এগিয়ে নিয়ে যাওয়ার সুপারিশ করা হয়েছে।

প্রসঙ্গত, ১৯৪০-এর দশকে ব্রিটিশ শাসনামলে চট্টগ্রাম বিমানবন্দরটি তৈরি হয়। সে সময় চট্টগ্রাম এয়ারফিল্ড হিসেবে এটি পরিচিত ছিল। পরে ১৯৭৭-৭৮ সালে ৭৬২ মিটার প্রস্থ ও ৩ হাজার ৪৮ মিটার দৈর্ঘ্যের রানওয়ে তৈরি করা হয়। ১৯৮৪-৮৫ সালে রানওয়ের আশপাশ বর্ধিত করা হয় ও কার্পেটিং করা হয়। ১৯৯১ সালের ২৯ এপ্রিল ঘূর্ণিঝড়ে বিমানবন্দর ক্ষতিগ্রস্ত হওয়ার পর পুনরায় টামির্নাল ভবন নির্মাণসহ বিভিন্ন উন্নয়নকাজ সমাপ্ত করা হয়।

শাহ আমানত বিমানবন্দরকে আন্তর্জাতিক মানে উন্নীত করার জন্য প্রথম উদ্যোগ নেয়া হয় ১৯৯৬ সালে। সে সময় কারিগরি ও আর্থিক সহায়তার জন্য জাপান সরকারের সঙ্গে সহযোগিতা চুক্তি স্বাক্ষর হয়। এ চুক্তির আওতায় ১৯৯৮ সালের ১২ মার্চ উন্নয়নকাজ শুরু হয়। ২০০০ সালের ১১ ডিসেম্বর উন্নয়নকাজ শেষ হয়। পরে ২০১৩ সালের নভেম্বরে চট্টগ্রাম শাহ আমানত বিমানবন্দরকে আন্তর্জাতিক বিমানবন্দরের স্বীকৃতি দেয় আন্তর্জাতিক বেসামরিক বিমান চলাচল সংস্থা (আইকাও)।